বাংলাদেশের সিনেমায় প্রথমবার গাইলেন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী
’শ্যামা কাব্য’ নামের নতুন একটি ছবি বানিয়েছেন বদরুল আনাম সৌদ। এ মাসেই ছবিটির মুক্তির তারিখ চূড়ান্ত হয়েছে। এরই মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে ছবিটির ট্রেলার প্রকাশ করা হয়েছে। এদিকে মুক্তির আগে জানা গেল চমকে যাওয়ার মতো খবর। ছবিতে ‘পাখি যাও যাও যাও’ শিরোনামের একটি গানে ইমন সাহার সুর ও সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন ভারতীয় সংগীতশিল্পী পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী।
’শ্যামা কাব্য’ সিনেমার ‘পাখি যাও যাও যাও’ শিরোনামের গানটি কলকাতার একটি স্টুডিওতে রেকর্ড করা হয়। পরিচালক বদরুল আনাম সৌদ গিয়েছিলেন কলকাতায়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত ছিলেন ইমন সাহা। পিতৃপুরুষের দেশের কোনো একটি ছবিতে প্রথমবার গাইতে পেরে আনন্দিত বরেণ্য এই সংগীতগুরু। গানটি প্রসঙ্গে গত সোমবার দুপুরে প্রথম আলো কথা বলে অজয় চক্রবর্তীর সঙ্গে। শুরুতেই প্রতিবেদকের কাছে জানতে চাইলেন, ছবিটা কি মুক্তি পেয়েছে? এখনো হয়নি বলেই জানতে চাইলাম, এই গান গাওয়ার পেছনে আপনার কোন ভাবনা কাজ করেছে? ‘ইমন সাহা আমাকে খুব শ্রদ্ধার সঙ্গে অনুরোধ করেছিল, তাই আমি না করিনি। আর গানটা আমার ভালো লেগেছে। তবে ছবিতে কী রকমভাবে গানটা ব্যবহার করেছে, তা আমার জানা হয়নি। কিন্তু গানটার সঠিক ব্যবহার করতে পারলে ভালো লাগবে।’
কথা হয় সুরকার ও সংগীত পরিচালক ইমন সাহার সঙ্গে। জানালেন, ২০২২ সালের অক্টোবর মাস। কয়েক দিন ধরে চেষ্টা করেও পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর কাছ থেকে কোনো সাড়া পাচ্ছিলেন না। এরপর গান গাওয়ানোর আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন। পরিচালক সৌদকে বলেছিলেন, তিনি আসলে গাইবেন না। শুধু শুধু সময় নষ্ট না করে গানটির জন্য অন্য কাউকে ভাবাটাই ভালো। ইমন বললেন, ‘২০২২ সালের অক্টোবরের একদিন সুবর্ণা আপা-সৌদ ভাইয়ের বাসায় আড্ডা দিচ্ছিলাম। তখনই মোবাইল স্ক্রিনে ভেসে উঠল পণ্ডিতজির নাম। তাঁর ফোন পেয়ে অবাক হই। তিনি ফোনে বলছিলেন, “গানটা আমার ভালো লেগেছে। কথাও ভালো লেগেছে।” আমি তখন পণ্ডিতজিকে বলেছি, “গানটা আপনার পছন্দ হয়েছে, এটা আমার সংগীতজীবনের সবচেয়ে বড় কমপ্লিমেন্ট।”’
‘পাখি যাও যাও যাও’ গানে অজয় চক্রবর্তীকে কেন ভাবলেন, এমন প্রশ্নে ইমন সাহা বললেন, ‘গানটি তৈরির পর সৌদ ভাই চাচ্ছিলেন, শাস্ত্রীয় ঘরানার কেউ এই গানের শিল্পী হোক। তবে গানটা কিন্তু আধুনিক। ওজনদার একটা কণ্ঠ খুঁজছিলাম, বয়সের হালকা ছাপ আছে কণ্ঠের মধ্যে। যেহেতু ব্যাকগ্রাউন্ড সং, আমরা দু-একজনকে ট্রাইও করেছি। কিন্তু আমাদের মনঃপূত হয়নি। তখন সুবর্ণা আপাই বলছিলেন, “তোমরা কেন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীকে চেষ্টা করছ না।” আমরাও ভাবলাম, তিনি হলে তো অসাধারণ হয়। কিন্তু এটা তো স্বপ্নের অতীত। কোনো দিন স্বপ্নেও ভাবিনি পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী আমার সুর ও সংগীতে গাইতে রাজি হবেন। হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতে এত বড় একজন পণ্ডিত আমার সুর ও সংগীতে গাইলেন, এটা সংগীতজীবনের অনেক বড় প্রাপ্তি।’
এদিকে গানটি গাওয়ার পরের অনুভূতি কী, জানতে চাইলে কথায় কথায় পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী বললেন, ‘আমি খুব ভালো গাইতে পারি না। তারপরও চেষ্টা করেছি গাওয়ার। জানি না কতটা গাইতে পেরেছি। সর্বশেষ গেয়েছি এবারের দুর্গাপূজায়, ‘দশম অবতার’ ছবিতে। ছবির পরিচালক সৃজিত আমার কাছে এসে বলেছিল, অনুপম রায়ও ছিল। ও তো আমার ছাত্রের মতো। ছোট ভাইয়ের মতো। সৃজিত আর অনুপম বলাতে গেয়েছিলাম। ‘শ্যামা কাব্য’ ছবির গানটি গাওয়ার সময় ছবির গল্পটা শেয়ার করেছিল পরিচালক বদরুল আনাম সৌদ, শুনে ভালোও লেগেছিল।’