চোখের সামনে বিটিএস

গত সোমবার সিউলের ইয়োইদো হানগাং পার্কে বিটিএসের দলনেতা আরএমের পোস্টার হাতে নুসরাত তুলিছবি: লেখকের সৌজন্যে

মাস চারেক হয় পড়াশোনা করতে দক্ষিণ কোরিয়ায় আছি। রাজধানী সিউল থেকে প্রায় ২৫০ কিমি দূরে গুয়াংজু শহরে থাকি। বিটিএসকে পেতে আমাকে সিউলে যেতে হবে। দূরের পথ, বাসা থেকে সকাল সকাল বের হলাম। প্রায় ঘণ্টা তিনেক খরচ করে গত সোমবার দুপুরের আগেই বাস আমাকে সিউল পৌঁছে দিল। এবারের গন্তব্য ইয়োইদো হানগাং পার্ক, বিকেল পাঁচটা থেকে সেখানে ‘বিটিএস টেনথ অ্যানিভার্সারি ফেস্টা’র জমকালো আয়োজন।

বাস থেকে নেমে মেট্রোরেলে চেপে বসলাম, মাঝখানে ভুল স্টেশনে নেমে আরও দুই ঘণ্টা গচ্চা গেল। তড়িঘড়ি করে শেষমেশ পাঁচটা বাজার আগেই ইয়োইদো হানগাং পার্কে হাজির হলাম। বিটিএস আর্মিতে গমগম করছে পার্কের মাঠ, বেশির ভাগ মানুষের পরনে বেগুনি রঙের পোশাক। বেগুনি বিটিএসের থিম রং। খানিকটা ওপর থেকে দেখলে মনে হবে, কেউ বুঝি মাঠে বেগুনি রং ছড়িয়ে দিয়েছেন।
পার্কের মাঠে বড় পর্দা ফেলা হয়েছে। প্রায় চার লাখের মতো বিটিএস আর্মি ছিলেন মাঠে। সবার মতো আমিও সেই পর্দায় চোখ রেখে অপেক্ষা করছি। এর বাইরে মাত্র তিন হাজার সৌভাগ্যবান বিটিএস অনুরাগী আর্মি লাউঞ্জে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছেন। অনুমতি পেতে বিটিএস আর্মিদের আবেদন করতে হয়েছে, র‍্যাফেল ড্রর মাধ্যমে তিন হাজার বিটিএস আর্মিকে বেছে নেওয়া হয়েছে।

গত সোমবার সিউলের ইয়োইদো হানগাং পার্কে নুসরাত তুলি
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

আর্মি লাউঞ্জের ভেতর রয়েছে মূল মঞ্চ। সেই মঞ্চ থেকে পুরো আয়োজন আর্মি লাউঞ্জের বাইরে স্থাপিত বড় পর্দায় সরাসরি সম্প্রচার চলছে। বিকেল ঠিক পাঁচটায় বড় পর্দায় এলেন বিটিএসের দলনেতা আরএম। বিটিএসের সবাইকেই আমার ভালো লাগে, তবে আরএমের প্রতি মুগ্ধতা একটু বেশি। ‘ইটস ফাইভ পিএম অ্যান্ড দিস ইজ কিম নামজুন’ পর্ব দিয়ে শুরু হলো অনুষ্ঠান। বিটিএস আর্মিদের পাঠানো চিঠি পড়ে শোনালেন আরএম। এরপর পরিবেশন করলেন ‘পারসোনা’ ও ‘ওয়াইল্ড ফ্লাওয়ার’; এতটা কাছ থেকে কখনো বিটিএসের গান শুনিনি, অনুভূতিটা ছিল স্বপ্নের মতো।
এরপর বিটিএসের কয়েকটি মিউজিক ভিডিও দেখানো হলো বড় পর্দায়। রাত আটটার দিকে ছিল আতশবাজি, আলোর ঝলকানিতে ঝলমল করে উঠল রাতের আকাশ। ইয়োইদো হানগাং পার্কের মাঠ থেকে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়াসহ নানা দেশের বিটিএস আর্মিদের সঙ্গে আয়োজনটি উপভোগ করেছি।

সিউলের ইয়োইদো হানগাং পার্কে বড় পর্দায় অনুষ্ঠান উপভোগ করেন বিটিএস আর্মিরা
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

রাত ৯টার পর আয়োজনের পর্দা নামে। ফেরার সময় যুক্তরাষ্ট্রের এক বিটিএস আর্মির সঙ্গে আলাপ হলো। তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় ঘুরতে এসেছেন, এই আয়োজনের খবর শুনেই ছুটে এসেছেন। হাঁটতে হাঁটতে মূল রাস্তায় এসেই দেখি, আমাদের চলাচল নির্বিঘ্ন করার জন্য রাস্তায় গাড়িঘোড়া বন্ধ রাখা হয়েছে। গত বছর সিউলের ইথেওনে হ্যালোইন উৎসবে পদদলিত হয়ে দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যুর পর প্রশাসন এখন বেশ সতর্ক। ফলে ইয়োইদো হানগাং পার্কে ছয় শতাধিক পুলিশ ও বহু স্বেচ্ছাসেবক নিযুক্ত ছিলেন। তাঁরা আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন। ঘণ্টা চারেকের মধ্যেই গুয়াংজুতে ফিরে আসি।

আলোর ঝলকানিতে ঝলমল করে উঠল রাতের আকাশ
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

বিটিএস নিয়ে আমার তেমন আগ্রহ ছিল না। ২০২১ সালে আমি যখন স্নাতকে পড়ি, আমার এক বন্ধু বিটিএসের গানের ভিডিও পাঠাতে থাকে। কয়েকটা গান শুনে ভালো লাগে, পরে ‘ডায়নামাইট’ শুনে খুব ভালো লাগে। এর পর থেকে নিয়মিত বিটিএসের গান শুনছি। বাংলাদেশের অনেকেই বিটিএস ভক্তদের নেতিবাচকভাবে দেখেন। কেন নেতিবাচকভাবে দেখেন, জানি না। বিটিএসের গানে ইতিবাচক বার্তা থাকে। আমার জীবনের খারাপ সময়ে বিটিএসের গান আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে, আমার জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে।

দেওয়ালজুড়ে বিটিএস সদস্যের ছবি
ছবি: লেখকের সৌজন্যে


স্নাতক শেষ করে গুয়াংজুর চন্নাম ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পাই। মাস চারেক ধরে গুয়াংজুতে আছি। বিটিএসের মূল প্রতিষ্ঠান হাইব করপোরেশনে বিপণন বিভাগে চাকরি করার খুব ইচ্ছা। সেখানে আবেদন করতে তিন থেকে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা লাগে। দেশে থাকতে আড়াই বছর চাকরি করেছি, এখানেও আরেকটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছি। তিন বছর পূর্ণ হলেই হাইব করপোরেশনে আবেদন করব।


অনুলিখন: মকফুল হোসেন

আরও পড়ুন