আমি না বড্ড সেকেলে, ফেসবুক–ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করি না

এ সময়ের জনপ্রিয় গায়ক মাহতিম শাকিব। তাঁকে আজ নতুন এক পরিচয়ে পাওয়া যাবে। মাহতিমের নির্দেশনায় রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটশন (কেআইবি) মিলনায়তনে আজ মঞ্চস্থ হবে মিউজিক্যাল অডিও ড্রামা ‘রবিযাপন’। এ অনুষ্ঠানসহ নানা প্রসঙ্গে গায়কের সঙ্গে কথা বলেছেন নাজমুল হক। মাহতিমের বয়ানেই শোনা যাক—

মাহতিম শাকিব। শিল্পীর সৌজন্যে

প্রথমবার নির্দেশনা
এত দিন শ্রোতারা আমাকে গানে ও মিউজিক ভিডিওতে দেখেছেন। এবার নতুন কিছু নিয়ে হাজির হচ্ছি। ‘রবিযাপন’ অনেক দিনের স্বপ্ন ও পরিকল্পনা, আজ বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। আশা করি, সব সময়ের মতোই নতুন এ দায়িত্বেও সবার ভালোবাসা ও সমর্থন পাব।

রবীন্দ্রযোগ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান দিয়েই আমার শুরু। বলা যায়, তাঁর গানেই মানুষ আমাকে চিনেছেন। আমার প্রথম নির্দেশনাতেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেই বেছে নিয়েছি। ‘চোখের বালি’ (পাঠ করা হবে), মাঝখানে কিছু সংলাপ, পাশাপাশি সাতটি রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশনা। এভাবে সাজানো হয়েছে এই মিউজিক্যাল অডিও ড্রামা। আয়োজনের দ্বিতীয় পর্বে আমার একক পারফরম্যান্স রয়েছে।

অস্ট্রেলিয়া সফর
সিডনির কনসার্ট আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। দেশের বাইরে আগেও পারফর্ম করা হয়েছে, তবে এটা ছিল আমার প্রথম টিকিট শো। আমি একাই পারফরমার, তারপরও মিলনায়তন পূর্ণ ছিল। আয়োজকেরা জানিয়েছেন, কয়েক দিন আগেই টিকিট সোল্ড আউট হয়ে যায়। প্রবাসীরা আসলে আমাদের মধ্যে দেশের মাটির গন্ধ খুঁজে পান, এটা আমাকে আপ্লুত করেছে।

মাহতিম শাকিব। শিল্পীর সৌজন্যে

পরের গন্তব্য
বেশ কিছু আয়োজন নিয়ে কথা চলছে। অস্ট্রেলিয়াতেই আরেকটি শোর কথা ছিল। কিন্তু নিজের কিছু কাজ থাকায় ফিরতে হয়েছে। জাপান, কানাডা ও দুবাই থেকে অনুষ্ঠানের প্রস্তাব পেয়েছি। আশা করি, ঈদের পর সবকিছু জানাতে পারব।

প্রসঙ্গ ‘কি করে তোকে ছুঁই’
ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত গানটি নিয়ে ভালো সাড়া পাচ্ছি। গানটা ব্যাপক হিট না হলেও অনেকেই ভালো লাগার কথা জানিয়েছেন। এ গানের কথা ও সুরে দারুণ মেলোডি আছে। গানের কথার মধ্যে প্রেমিক হৃদয়ের না পাওয়ার হাহাকার উঠে এসেছে। এন আই বুলবুলের কথায় গানটির সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন রোহান রাজ।

পুরোনো দিনের গান
গান আমার পেশা হলেও আমি তো তা করি ভালো লাগার জায়গা থেকে। ছোট থেকে পুরোনো গান শুনে বড় হওয়া। হঠাৎ গুনগুন করে উঠলেও আমি সেগুলোই গাইতাম। তাই ভালো লাগার গানগুলোই বেছে নিয়েছিলাম। মা যখন রান্নাঘরে কাজ করতেন, মান্না দের গান বাজত। বাবা যখন কম্পিউটারে কাজ করতেন, নচিকেতা থেকে পুরোনো বাংলা সিনেমার গান শুনতেন। এভাবেই পুরোনো গানের প্রতি ঝোঁক। ২০০৮-০৯ সালে ওস্তাদ রফিক মাহমুদউল্লাহর কাছে গান শেখা শুরু করি। তিনি আমাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক ঘরানার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তখন আমি গজল, কাওয়ালি, লালনগীতি শোনা শুরু করি। গানগুলোর অর্থ বোঝার চেষ্টা করি। এভাবেই পুরোনো গানের সঙ্গে যোগাযোগ। ভালো লাগার জায়গাটা এখনো রয়ে গেছে। আর আমি না বড্ড সেকেলে, পুরোনো জিনিসপত্র ব্যবহার করি; ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করি না, আড্ডা দিতেও আমার ভালো লাগে না।

প্রতিক্রিয়া
যেহেতু একই ইন্ডাস্ট্রি শেয়ার করি, অনেকের সঙ্গেই দেখা হয়েছে। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে গীতিকার, সুরকার যতজনের সঙ্গেই দেখা হয়েছে, সবাই যে আমার এই ভিন্ন গায়কি পছন্দ করেছেন, তা কিন্তু নয়। কাল আমার কোনো গানও যদি অন্যভাবে কেউ গান, আমারও খারাপ লাগতে পারে। প্রশংসার থেকে বড় কথা, যে স্নেহটা পাই, তাঁরা আমাকে পরিবারের সদস্য মনে করেন, এটাই বড় পাওয়া।

মাহতিম শাকিব। শিল্পীর সৌজন্যে

সীমানা পেরিয়ে
কলকাতায় আমার যোগাযোগটা সংগীতায়োজক অরিন্দম দাদার মাধ্যমে। একদিন উনি আমাকে ফোন করে একসঙ্গে কাজের প্রস্তাব দেন। আমরা তখন দেখা করতে চাই। দাদা তখন ঢাকায় ছিলেন, উনি আমাকে সেদিন রাতেই দেখা করতে বলেন। আমরা দেখা করি। উনি তখন আমাকে নিয়ে একটি রবীন্দ্রসংগীতের পরিকল্পনার কথা জানান। এরপর ওনার সঙ্গে ‘দেখেছি রূপসাগরে’ গানটি করা হয়। পরবর্তী সময়ে আমরা জানতে পারি, এটা রবীন্দ্রসংগীত নয়। এ গানটা তখন বাদ পড়ে। এরপর অরিন্দম দাদার মাধ্যমেই প্রযোজনা সংস্থা এসভিএফের সঙ্গে যোগাযোগ। তাঁদের মাধ্যমেই ‘প্রেম টেম’ সিনেমায় ‘তাকে অল্প কাছে ডাকছি’, ‘চিনি ২’ সিনেমায় ‘তুমি জানতেই পারো না’, ‘কুলের আচার’ সিনেমার ‘ভুল করেছে ভুল’ গাইলাম।

প্লেব্যাকে কম কেন
কলকাতায় যে আমি নিয়মিত কাজের প্রস্তাব পাই না, তা কিন্তু নয়। এপার–ওপার দুই পারেই নিয়মিত কাজের প্রস্তাব আসে। যেকোনো কাজ করার ক্ষেত্রে আমি গানের টেস্টকে প্রাধান্য দিই। অনেকের হয়তো মনে হয়, এ গানটা আমার গলায় বেশ যাবে, কিন্তু আমার শুনে মনে হয় আমার সঙ্গে যাবে না। এ রকম বেশ কিছু প্রস্তাব নিয়মিত ফেরানো হয়। ইদানীং বাংলাদেশের বেশ কিছু সিনেমায় তো গান করলাম, কাজগুলো সরাসরি সংগীতায়োজক থেকেই এসেছে।

আরও পড়ুন

আমি যেসব সংগীতায়োজকের কাজ করি, তাঁদের হাতে এ ধরনের প্রজেক্ট সব সময় থাকে না। আর আমি অনেক অন্তর্মুখী, ইন্ডাস্ট্রির কারও সঙ্গেই আমার তেমন যোগাযোগ নেই, তাই কাজের সময় তাঁদের মাথাতেও আমি আসি না। নাটকের গানে আমি নিয়মিত। বলা যায়, প্রতি মাসেই বেশ কিছু কাজ হয়। বছর শেষে ৩০-৪০টি গান তো করা হয়। এগুলোতে ভালো সাড়াও পাই, দর্শক বেশ পছন্দ করেন। আর আমার কাজগুলো তো আসে সংগীতায়োজকদের মাধ্যমে, নাটকে যাঁরা নিয়মিত, তাঁরা হয়তো আমার প্রতি বিশ্বাস রাখেন।