২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

কোন প্রতিহিংসায় পুড়ল রাহুলের বাড়িটি

রাহুল ও তাঁর সহধর্মিণী ঊর্মিলা শুক্লার সঙ্গে গীতিকার কবির বকুল। ছবিটি তুলে লেখকের মেয়ে প্রতীক্ষা

জলের গান আমার প্রিয় একটি গানের দল। তাঁদের অনেকগুলো গানই আমার ভীষণ প্রিয়। ‘এমন যদি হতো আমি পাখির মতো’ কিংবা ‘আমি একটা পাতার ছবি আঁকি’ বা ‘বকুল ফুল বকুল ফুল’সহ অনেক গান। এ দলের প্রতিষ্ঠাতা রাহুল আনন্দ আমার ছোট ভাই আকাশের বন্ধু। সেই হিসাবে রাহুল আমার স্নেহভাজন প্রিয় ভাই। তাঁর সঙ্গে আমার সখ্য দীর্ঘদিনের।
আমাদের প্রথম আলোর প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানে জলের গান থাকবেই। যখনই ফোন করে রাহুলকে বলেছি, গান গাইতে হবে।

তখনই সে বলত, ‘বড় ভাই, আপনি শুধু তারিখ আর সময়টা বলেন, আমরা ঠিক সময়েই হাজির হয়ে যাব।’ তা–ই হতো। নির্দিষ্ট সময়ে জলের গান হাজির। অনেক সময় রাহুলকে ফোনে না পেলে তাঁর সহধর্মিণী ঊর্মিলা শুক্লাকে ফোন করতাম। তিনি রাহুলকে মিলিয়ে দিতেন। এই পরিবারের সঙ্গে আমার একটা আত্মিক সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল। দুজনই ভীষণ বিনয়ী, মিষ্টভাষী, চমৎকার মানুষ। রাহুল মেধাবী মিউজিশিয়ান। অসংখ্য বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারেন। একজন চমৎকার বাঁশিশিল্পীও। আর শুক্লা দেশীয় পোশাকের প্রতিষ্ঠান ‘খুঁত’–এর কর্ণধার।

ভেতরের একটি কক্ষের দেয়ালে তোতার আঁকা বেশ কটি ছবি
কবির বকুল

একবারই আমি তাঁর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলাম। ২০১৯ সালের ২৯ আগস্ট সে রাতে আমার ছোট মেয়ে প্রতীক্ষা ছিল আমার সঙ্গে। সেদিন রাহুলের সহধর্মিণী ঊর্মিলা শুক্লা ও একমাত্র পুত্রসন্তান তোতাও বাড়িতে ছিল। বেশ কিছু সময় কাটালাম বাড়িতে। রাহুল তাঁর প্রিয় স্টুডিও ঘুরিয়ে দেখাল। দেয়ালে, মেঝেতে সারিবদ্ধভাবে সাজানো অসংখ্য বাদ্যযন্ত্র, এর অধিকাংশই রাহুলের নিজ হাতে বানানো। ভেতরের একটি কক্ষের দেয়ালে তোতার আঁকা বেশ কটি ছবি।

সেই বাড়ির সামনে রাহুল-শুক্লা দম্পতি
ফাইল ছবি

কোনো ছবিতে তাঁর বাবা, কোনোটিতে মা–বাবা দুজনই। ছয়–সাত বছর বয়সে তোতার হাতে আঁকা মা–বাবার ছবিগুলো নিখুঁতই বটে।  
জলের গান তাদের ফেসবুক পেজে পোস্টে লিখেছে, ‘জলের গানের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের এই বাড়িটি শুধু রাহুল আনন্দের বসতবাড়ি ছিল না, ছিল পুরো দলটির স্বপ্নধাম, আনন্দপুর। যেখানে তৈরি হয়েছে কত গান, কত সুর আর দাদার ভাবনাপ্রসূত শত শত বাদ্যযন্ত্র।’
এই বাড়ি এখন পুড়ে ছাই। ৫ আগস্ট সোমবার বিকেলে দুর্বৃত্তরা আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে বাড়িটি। লুট করে নিয়ে গেছে রাহুলের নিজ হাতে বানানো অসংখ্য বাদ্যযন্ত্র।
কেন? কেন পুড়িয়ে দেওয়া হলো রাহুলের বাড়িটি? কেন লুট করে নিয়ে গেল তাঁর বাদ্যযন্ত্র?
কোন আক্রোশে? কোন প্রতিহিংসায়? কেউ কি দিতে পারেন এর সদুত্তর? আমি এই দুর্বৃত্তায়নের, এই প্রতিহিংসার তীব্র নিন্দা জানাই।