হঠাৎ বড়লোক রুনা লায়লা, এত টাকা কপালে সইবে তো

‘জিম্মি’ সিরিজের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী জয়া আহসানহইচইয়ের সৌজন্যে

জুলাই অভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন নির্মাতা আশফাক নিপুন। চাইলে সেই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে থ্রিলার, ক্রাইম-ড্রামা বানাতে পারতেন। তবে তিনি ও পথে হাঁটেননি। থ্রিলার বানানোর জনপ্রিয় টোপ এড়িয়ে তিনি বরং বানিয়েছেন ডার্ক কমেডি। প্রেক্ষাপট হিসেবে বেছে নিয়েছেন জুলাই অভ্যুত্থান। গত ২৮ মার্চ হইচইতে এসেছে ‘জিম্মি’। কেমন হলো নিপুনের সিরিজটি? মহানগর নির্মাতা কি পারলেন নামের প্রতি সুবিচার করতে?

একনজরে
সিরিজ: ‘জিম্মি’
ধরন: ডার্ক কমেডি
পরিচালক: আশফাক নিপুন
অভিনয়ে: জয়া আহসান, ইরেশ যাকের, শাহরিয়ার নাজিম জয়, প্রান্তর দস্তিদার
স্ট্রিমিং: হইচই

টিজার, ট্রেলার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ‘জিম্মি’ তেমনই। সরকারি চাকরিজীবী নারী রুনা লায়লা (জয়া আহসান)। টানাটানির সংসার, স্বামীর (ইরেশ যাকের) কারখানা বন্ধ। তবে স্ত্রীকে সে কথা সে বলতে পারে না, রোজ সময়মতো অফিসের নাম করে বের হয়ে যায়। নিজের শখ-আহ্লাদের কিছুই পূরণ করতে পারে না রুনা লায়লা, অলংকারের দোকানে গিয়ে গয়না দেখাই সার হয়। এমন সময় হঠাৎই যেন আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যায় সে। সহকর্মী মারা যাওয়ায় অফিসের স্টোররুমের দায়িত্ব পায় রুনা, সেখানে গিয়েই পেয়ে যায় টাকার বাক্স! লোভ আর নীতির দ্বন্দ্বে শেষ পর্যন্ত লোভই জেতে। তবে টাকা নিয়ে রুনা নতুন জীবন শুরুর স্বপ্ন দেখলেও সেটা কি সত্যি হয়? এই নিয়ে এগিয়ে গেছে গল্প।

‘জিম্মি’র চিত্রনাট্য আরও জমাটি হতে পারত। শুরুর দিকের পর্বগুলো দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল যেন প্রায় কিছুই ঘটছে না, এক জায়গাতেই আটকে আছে। মুশকিলটা হয়েছে, সিরিজের ট্রেলারে গল্পের অনেক কিছুই দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে, দেখার সময় তাই নতুনত্বের স্বাদ মিলছিল না।

‘জিম্মি’তে জয়া আহসান। হইচই

তবে শেষ দিকে, বিশেষ করে সপ্তম পর্বে এসে নির্মাতা ‘ফাইনাল টাচ’ ভালো দিয়েছেন। এই মুনশিয়ানার জন্যই আড়াই ঘণ্টার সিরিজটি শেষ পর্যন্ত চলনসই হয়েছে।

‘মহানগর’-এ ছোট ছোট অনেক মজার চরিত্র ছিল। ছিনতাইকারী কায়সার, পুলিশ কর্মকর্তা সুকুমার বড়ুয়া বা মলয় কুমারের কথা এখনো ভোলেনি দর্শক। এমনকি দ্বিতীয় মৌসুমের সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালককে নিয়ে এখনো কথা হয়। তবে জিম্মিতে মনে রাখার মতো খুব বেশি চরিত্র তৈরি করতে পারেননি নির্মাতা।

‘জিম্মি’র দৃশ্য। হইচই

জুলাইয়ের প্রেক্ষাপটে নির্মিত হলেও এই সিরিজে অভ্যুত্থানের উপস্থিতি খুবই দুর্বল। বাজেটের অভাবেই হয়তো এমন শক্তিশালী এক অভ্যুত্থান এই সিরিজে ছাপ ফেলার মতো করে হাজির করা যায়নি।

এসব খামতি অভিনয় নিয়ে যতটা সম্ভব পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন অভিনয়শিল্পীরা। প্রথম সিরিজেই জয়া আহসান বুঝিয়ে দিয়েছেন দুই বাংলায় তাঁর কাজের কেন এত কদর। রুনা লায়লা চরিত্রে তিনি যথাযথ। লোভ আর নৈতিকতার দ্বন্দ্বে ভোগা সরকারি চাকরিজীবী, স্বামীর দুর্দশা দেখে বিষণ্ন গৃহবধূ, বিপদে কৌশল খাটাতে পারা চৌকস নারী—সব পরিস্থিতিতেই তিনি দারুণ। তাঁর স্বামীর চরিত্রে খুব ভালো করেছেন ইরেশ যাকের। যেকোনো ধরনের চরিত্রে মানিয়ে গেলেও কেন যেন তাঁকে নিয়ে সেভাবে দেশি নির্মাতারা ভাবেন না। রুনা লায়লার সাবেক প্রেমিকের চরিত্রে শাহরিয়ার নাজিম জয়, সহকর্মীর চরিত্রে প্রান্তর দস্তিদারও ভালো করেছেন।

‘জিম্মি’র ট্রেলারে জয়া আহসান। হইচই

শেষের দিকে ‘জিম্মি’ যেমন জমিয়ে দিয়েছেন, তেমনি মহানগরকেও মনে করিয়ে দিয়েছেন নির্মাতা। এই পর্বে আছে মহানগর-এর সেই জনপ্রিয় সংলাপ ‘যদি থাকে নসিবে আপনা-আপনি আসিবে’, আছে ‘দুইটা কথা মনে রাখবেন’-এর রেফারেন্সও। শুরুর দিকে একটু গতিহীন মনে হলেও শেষ পাতের স্বাদ-যোগ ‘বাঁচিয়ে’ দিয়েছে জিম্মিকে।

আরও পড়ুন