এই শূন্যতা অপরিমেয়

বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব, সংগীতজ্ঞ, ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি সন্‌জীদা খাতুন আর নেই। আজ মঙ্গলবার বেলা ৩টা ১০ মিনিটে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। একক পরিচয়ে সন্‌জীদা খাতুনের বহুমাত্রিক জীবনের পরিচয় দেওয়া যায় না। তিনি একাধারে ছিলেন শিক্ষক ও গবেষক, শিল্পী ও সংগীতজ্ঞ, দক্ষ সংগঠক ও সক্রিয় অধিকারকর্মী। তাঁর মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর দেশের শিল্প–সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। আত্মীয়স্বজনদের পাশাপাশি তাঁর সহযোদ্ধা, সহশিল্পী, শিক্ষার্থী ও গুণমুগ্ধরা শোক প্রকাশ করেন। আজ সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে তাঁকে নিয়ে শোক প্রকাশ করে বক্তব্য দেন নজরুলসংগীতশিল্পী ফেরদৌস আরা। তাঁর বক্তব্য তুলে ধরা হলো।

সন্‌জীদা খাতুনপ্রথম আলো
সন্‌জীদা খাতুন
প্রথম আলো

আমার বাবা শাস্ত্রীয় সংগীত করতেন। আমাদের পরিবারের সঙ্গে সন্‌জীদা আপা (খাতুন) অত্যন্ত ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। আমি ছোটবেলা থেকেই টুকটাক গান করতাম। ওনাকে দেখেই আমরা বেড়ে উঠেছি। উনি আমাদের গান শুনতে চাইতেন, উৎসাহ দিতেন। আমি ও আমার বোন জান্নাত আরা ইডেন কলেজে পড়তাম। আমরা গানের প্রায় সব শাখায়ই নাম দিতাম।

এর মধ্যে রবীন্দ্রসংগীতে প্রথমও হতাম। বেশ কয়েকবার ওনার হাত থেকে পুরস্কারটা নিয়েছি। উনি আমাদের বলতেন, ‘তোমরা কেন রবীন্দ্রসংগীত গাও না?’ আমরা বলতাম, আমাদের গলাটা রবীন্দ্রসংগীতের নয়। উনি আমাদের বলতেন, ‘এগুলো ভুল ধারণা। তোমরা গাও। তোমাদের কণ্ঠে মানুষ গান শুনবে।’

ফেরদৌস আরা
ছবি: প্রথম আলো

রমনার বটমূলে উনি সাধারণত বাইরের শিল্পীদের খুব একটা ডাকতেন না। কিন্তু আমাকে মোটামুটি নিয়মিত নিয়ে যেতেন। আমাকে দিয়ে গান গাওয়াতেন। মাঝখানে অসুস্থ হয়ে বিছানাগত ছিলেন। তখনো আমি তাঁকে গান শুনিয়েছি।

উনি ভীষণ মানবিক মানুষ ছিলেন। উনি একজন কিংবদন্তি। তিনি সেই মানুষ, যিনি একটি জাতির সংস্কৃতির মুখ্য ধারার নেতৃত্ব দিতেন। এটা শুধু শূন্যতা নয়, এটা ফাটলের মতো। এমন একজন মানুষের ‘নাই’ হয়ে যাওয়া মানে আমাদের বিরাট ক্ষতি হয়ে যাওয়া। তিনি শিল্পী হিসেবে অত্যন্ত নামকরা। আবার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শিল্পী তৈরি করে গেছেন। তাঁর চলে যাওয়ায় যে শূন্যতা তৈরি করেছে, এটা অপরিমেয়।

আরও পড়ুন