সমবেত কণ্ঠে ‘কারার ঐ লৌহ-কবাট’ গেয়ে প্রতিবাদ
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে বলিউডে তৈরি রাজা কৃষ্ণ মেনন পরিচালিত হিন্দি ‘পিপ্পা’য় ব্যবহৃত হয় কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ঐ লৌহ-কবাট’ গানটি। আর এ গানের রিমেকের সংগীতায়োজন করেন অস্কারজয়ী ভারতীয় সুরকার এ আর রাহমান। কিন্তু গানে নতুন করে এ আর রাহমান সুরারোপ করায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে নজরুলভক্তদের মধ্যে। দাবি ওঠে, অবিলম্বে চলচ্চিত্রটি থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে ওই বিকৃত করে সুর দেওয়া ‘কারার ঐ লৌহ–কবাট’ গানটিকে। এবার কালজয়ী এই গানের সুর বিকৃতির প্রতিবাদে সমবেত কণ্ঠে এ গান পরিবেশন করেছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা।
শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় ঢাকার শিল্পকলা একাডেমির মুক্ত মঞ্চে বাংলাদেশ সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, রাধারমণ সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র ও আমরা একাত্তর-এর উদ্যোগে সমবেত কণ্ঠে গানটি গাওয়া হয়।
ঢাকায় বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা এ পরিবেশনায় অংশ নেন। একইভাবে কলকাতা, লন্ডনসহ বাঙালি অধ্যুষিত বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় সময় সাড়ে ৪টা অনুযায়ী মূল সুরে গানটি গাওয়া হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে আমাদের সুদীর্ঘ সংগ্রাম, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ আর লাখো শহীদের আত্মদানের আবেগের সাথে জড়িয়ে আছে যে অমর গান, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত সেই “কারার ঐ লৌহ-কবাট” গানটিকে বিকৃত করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন ভারতের ‘পিপ্পা’ চলচ্চিত্রের নির্মাতারা । তাদের এই কুকর্মের প্রতিবাদ জানানো এবং ওই চলচ্চিত্র থেকে বিকৃত গানটি বাদ দেওয়ার দাবিতে সমবেত কণ্ঠে গান গাওয়ার এ উদ্যোগ নেওয়া হয় ।’
ভাটিবাংলার ধামাইল গানের জনক রাধারমণ দত্ত। সাধক, কবি ও বৈচিত্র্যময় সুরস্রষ্টা রাধারমণ রচনা করেছিলেন দুই হাজারের বেশি গান।
তাঁর সেসব গান বাংলার লোকসংগীতের অমূল্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত। ১৮৩৩ সালে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় জন্ম রাধারমণ দত্তের। তাঁকে স্মরণ করে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত মঞ্চে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ‘ত্রয়োদশতম রাধারমণ লোকসংগীত উৎসব’ শুরু হয়েছে। এবারের উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য ‘রাধারমণ কমপ্লেক্স নির্মাণ সময়ের দাবি’। প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রবীণ কীর্তনসংগীত শিল্পী সুবল চন্দ্র বসাক।
দুই দিনের এ উৎসবে রাধারমণ, সৈয়দ শাহানুর, দুর্বিন শাহ, শাহ আবদুল করিমসহ বাংলার লোকসংগীত ও বাউলগানের বরেণ্য শিল্পীদের গান পরিবেশন করছেন বাংলাদেশ ও ভারতের শিল্পীরা। আজ শনিবার লোকগানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় রাধারমণ লোকসংগীত উৎসবের এ আয়োজন।