কী হয়েছিল শাফিন আহমেদের
দুই সপ্তাহ আগে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে উড়াল দেন ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদ। কত পরিকল্পনা, দেশটির এক অঙ্গরাজ্য থেকে আরেক অঙ্গরাজ্যে গানে গানে শ্রোতা মাতাবেন। শুরুটা হয়েছিলও তেমন সুন্দর। দ্বিতীয় কনসার্টের আগে যেন খেলেন ধাক্কা। যে ধাক্কা তাঁর জীবনের সব হিসেব–নিকেশ নিমেষেই পাল্টে দেয়। সামলে উঠতে পারেননি আর। বরণ করে নিতে হয় মৃত্যুকে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া থেকে উড়ে আসা শাফিনের হঠাৎ মৃত্যুর খবর হতবাক করে দেয়। এই মৃত্যুসংবাদ যেন বিনোদন অঙ্গনের সবার পাশাপাশি গানপ্রেমীদের কাছেও একেবারেই অকল্পনীয়। তাই তো কেউ প্রথম শোনায় কেউ বিশ্বাসও করতে পারছিলেন না। কিন্তু সেটাই সত্যি, সবাইকে অবাক করে দিয়ে চিরদিনের জন্য পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হয়েছে ব্যান্ড সংগীতের উজ্জ্বল এই তারকাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন শাফিন আহমেদ। একটি কনসার্টে গানও পরিবেশন করেন। ২০ জুলাই ভার্জিনিয়াতে তাঁর আরেকটি স্টেজ শোতে পারফর্ম করার কথা ছিল। সেদিন অনুষ্ঠানের আগে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। কী হয়েছিল শাফিন আহমেদের, জানতে যোগাযোগ করা হয় তাঁরই বড় ভাই হামিন আহমেদের সঙ্গে। তিনি জানালেন, ম্যাসিভ (গুরুতর) হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল শাফিন আহমেদের।
হামিন আহমেদ প্রথম আলোকে জানালেন, ২০ জুলাই ভার্জিনিয়ায় গান গাওয়ার কথা ছিল শাফিন আহমেদের। সব ঠিকঠাক চলছিল। হোটেলে আয়োজকেরাসহ বসা ছিলেন। এর মধ্যে শাফিন জানান, তাঁর শরীরটা খারাপ লাগছে। তাই স্টেজ শো বাতিল করতে হয়।
হামিন বললেন, ‘অনুষ্ঠানের দিনই শাফিনের খারাপ লাগা শুরু করে। একটা পর্যায়ে খারাপ লাগা বাড়তেই থাকে। মাত্রাতিরিক্ত অস্বস্তিবোধও হচ্ছিল। খারাপ লাগাটা এমন পর্যায়ে পৌঁছায়, নিজের নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে শাফিন সবার সামনে পড়ে যায়। হোটেল রুমে থাকা আয়োজকেরা ঘাবড়ে যান। দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়, কেন এমনটা হয়েছে, তা জানার চেষ্টাও করা হয়।’
কথায় কথায় হামিন আহমেদ বললেন, ‘সন্ধ্যায় যখন অসুস্থ হয়, তখন তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার পর কিছুটা ভালো অনুভব করে। তখন যাঁরা আয়োজক ছিলেন, তাঁরা হাসপাতাল থেকে চলে আসেন। রাত সাড়ে তিনটার দিকে আবার অ্যাটাক হয়, সেটা ম্যাসিভ ছিল। ৫-৭ মিনিট একেবারে অচেতন ছিল। এরপর সিপিআর করে তার জ্ঞান ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হয়। সিপিআর শেষে তাকে ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়।’ এই কদিন ভেন্টিলেশন শেষে আজ বাংলাদেশ সময় সকালে তার মৃত্যুর খবরটা জানানো হয়।
হামিন আহমেদ জানান, ১৫ বছর আগে থেকে শাফিন আহমেদ হার্টের সমস্যায় ভুগছেন। প্রথমবার তিনি ভারতে হার্ট অ্যাটাক করেন। হামিন জানান, ভারতের ওই হার্ট অ্যাটাকও মেজর ছিল। এরপর সেটা নিয়ন্ত্রণে আসে। কয়েক বছর আগে কক্সবাজারে আরেকবার হার্ট অ্যাটাক হয় শাফিনের।
জানা গেছে, এ বছরের শুরুর দিকে ঢাকার কেরানীগঞ্জেও শাফিন আহমেদের একবার হার্ট অ্যাটাক হয়। এরপর চিকিৎসকেরা তাঁকে মানসিক চাপ নেওয়া, এমনকি বিমান ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলেন।
বাংলাদেশি ব্যান্ড সংগীতে অন্যতম একটি নাম মাইলস। এই দলে শাফিন আহমেদও যেন সমার্থক একটি শব্দ। সেই শাফিন আহমেদ বেশ কয়েক বছর মাইলসের সঙ্গে ছিলেন না। নিজের মতো করে নতুন একটি ব্যান্ড দল গঠন করেন শাফিন আহমেদ।