কয়েক মাস পর কাজে ফিরলেন...
প্রীতম হাসান: আরও আগেই জাহিদ প্রীতমের সঙ্গে কাজের কথা ছিল। তবে হয়নি। এবার দারুণ গল্পের একটা (ঘুমপরী) কাজ করছি। এ ধরনের গল্পে আগে আমি কাজ করিনি। গল্পটা নিয়ে আমি ভীষণ আগ্রহী ও আশাবাদী। এর বাইরে আরও চারটার মতো কাজ (অভিনয়) করছি। দুটি সিনেমার গান করেছি, ডিসেম্বরেই রিলিজ হবে।
জেন-জি শ্রোতারা আপনার গান পছন্দ করেন, অথচ আপনি মিলেনিয়াল। জেন-জিদের বোঝাপড়াটা ধরেন কীভাবে?
প্রীতম হাসান: আমি যে ধরনের গান করি, তাতে খুব একটা প্যাঁচ নেই। আমার গান সোজাসাপটা, সহজভাবে সোজা কথায় গান করি। আবার প্রয়োজন অনুসারে গানকে কঠিনও করি। জেন-জিদের যতটুকু ভালোবাসা পেয়ে থাকি, সেটা অনেক বড় পাওয়া। এতটা ভালোবাসা পাব, সেটা আমি কখনো প্রত্যাশা করিনি। তবে আমি ভালোবাসার জন্যই কাজ করি, ভালোবাসা যত পাই, তত কাজ করতে ইচ্ছা তৈরি হয়।
সংগীতশিল্পী প্রীতমের মধ্যে কার ছায়া আছে? কারা আপনাকে বেশি প্রভাবিত করে?
প্রীতম হাসান: ছোটকাল থেকে লিনকিন পার্ক শুনি; ফুয়াদ (আল মুক্তাদির) ভাই ও হাবিব (ওয়াহিদ) ভাইয়ের গান আমাকে খুব অনুপ্রাণিত করে। তাহসান (রহমান খান) ভাই, (শায়ান চৌধুরী) অর্ণব ভাইয়ের গান অনুপ্রাণিত করে। এ ছাড়া অদিত রহমান আমাকে অনেক উৎসাহ দিয়েছে এবং এখনো দিয়ে যাচ্ছে।
হাবিব ওয়াহিদের হাত ধরে বাংলা পপ গানের একটা বাঁকবদল ঘটেছে। বলা হয়, হাবিব-পরবর্তী সময়ে আপনি ভিন্নমাত্রা যোগ করেছেন।
প্রীতম হাসান: আমাদের তো নতুন একটা কিছুই করতে হবে। নতুন প্রডিউসারদের নতুন সাউন্ড নিয়ে আসতে হবে। আমরা কেন কাজ করি? কারণ, পরে আমাদের থেকে আরও বেটার সাউন্ড আসে। হাবিব ভাইয়ের সময়ে মিউজিক ডিজিটাল ফর্মে যাত্রা শুরু করে। মানুষের গান শোনার অভিজ্ঞতায় পরিবর্তন ঘটে। আমার সময়ে গান ইউটিউবে চলে আসে। এরপর মিউজিকটা একটা জায়গায় ঠেকে গেছে। আমাকে তো অবশ্যই নতুন কিছু দিতে হবে। বাংলা গানকে কীভাবে বিশ্বদরবারে নেওয়ার চেষ্টা করা যায়, ওভাবেই চিন্তা করি। ‘লোকাল বাস’ থেকে ‘দেওরা’—যত গান করেছি—সবকিছুতে সেই প্রয়াসটা আছে। বাংলা গানকে আধুনিক করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টাটা এখনো করেছি। জানি না কতটুকু পেরেছি।
হাবিব ওয়াহিদ আপনাকে কতটা প্রভাবিত করেছেন?
প্রীতম হাসান: আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ইন্সপেরিয়েশন হাবিব ভাই। সেই সময়ে বনশ্রীতে প্রায়ই সাইকেল চালিয়ে গ্রিন রোডের স্টুডিওতে যেতাম। উনি আমাকে একটা কথা বলেছেন, বাসা থেকে বের হতে হবে, ঝুঁকি নিতে হবে। এই স্পিরিটটা আমি হাবিব ভাইয়ের কাছে পেয়েছি। উনার সঙ্গে আমার সম্পর্কটা গুরু—শিষ্যের। হাবিব ভাইয়ের সঙ্গে আড্ডা দেওয়াটাও আনন্দের। আমি উনার গান শুনে ফ্যান ছিলাম, সরাসরি দেখা হওয়ার পর আবার বড় ফ্যান হয়েছিলাম। আমি উনার কাছে কৃতজ্ঞ।
‘লোকাল বাস’, ‘লাগে উরাধুরা’, ‘দেওরা’, ‘মা লো মা’—একের পর এক গান হিট। একধরনের প্রত্যাশার চাপ তৈরি করে। চাপটাকে কীভাবে ডিল করেন?
প্রীতম হাসান: প্রতিটি গানই বাণিজ্যিকভাবে হিট হবে, তেমন কোনো কথা নেই। আমার ‘রাজকুমার’, ‘জাদুকর’ গান ও ‘স্বর্গহারা’ অ্যালবামের কোনো গানই সাধারণ শ্রোতাদের কাছে সাড়া ফেলেনি। গানগুলো আমার মতে আসলে হিট করেনি। আমার যেসব গান খুব হিট করেছে, সেগুলো টার্গেট (লক্ষ্য) নিয়েই করেছি। যতটুকু করেছি, আমার জায়গা থেকে আমি খুশি।
কোন গান হিট করবে, সেটা কতটা বুঝতে পারেন?
প্রীতম হাসান: পুরোপুরি বুঝতে পারি না। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। ‘লাগে উড়াধুরা’, ‘দেওরা’, ‘মা লো মা’ করলাম—এসব গান করার সময় পরিকল্পনা ছিল, গানগুলো যেন হিট করে। আর কিছুই না। সাধারণ শ্রোতাদের মাঝে জনপ্রিয় গান মানে এমন না, সবকিছু মাটিতে মিশিয়ে দেব। কথা হচ্ছে গানটা যেন বিদেশিরাও শোনে। পাশের কোনো দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক সাউন্ড আমরা যেন দিতে পারি। আমাদের গানের ভিডিও যেন বাইরের কাউকে দেখিয়ে বলতে পারি, দেখো, এটা আমাদের গান।
মানসম্পন্ন গানের বাইরে অনেকের অনেক মানহীন গানও জনপ্রিয়তা পায়। জনপ্রিয়তার প্যারামিটারকে আপনি কীভাবে দেখেন?
প্রীতম হাসান: যে যার মতো করে গান করবে, সবার স্বাধীনতা আছে। আমি কাউকে ভালো কিংবা খারাপ বলব না। আমার চোখে সাধারণ শ্রোতারা কারা, সেটাই আমার প্রথম প্রায়োরিটি। রায়হান রাফী ভাইয়ের সঙ্গে তুফান নিয়ে কথা হচ্ছিল, তখনই আমি উনাকে বলেছিলাম, আমার কাছে একটা গান রেডি আছে। গানটা করতে পারি। ‘লাগে উড়াধুরা’ রাফী ভাই খুব খুশি ছিলেন; বাকিটা তো ইতিহাস। মা লো মা কিংবা দেওরা—সবগুলো কাজ নিয়েই পরিকল্পনা ছিল, কাজটা যেন স্মার্ট ও গণমানুষের কাছে সাড়া ফেলে।
‘লাগে উরাধুরা’ ইউটিউবের বৈশ্বিক ট্রেন্ডিংয়ে এসেছিল। এটা আপনাকে কতটা অনুপ্রাণিত করেছে?
প্রীতম হাসান: গানটা বৈশ্বিক ট্রেন্ডিংয়ে উঠেছিল মূলত শাকিব খানের জন্য। আমার জীবনে খুবই কম কাজ করেছি, যেগুলো বৈশ্বিকভাবে সাড়া ফেলেছে। ‘মা লো মা’ বৈশ্বিক ট্রেন্ডিংয়ে ৩৫ কিংবা ৩৬ নম্বরে এসেছিল। ‘দেওরা’ ট্রেন্ডিংয়ে ছিল। তবে ‘লাগে উরাধুরা’ ট্রেন্ডিংয়ে আসার কৃতিত্ব শাকিব ভাইকে দেব। ওনার ফ্যান বেজ খুবই শক্তিশালী। রায়হান রাফী ভাই, শাহরিয়ার শাকিল ভাইয়ের সমর্থন পেয়েছিল। সবার প্রয়াসেই গানটা এত দূর এসেছে।
আপনি তো অভিনেতা প্রীতমের চেয়ে সংগীতশিল্পী প্রীতমকেই এগিয়ে রাখেন...
প্রীতম হাসান: গান করি ভালোবাসা থেকে, এটা আমার খুব প্রিয় জায়গা। আমি শখের বশে গান করতে চাই। গান গানের জায়গায়। অভিনয়টাও শখের জায়গা, সামনে আরও ভালো ভালো কাজ করতে চাই। যখন যেটা ভালো লাগে, তখন সেটা করি। অভিনয় যখন করি সেই দিনগুলোতে আমি প্রীতম হাসান থেকে বিরতি নিতে পারি। ঢাকার বাইরে যাওয়া হয়, ভিন্ন চরিত্র ধারণ করি।
সংগীতশিল্পী ও অভিনেতা—দুই চরিত্র আপনার। কে কাকে বেশি সহযোগিতা করে?
প্রীতম হাসান: অভিনেতা প্রীতমকে সহযোগিতা করার কিছু নেই। তবে নির্মাতারা অভিনেতা প্রীতমকে বানিয়েছে আর অভিনেতা প্রীতম সংগীতশিল্পী প্রীতমকে মিউজিক্যালি সমৃদ্ধ করেছে। এর ফলে আমি মিউজিক্যালি ইমোশন (আবেগ) বুঝতে পারি। দুজন দুজনকে সহযোগিতা করে।
ক্যারিয়ারে আপনার চাওয়া কী?
প্রীতম হাসান: নিজেদের কালচারটাকে তুলে ধরতে চাই। বাংলা গানকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে চাই। সেটা আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে হয়ে যাবে। সারা বিশ্বের প্রচুর বাংলা ভাষাভাষী মানুষ রয়েছে। সারা বিশ্ব থেকে আমরা ভালোবাসা পাই। ফলে চাপের চেয়ে মজাটা আরও বেশি। ভালো কিছু বানানোর অনুপ্রেরণা পাই। আমার স্বপ্ন, অস্কার কিংবা গ্র্যামিতে যেন বাংলা গান থাকে। যেমন কে পপ গান পুরো দুনিয়া শুনছে।
আপনার প্রিয় তিনটা গান কী?
প্রীতম হাসান: আমার পছন্দের গান দুটি ‘শেষ উপহার’, ‘স্বর্গহারা’। ‘স্বর্গহারা’ অ্যালবামটা আমার হৃদয়ের খুব কাছের অ্যালবাম। আমি মনের মাধুরী মিশিয়ে অ্যালবামটা করেছি। অ্যালবামটি সমালোচকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে, তবে গণমানুষের কাছে হয়তো সেভাবে সাড়া ফেলেনি। তবে আমি অ্যালবামটা রিলিজের সময় খুশি হয়েছিলাম। পছন্দের তৃতীয় গান ‘ভেঙে পড়ো না’।
এর মধ্যে হিট কোনো গানই নাই?
প্রীতম হাসান: কোনো গান হিট করলে সেটা আর শিল্পীর থাকে না। মানুষের হয়ে যায়, সেই গানটা তখন সবাই গায়। আমার মনে হয় এটি সফলতা।
আপনার অভিনীত প্রিয় তিন কাজ?
প্রীতম হাসান: প্রথম দিকের কাজ ‘৭০০ টাকা’, নুহাশ হুমায়ূনের পরিচালনায় কাজটা করেছি। দ্বিতীয় কাজ অংশু (তানিম রহমান) ভাইয়ের সঙ্গে নির্মিত যেকোনো মিউজিক ভিডিও। তৃতীয় কাজ আড়াল। আড়াল করার সময় চরিত্রে ঢোকার অভিজ্ঞতাটা পেয়েছি। আগেও চরিত্রের মধ্যে ঢুকতে পারতাম, তবে সব চরিত্রেই প্রীতম হাসানের একটা ছায়া থাকত। আমার আরেকটা প্রিয় কাজ শিহাব (শিহাব শাহীন) ভাইয়ের কাছের মানুষ দূরে থুইয়া।
কোক স্টুডিওর কী অবস্থা?
প্রীতম হাসান: কোক স্টুডিওতে আমার ব্যক্তিগত মিশনে সফল হয়েছি। আমার ইচ্ছা ছিল, সারা দেশের গানকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরা। ভারত ছাড়িয়ে পাকিস্তান থেকে আপ্রিশিয়েশন পেয়েছি। আমরা ভেবেছি, পাসুরি যদি হিট হতে পারে তাহলে বাংলা গান কেন নয়? কোক স্টুডিও বাংলার মাধ্যমে সারা বিশ্বে বাংলা গানকে নিতে পেরেছি।
সামনে আসবে কিছু?
প্রীতম হাসান: আশা করছি, খুব শিগগির আসবে।