‘তিনি আসলে ছিলেন আমাদের মায়ের মতো’
নিভে গেল বরেণ্য সংগীতশিল্পী সন্জীদা খাতুনের জীবনপ্রদীপ। মঙ্গলবার প্রয়াত হলেন দেশের অগ্রগণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। রাজধানী স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা ৩টা ১০ মিনিটে হৃৎস্পন্দন থেমে যায় সন্জীদা খাতুনের (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর ছেলে পার্থ তানভীর নভেদ ও পুত্রবধূ লাইসা আহমদ লিসা জানালেন, শেষ মুহূর্তে তাঁর হৃৎক্রিয়া বন্ধ (হার্ট অ্যাটাক) হয়েছিল।
সন্জীদা খাতুনের বিপুল কর্মময় বর্ণাঢ্য জীবন সামগ্রিকভাবে বাঙালির মানস ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে। মঙ্গলবার বরেণ্য এই সংগীত ব্যক্তিত্বের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর দেশের শিল্প–সংস্কৃতি অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। আত্মীয়স্বজন ছাড়াও তাঁর সহযোদ্ধা, সহশিল্পী, ছাত্রছাত্রী ও গুণমুগ্ধরা শোকার্তচিত্তে হাসপাতালে ছুটে আসেন। তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন।
সংগীতশিল্পী বুলবুল ইসলাম স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেন, ‘রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের মাধ্যমে আমার সঙ্গে সন্জীদা আপার সম্পর্ক। ১৯৮১ সালে রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ যখন শুরু হয়, আমরা তখন ছোট। প্রতিযোগী হিসেবে ঢাকায় আসি। রাজশাহী থেকে প্রতিযোগী হিসেবে আমি, লিসাসহ আরও অনেকে আসি। সেই সুবাদে তাঁর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হয়। সেই থেকে ওনাদের নেতৃত্বে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে আমাদের বসবাস। সব সময় তাঁদের ছায়াতেই থেকেছি। সন্জীদা আপা এবং ওয়াহিদ (ওয়াহিদুল হক) ভাই—এই দুই বটবৃক্ষের ছায়া না থাকলে আমাদের সংস্কৃতির, বিশেষ করে রবীন্দ্র-নজরুল এবং পঞ্চকবির গানের যে বিকাশ হয়েছে, তা হতো না। এসব তাঁদের ছায়াতল থেকেই হয়েছে। তাঁদের আগ্রহ ও নেতৃত্বে আমরা আজকে এই জায়গায় এসে পৌঁছেছি। আমি বলব, ওয়াহিদ ভাই চলে যাওয়ার পর আমরা বিশাল শূন্যতার মধ্যে পড়ে গেছিলাম। এরপর সন্জীদা আপার হাত ধরেই আমরা ছিলাম। এখন তো উনিও চলে গেলেন। আমরা সত্যিই অভিভাবকহীন অবস্থার মধ্যে পড়ে গেছি।’
সন্জীদা খাতুনকে মানুষ হিসেবে অত্যন্ত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মূল্যায়ন করে বুলবুল ইসলাম বলেন, ‘কখনো কোনো কিছুর সঙ্গে আপস করতেন না। সব সময় তিনি অনড় ছিলেন। নিজের ভাবনায় কখনো আপস করেননি। তাঁর মতো মানুষ আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রয়োজন ছিল, সব সময় থাকবে। আজীবন এ রকম মানুষের প্রতীক্ষায় আমরা থাকব। অসম্ভব ভালো একজন সংগঠক ছিলেন, শিক্ষক হিসেবে ছিলেন অসাধারণ, শিল্পী হিসেবে অনেক বড় মাপের ছিলেন।’
শিল্পী শারমিন সাথি ইসলামের ভাষ্যে, ‘আমরা আপা বলতাম। কিন্তু তিনি আসলে ছিলেন আমাদের মায়ের মতো।’ ছায়ানটের তবলার শিক্ষক এনামুল হক ওমর বললেন, যে অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতায় তিনি সারা দেশের সাংস্কৃতিক কর্মী ও শিল্পীদের সংগঠিত করেছেন, ছায়ানটকে পরিচালনা করেছেন, তাঁর তুলনা হয় না। এমন মানুষের প্রয়াণ জাতির জন্য অপরিমেয় ক্ষতি।