গানে-কবিতায়-নৃত্যে বিজয় উৎসব
সারা দিন ছিল লাল-সবুজের উপস্থিতি। সকাল থেকে বিরামহীন দেশাত্মবোধক গানের সুর শোনা গেছে। সবুজ জমিনে লাল পাড়ের শাড়ি জড়ানো নারী আর সবুজ পাঞ্জাবি গায়ে পুরুষেরা রাজপথে ঘুরে বেড়িয়েছেন। ট্রাক কিংবা ভ্যানগাড়িতে চড়ে গলা ছেড়ে গেয়েছেন তরুণেরা। অনেকে ভিড় করেছেন নগরের সংস্কৃতিকেন্দ্রগুলোতে। সেখানে মুখর ছিলেন দেশের গান, কবিতা, আলোচনা, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও দেশের গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনায়। গান, কবিতা, নাটক আর কথামালায় তাঁরা স্মরণ করেন জাতির আলোকবর্তিকাদের।
বিজয় দিবসের আনন্দ পৌঁছে গিয়েছিল ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনে। ধানমন্ডিতে অবস্থিত ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনের সামনে ঘড়ি ধরে বিকেল ৪টা ৩১ মিনিটে শুরু হয় অনুষ্ঠান। জাতীয় সংগীতের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি সারওয়ার আলীসহ সংগঠকেরা। এই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, ১৯৭১ সালের যে সময় বীর বাঙালির কাছে মাথা নোয়ায় পাকিস্তানি বাহিনী।
তিন পর্বের আয়োজনে ছায়ানটের সঙ্গী হয়ে বাচিকশিল্প চর্চার প্রতিষ্ঠান কণ্ঠশীলন পরিবেশন করে কাব্যালেখ্য ‘আমাদের রক্ত মিছিল’ এবং সংস্কৃতি-সমন্বিত সাধারণ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান নালন্দা উচ্চবিদ্যালয়ের শিশুরা পরিবেশন করেছে গীতরঙ্গ ‘স্বাধীনতার অভিযাত্রা’। ছায়ানটের পরিবেশনা ছিল গীতিনৃত্যালেখ্য ‘অপরাজেয় বাঙালি’।
গোটা আয়োজনে ফিরে ফিরে উচ্চারিত হয়েছে বিজয়ের পথে বাঙালির নির্ভীক অভিযাত্রার কাহন, প্রাণহারী শত প্রতিকূলতার মধ্যেও বাঙালির আপন সংস্কৃতিতে থিতু হওয়ার, মাথা উঁচু করে বাঁচার কথামালা। ছায়ানটের দেড় শতাধিক শিল্পীর অংশগ্রহণে পরিবেশিত হয় গীতিনৃত্যালেখ্য। অপরাজেয় বাঙালিতে বঙ্গভঙ্গ রদের আন্দোলন থেকে শুরু করে বাঙালি জাতির সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্র বিজয়ের বর্ণনা উঠে আসে এতে।
অনুষ্ঠানে কণ্ঠশীলন পরিবেশিত কাব্যালেখ্যে জীবনানন্দ দাশ, সৈয়দ শামসুল হক, ফজল শাহাবুদ্দীন, জহির রায়হান, আল মাহমুদ, আসাদ চৌধুরী প্রমুখের কবিতা থেকে পাঠ করা হয়। জর্জ হ্যারিসনের গান ছাড়াও আরও ছিল এবং সংগৃহীত অংশ থেকে পুঁথিপাঠ। অংশ নিয়েছেন কণ্ঠশীলনের ৯ আবৃত্তিশিল্পী। নালন্দা উচ্চবিদ্যালয়ের শিশুদের পরিবেশনা ছিল গীতরঙ্গ স্বাধীনতার অভিযাত্রা। নালন্দার শিক্ষার্থীদের ইতিহাসচর্চার অংশ হিসেবে গীতরঙ্গটি তৈরি হয়েছে। এতে অংশ নিয়েছে নালন্দা উচ্চবিদ্যালয়ের ১০২ শিক্ষার্থী।
ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক শিল্পী লাইসা আহমদ লিসা প্রথম আলোকে বলেন, ছায়ানটের এ অনুষ্ঠান ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবরে আয়োজন করার জন্য দুই মাস আগে সিটি করপোরেশনের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। গতকাল (রোববার) রাতে ডিএমপির অনুমতি পাওয়া গেছে। অর্থাৎ এটাও সম্পূর্ণ অনুমতি নয়। এত বড় আয়োজন এক রাতের মধ্যে সেখানে করা কি সম্ভব! ফলে ছায়ানট বিকল্প পরিকল্পনা হিসেবে যেখানে অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়েছিল, সেখানে করা হয়েছে।
বিজয় উৎসব ও সম্মাননা
এবারও বিজয় দিবসে চ্যানেল আই চত্বর সেজে ওঠে লাল-সবুজ রঙে। দিনটিতে ‘স্মরণে বরণে বিজয় দিবস’ অনুষ্ঠানের শুরু হয় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে। গানে গানে বিজয় উৎসবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জানানো হয় সম্মাননাও।
গান পরিবেশন করেন অণিমা রায়, লীনু বিল্লাহসহ তরুণ প্রজন্মের শিল্পী তিন্নী, বাপ্পী প্রমুখ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ১০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা জানানো হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার, চ্যানেল আইয়ের পরিচালক জহিরউদ্দিন মাহমুদ প্রমুখ। অনুষ্ঠান শেষ হয় ‘ধন ধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’ গানের মাধ্যমে।