সব দিক থেকেই সন্‌জীদা আপা অনেকের কাছে দৃষ্টান্ত

সন্‌জীদা খাতুন ও অদিতি মহসিন
বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব, সংগীতজ্ঞ, ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি সন্‌জীদা খাতুন আর নেই। আজ মঙ্গলবার বেলা ৩টা ১০ মিনিটে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। একক পরিচয়ে সন্‌জীদা খাতুনের বহুমাত্রিক জীবনের পরিচয় দেওয়া যায় না। তিনি একাধারে ছিলেন শিক্ষক ও গবেষক, শিল্পী ও সংগীতজ্ঞ, দক্ষ সংগঠক ও সক্রিয় অধিকারকর্মী। তাঁর মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর দেশের শিল্প–সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। আত্মীয়স্বজনদের পাশাপাশি তাঁর সহযোদ্ধা, সহশিল্পী, শিক্ষার্থী ও গুণমুগ্ধরা শোক প্রকাশ করেন।মঙ্গলবার বিকেলে যোগাযোগ করা হলে তাঁকে নিয়ে শোক প্রকাশ করে বক্তব্য দেন গুণী রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী অদিতি মহসিন। তাঁর বক্তব্য তুলে ধরা হলো।

‘সংগঠক, শিল্পী, মানুষ, শিক্ষক—সব দিক থেকেই সন্‌জীদা আপা অনেকের কাছে দৃষ্টান্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ছিলেন, গান ভালোবাসতেন। কাজী মোতাহার হোসেনের মেয়ে, তাঁদের পরিবারের সবাই খুবই সংস্কৃতিমনা। ছায়ানট যখন তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন, এত বছর আগে—সেটাকেই দীর্ঘ সময়ে অনেক বড় একটা জায়গায় নিয়ে গেছেন। আবার যেমন পয়লা বৈশাখ রমনার বটমূলে করা—আমি বলছি না যে এটা ওনার একক উদ্যোগে হয়েছে; কিন্তু ওনারা এবং উনি কিন্তু মূল। এত বছরে তো অনেকে মারাও গেছেন, শুধু তিনি লেগে ছিলেন। এত দূর পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেছেন, এটা সত্যিই একটা দৃষ্টান্ত।

সন্‌জীদা খাতুন

সন্‌জীদা আপার সঙ্গে বেশ দীর্ঘ সময় ধরে আমার কাজ করার সুযোগ ও অভিজ্ঞতা আছে। আমি যে বছর শান্তিনিকেতন থেকে পড়াশোনা শেষ করে আসি, সে বছরই ছায়ানটে শিক্ষকতা শুরু করি। সময়টা ২০০০ সাল। টানা ১০ বছর সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করেছি। এ কারণে সন্‌জীদা আপার সঙ্গে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজ করার সুযোগ হয়েছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে গেছি। প্রশিক্ষণ দিতেও নিয়ে গিয়েছিলেন, যদিও ওনাদেরই যাওয়ার কথা, তারপরও আমাকে নিয়ে গেছেন। চাঁদপুর, ফরিদপুর, চট্টগ্রামে গেছি রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের অনুষ্ঠানে। ছায়ানট সূত্রে আপার সঙ্গে গভীর সম্পর্ক ছিল। যেহেতু আমি ছায়ানটে শিক্ষকতা করছি; অনুষ্ঠান, গানসহ বিভিন্ন বিষয়ে সন্‌জীদা আপার সঙ্গে কথাবার্তা হতো। এই পয়লা বৈশাখে আমাকে দিয়ে দুটো গান করাতে বলেছেন। ছায়ানটের অনুষ্ঠানে তো গান গেয়েছি। এখনো গাই। মাঝেমধ্যে যখনই ওরা ডাকে, গানটা করে দিয়ে আসি। ব্যক্তিগতভাবেও তাঁর বাসায় যাওয়া–আসা হতো।

অদিতি মহসিন
ছবি : প্রথম আলো

ইদানীং অসুস্থ থাকার কারণে যাওয়া হয়নি। তারপরও নানাভাবে যুক্ত ছিলাম। বাংলা একাডেমি বড় আয়োজনে কয়েক বছর আগে তাঁর জন্মদিন উদ্‌যাপন করেছিল। তখন তিনি আমাকে গাইতে বলেছিলেন। আমাদের সবাইকে চলে যেতে হবে; কিন্তু সন্‌জীদা আপার চলে যাওয়াটা আমাদের সাংস্কৃতিক ভুবনে একটা বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি করবে।’