‘জুলাই বিপ্লবে আমার পুরোনো একটা গানকে সবাই আপন করে নিয়েছে’

মঞ্চের আবহে কেটেছে মল্লিক ঐশ্বর্যের শৈশব-কৈশোর। তবে এখন তিনি পুরোদস্তুর গানের মানুষ। পড়ালেখাও সংগীত নিয়েই করছেন। ‘জলের গান’ ব্যান্ডের তিনি ভোকাল ও হারমনিবাদক। গাওয়ার পাশাপাশি লেখেন, সুর করেন। সম্প্রতি যাত্রা শুরু করেছে তাঁর স্টুডিও ‘এবং গোলাপ’। এর বাইরে ‘জাদুর কাঠি’ নামে ছোটদের গানের স্কুলও তাঁর রয়েছে। তরুণ এই শিল্পীর সংগীত সফর ও দিনযাপনের গল্প শুনেছেন নাজমুল হক

মল্লিক ঐশ্বর্য। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

বাবা গান, নাটক লিখতেন; বাজাতেন সেতার। নাটক লিখে ছেলেকে দিয়ে অভিনয় করাতেন বাবা। পরে স্কুল-কলেজেও থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হন মল্লিক। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে যোগ দেন ‘থিয়েটার ৫২’-তে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে আর অভিনয়ে থাকা হয়নি। ২০১৭ সালে যুক্ত হন ‘জলের গান’–এ। রাহুল আনন্দের সরাসরি তত্ত্বাবধানে শুরু হয় তাঁর সংগীতের যাত্রা। পুরোদস্তুর গানের মানুষ হয়ে যান মল্লিক।

মল্লিকের গান
মল্লিক ঐশ্বর্যের কণ্ঠে জনপ্রিয়তা পেয়েছে ‘জলের গান’–এর বেশ কিছু গান। ‘পিঠাপুলির গান’, ‘ঢাকানামা’, ‘ফুলকুমারীর বিয়ে’ অন্যতম। এর বাইরে তাঁর গাওয়া নিজের লেখা ও সুর করা গান ‘ভাঙা ঘর’, ‘ভালোবেসে আঁকো’, ‘উল্টে দেখুন, পাল্টে গেছে’, ‘আমরা সবাই ভালোর দলে’ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। জুলাই আন্দোলনে নতুন করে সামনে আসা তাঁর ‘এক জাদুর দেশে জাদু দেখায় রাজা’ শুনে শ্রোতাদের অনেকে বলছেন, এ সময়ের অন্যতম সেরা রাজনৈতিক গান।

গান প্রসঙ্গে মল্লিকের ভাষ্য, ‘আমার কণ্ঠে জলের গানের যে গানগুলো মানুষ ভালোবেসেছে, এ জন্য নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি। মানুষের ভালোবাসা পাওয়া সব শিল্পীর জন্যই আনন্দের। এর সবটাই আমার গুরু, শিক্ষক রাহুল আনন্দের দোয়ায় ও আশীর্বাদে। আমার একান্ত নিজের যে গানগুলো এসেছে, সেসব নিয়েও শ্রোতাদের ভালোবাসা পেয়েছি। জুলাই বিপ্লবে আমার পুরোনো একটা গানকে সবাই আপন করে নিয়েছে, তা–ও কম আনন্দের না। একজন শিল্পীর জন্য এর চেয়ে ভালো লাগার আর কী হতে পারে।’

মল্লিক ঐশ্বর্য। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

জাদুর কাঠি
মল্লিকের গানের স্কুল ‘জাদুর কাঠি’। গত বছরের অক্টোবরে আট শিশুকে নিয়ে স্কুলের যাত্রা শুরু। পাঁচ মাসে এখন শিক্ষার্থীসংখ্যা ৩০। গানের পাশাপাশি আঁকা আর খেলায় সেখানে সময় কাটে শিশুদের। কনসার্ট আর নিজের কিছু কাজ ছাড়া মল্লিকের দিনের বেশির ভাগ সময়ই কাটে শিশুদের নিয়ে। ‘জাদুর কাঠি’ নিয়ে মল্লিক বলেন, ‘শিশুদের নিয়ে যেন কাজ করি, এ কথা রাহুল আনন্দ দাদা সব সময় বলতেন। তাঁর প্রেরণা ও উৎসাহেই স্কুলটি শুরু করি। ওদের নিয়েই আমার এই জগৎ। আমার স্টুডিও “এবং গোলাপ”-এর পাশের রুমেই স্কুল। আমার সারাবেলা এখানেই কেটে যায়।’

মল্লিক জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে শিশুদের জন্য চারটি গান তৈরি হয়েছে। লাল সবুজের গান নামে শিশুদের একটি নাটক পরিবেশিত হয়েছে চারুকলায়। এক বাগানের গান নামে আরেকটি নাটকের কাজ চলছে। এই নাটকগুলোও মল্লিক ঐশ্বর্যেরই লেখা।

শিশুদের জন্য তৈরি করা গানগুলোর কাজ চলছে। কাজ চলছে ছোটদের ছড়া থেকে গান বানানোর। তিনি আরও বলেন, ‘স্কুলটাই এখন আমার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন।’

আরও পড়ুন

‘এবং গোলাপ’
শিশুদের গানের পাশাপাশি নিজের গানগুলো নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন মল্লিক। সামনে প্রকাশ পাবে আরও বেশ কিছু গান। গানের রেকর্ডিং, এডিটিং, মাস্টারিং করার জন্য প্রয়োজন স্টুডিও। গত মাস থেকে যাত্রা শুরু করেছে তাঁর স্টুডিও ‘এবং গোলাপ’। বাবার নাম থেকেই স্টুডিওর নামকরণ করেছেন তিনি।

মল্লিকের কথায়, ‘আমার ইচ্ছা ছিল কখনো যদি স্টুডিও করি, তবে তা বাবার নামে রাখব। বাবার নাম ছিল কবির মল্লিক। এন্ড্রোস ছিল তার ডাকনাম। তবে এ–ও ইচ্ছা ছিল, একটা বাংলা নাম রাখার। তাই বাবার ডাকনাম এন্ড্রোসকে ভেঙে “অ্যান্ড রোজ” অর্থাৎ বাংলায় রূপান্তর করে “এবং গোলাপ” রেখেছি। বেশ কিছু বিজ্ঞাপনের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক করেছি।’ পশ্চিমবঙ্গের নির্মাতা অনির্বাণ পালের বানানো অ্যানিমেশন সিনেমা বাসার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকটাও মল্লিক ঐশ্বর্যেরই করা।