চুমকীর আজ রান্নাঘরে যাওয়া বারণ
ব্যস্ত অভিনেত্রী নাজনীন হাসান চুমকী গোছানো গৃহিণীও বটে। অভিনয় নিয়ে ব্যস্ততার পাশাপাশি নিজ অঙ্গনের সামাজিকতা রক্ষা করেন তিনি। এসবের ফাঁকেও নিয়ম করে বাড়িতে রান্না করেন। তবে আজ তাঁর রান্নাঘরে যাওয়া বারণ। বাড়িতে আজ অনেক অতিথি আসবেন, আড্ডা হবে, গান হবে। কেবল নিয়মিত রাঁধুনি চুমকীর জন্য আজ রান্নাঘর নিষিদ্ধ।
বিয়ের পর থেকেই অভিনেত্রী চুমকীর ঘরের নিয়ম এটি। ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখ তাঁর জন্মদিন। স্বামী আহমেদ পাশা এদিন তাঁকে রান্না করতে দেন না। চুমকীর মনে হয়, তাহলে এক দিন কেন, বছরে কয়েকবার জন্মদিনটা আসুক! তবে এই জীবন নিয়ে ভীষণ আনন্দিত এই অভিনেত্রী। কেন? তিনি বলেন, ‘এক জীবনে মানুষ অনেক জীবন ধারণ করে। কিন্তু বাস্তব চরিত্র হয়ে আবির্ভূত হতে কজন পারে?’ কখনো ‘ফাতাই’, কখনো ‘সীতা’ আবার কখনো ‘দ্রৌপদী’ হয়ে টেলিভিশনের পর্দা, নয়তো মঞ্চে হাজির হয়েছেন চুমকী। কুড়িয়েছেন দর্শক-সমালোচকদের প্রশংসা। তিনি বলেন, ‘যতবার জন্মদিন আসে, মনে হয় সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে, বেঁচে আছি। আর বয়স? চিকিৎসক দেখানো ছাড়া বয়স কত হয়েছে, সেটা কখনো মনে রাখি না।’
নিজের অভিনীত ‘ফাতাই’ চরিত্রটি সবচেয়ে প্রিয় চুমকীর। বেশ আগে একুশে টেলিভিশনে দেখানো একটি নাটকের এ চরিত্র ছিল তাঁর জীবনের ঘুরে দাঁড়ানোর মতো কাজ। তিনি বলেন, ‘হয়তো খুব কম দর্শক নাটকটি দেখেছিলেন। কিন্তু হাফিজ রেদুর রচনা ও পরিচালনায় “ফাতাই” নাটকের এই চরিত্রটি আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র। হাফিজ রেদু আমার জীবনে একটা বড় টার্নিংয়ের সুযোগ করে দিয়েছিলেন।’
একই লেখকের ‘গহরগাছি’ নাটকটিতে অভিনয় করেও বেশ প্রশংসিত হয়েছিলেন চুমকী। সালাহউদ্দিন লাভলুর পরিচালনায় প্রথম ধারাবাহিক নাটক সেটি। মঞ্চেও সমান স্বচ্ছন্দ চুমকী অভিনয় করেছেন ‘নিত্যপুরাণ’, ‘সীতার অগ্নিপরীক্ষা’র মতো নাটকে। অভিনয় করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চিত্রাঙ্গদা’ নৃত্যনাট্যেও। তিন দশক ধরে মঞ্চ আর টেলিভিশনের সঙ্গে যুক্ত তিনি। এ সময়ের মধ্যে অভিনয়ের পাশাপাশি নাটক লিখেছেন, পরিচালনাও করেছেন। সম্প্রতি বিটিভির ‘জিন্দাবাহার’ নাটকে ঘসেটি বেগম চরিত্রে অভিনয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ চরিত্রে কাজ করা ছিল ভীষণ চ্যালেঞ্জের। এ ছাড়া আমার লোভও ছিল চরিত্রটির প্রতি। এখানে দেখানো হয়েছে, ঘসেটি বেগম কেন এত সমালোচিত, কেন লোভী ও আসক্ত। তাঁর নানা রকম লোভ ছিল। অলংকারের প্রতি, অর্থের প্রতি। এমনকি বন্দী অবস্থাতেও ইংরেজদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। এ নাটকে মানুষ ওই সময়ের অনেক তথ্য পাবে। সিরাজউদ্দৌলার এক ভাইকে দত্তক নিয়েছিলেন তিনি।’ কিন্তু বাংলার মানুষ যাঁকে ঘৃণা করে, তাঁর চরিত্রে অভিনয় করতে ভয় করেনি, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘“কোথাও কেউ নেই” নাটকের কুত্তাওয়ালিকে লোকে ঘৃণা করেছে, কিন্তু মনেও রেখেছে। অভিনয়শিল্পী হিসেবে আমিও ঘসেটি বেগমের মতো লোভী। আমার লোভ, মানুষ আমাকে মনে রাখুক।’
ছাত্রজীবনে চুমকী কাজ করতেন চুয়াডাঙ্গার অরিন্দম সাংস্কৃতিক সংগঠনে। ১৯৯২ সালে মঞ্চে অভিনয় শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য ঢাকায় আসেন। ১৯৯৯ সালে ধারাবাহিক নাটক ‘যেতে যেতে অবশেষে’র মাধ্যমে ছোট পর্দায় চুমকীর অভিষেক। নাটকটি পরিচালনা করেছিলেন অনন্ত হিরা। চুমকীর লেখা ও পরিচালনা করা প্রথম নাটক ‘যে জীবন দোয়েলের, ফড়িংয়ের’। ২০০৬ সালে ‘ঘানি’ সিনেমার জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য আরেকটি সিনেমা ‘লালন’। গত বছর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে তাঁর গল্পের বই ‘বিনীতা’। শিগগিরই মাসুম রেজার নাটক ‘পেন্ডুলাম’-এর মহড়ায় অংশ নেবেন চুমকী। সম্প্রতি তিনি শেষ করেছেন শিহাব শাহীন পরিচালিত স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকির ওয়েব সিরিজ ‘মরীচিকা’র কাজ।