বিটিভির দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে সোচ্চার শিল্পী ও কলাকুশলীরা
বাংলাদেশ টেলিভিশনের নানা দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে এবার সোচ্চার হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী শিল্পী ও কলাকুশলীরা। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা রাষ্ট্রায়ত্ত এই টেলিভিশন থেকে দূরে ছিলেন। টেলিভিশনের কর্মকর্তাদের স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণ ও দুর্নীতির কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে বঞ্চিতদের সৃজনশীলতা। বঞ্চিত এই শিল্পী, গীতিকার ও কলাকুশলীরা জানান, মেধা ও সৃজনশীলতাকে মূল্যায়ন না করে বিটিভির সুবিধাভোগী কর্মকর্তারা ১৬ বছর দলীয়করণ করেছেন। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে শিল্পী, গীতিকার ও কলাকুশলীরা বিটিভি ভবনের সামনে কর্মসূচিতে এসব কথা জানান। এই সময় বিটিভির দুর্নীতিতে যুক্ত কর্মকর্তাদের পদত্যাগ চান তাঁরা।
দীর্ঘ সময় ধরে শিল্পীদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে বলে মনে করেন সুরকার শেখ সাদি খান। তিনি আয়োজনের আহ্বায়ক। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই বিটিভি, রেডিও, শিল্পকলা একাডেমিসহ সাংস্কৃতিক যে প্রতিষ্ঠান আছে, সেখান থেকে বৈষম্য দূর হোক। আমরা কর্মবণ্টন চাই। যাঁদের প্রতিভা রয়েছে, তাঁদের মূল্যায়ন করা হোক। এ ছাড়া বিটিভিতে দীর্ঘ বছর ধরে দুর্নীতি চলছে, এই নিয়ে অনেক অভিযোগও রয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ দেখে, জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের এই অনিয়মতান্ত্রিকতা বন্ধ হোক। এতে শিল্পীদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে, শিল্পীদের মন ভেঙে পড়ছে।’
বাংলাদেশ টেলিভিশনে বছরের পর বছর যোগ্যদের মূল্যায়ন নেই, বিভিন্ন অডিশনে মেধাবীদের বাদ দিয়ে কর্তৃপক্ষের পছন্দের লোকদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন শেখ সাদি খান। তিনি আরও বলেন, ‘অডিশনের নামে যা–তা হয়েছে, এটা বন্ধ হোক। নতুন করে যাঁরা মেধাবী, তাঁদের মূল্যায়ন এখন সময়ে দাবি। কারণ আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে এগিয়ে নিতে হবে। আমাদের একটাই কথা, শিল্প অঙ্গন থেকে দুর্নীতি, অরাজকতা দূর করা। একটি সুন্দর দেশ গড়ার ক্ষেত্রে সংস্কৃতির যে অবদান, সেই জায়গায় সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেখতে চাই।’
‘আমরা আর বৈষম্যের শিকার হতে চাই না’ উল্লেখ করে এই আয়োজনের সহ-আহ্বায়ক শেখ জসিম বলেন, ‘বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক কর্মীরা মেধাভিত্তিক মানুষ, আমাদের রক্ষা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র আমাদের দায়িত্ব না নিলে আমাদের দেখার কেউ থাকে না। দেশের যে পিয়ন, তারও একটা সম্মান আছে, চাকরি শেষে খেয়ে–পরে বেঁচে থাকার নিরাপত্তা আছে। নানা রকম সুবিধা পায়। কিন্তু আমাদের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। আমাদের জনপ্রিয় শিল্পী অ্যান্ড্রু কিশোরকেও মরার আগে অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা নিতে হয়েছিল। কিন্তু এই বাস্তবতা কেন? এভাবে সংস্কৃতিকে ছোট করে কখনোই একটি সভ্য জাতি তৈরি হবে না। সেই ন্যায় অধিকারের জন্য আমরা পথে নেমেছি।’
এ সময় অনেকেই দুর্নীতিতে যুক্ত বিটিভির মহাব্যবস্থাপকসহ (ডিজি) অন্য কর্মকর্তাদের পদত্যাগ চান। এই প্রসঙ্গে সহ–আহ্বায়ক শেখ জসিম বলেন, ‘ডিজি সক্ষমতা অনুযায়ী যারা দুর্নীতি করেছে, তাদের চাকরিচ্যুত করতে পারতেন। তিনি তা না করে তদন্তের রিপোর্টের কোনো দায়দায়িত্ব না নিয়ে সেগুলো মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিলেন। তিনি দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করেছেন। ডিজি নিজেও নানা রকম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। অনুষ্ঠানের দায়িত্ব ছিল তাঁদের ওপর। এর উদ্দেশ্য অর্থ লোপাট। বিটিভির বাজেট দিয়ে সব টেলিভিশন চালানো যাবে, অথচ এত টাকা খরচ করলেও বিটিভি দর্শক দেখেন না।’
দীর্ঘ ১৬ বছর বাংলাদেশ টেলিভিশন শিল্পকলা, বেতারসহ সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান থেকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করার আহ্বানে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন ও দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গীতিকার, সুরকার, কণ্ঠশিল্পী, যন্ত্রশিল্পী ও অন্য কলাকুশলীরা বিটিভির সামনে একত্র হন। এখান থেকে বেলা ১১টার পর বিটিভির সামনে কর্মসূচি শেষে তাঁরা শিল্পকলার উদ্দেশে যাত্রা করেন। কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন ফোয়াদ নাসের বাবু, পার্থ মজুমদার, পলাশ, আবু বকর সিদ্দিকী প্রমুখ।