ওয়েবে বাড়ছে নারীকেন্দ্রিক গল্প
দেশে নারীদের সংগ্রাম ও প্রেরণার গল্পগুলো পর্দায় সেভাবে উঠে আসে না। শেষ ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ছিল উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। তবে চলচ্চিত্রে না হলেও ওয়েবে বাড়ছে নারীকেন্দ্রিক কাজ।
নারীদের কেউ হাজারো সংকট পেরিয়ে পরিবারের হাল ধরেছেন, কেউ প্রতিশোধের জন্য মরিয়া, কেউ বা নির্যাতনের প্রতিবাদ করছেন—এমন সব বৈচিত্র্যময় গল্প উঠে আসছে ওয়েব ফিল্ম ও সিরিজে। এসব কাজ নিয়ে দর্শকের আগ্রহও দেখা গেছে। ওয়েবে আলোচিত নারীকেন্দ্রিক কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘সাবরিনা’, ‘গুটি’, ‘সাহসিকা’, ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’, ‘মারকিউলিস’, ‘পরী’, ‘নিকষ’, ‘ফ্রাইডে’ ইত্যাদি। এসব গল্পে অভিনয় করে প্রশংসা পেয়েছেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন, জাকিয়া বারী মম, তমা মির্জা, সাবিলা নূর, পূজা চেরি, তাসনিয়া ফারিণরা।
চলতি বছরের শুরুতে চরকিতে মুক্তি পায় শঙ্খ দাশ গুপ্তের ওয়েব সিরিজ ‘গুটি’। এতে উঠে আসে সুলতানার গল্প, যার কাছে জীবন একটি সংগ্রামের নাম। পরিবারের জন্য এই সংগ্রামে শামিল হয় মাদক বহনকারী সুলতানা। আমাদের সমাজেরই চেনা মুখ সে, যে জীবনের গোলকধাঁধায় পা রেখে ফেরার পথ খুঁজে পায় না। পর্দার সুলতানা চরিত্রে আজমেরী হক বাঁধন এতটাই মানিয়ে গিয়েছেন যে ভক্তদের কাছে শুনতে হয়েছে, ‘এ কোন বাঁধন?’
দেশে এই সময়ে এসেও নারীকেন্দ্রিক কাজের সংখ্যা নিয়ে সন্তুষ্ট নন বাঁধন। বিভিন্ন গল্পে অনেক পুরুষ চরিত্র দেখানো হয়, কিন্তু নারীদের ভিন্ন ধরনের চরিত্র তেমন একটা গুরুত্ব পায় না। তিনি বলেন, ‘গল্পগুলো আরও বেশি বাড়ানোর জন্য পৃষ্ঠপোষক, নারী নির্মাতা, নারী গল্পকারদের বেশি সুযোগ দিতে হবে। নারীদের গল্পগুলো নারীদের দিক থেকে দেখাটাই জরুরি। কিন্তু আমাদের এখানে মনে করা হয়, নারীদের গল্প দর্শক দেখেন না। ভারতের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম এখন সচেতনভাবে নারীদের গল্পকে প্রাধান্য দিচ্ছে, সেগুলো দর্শক দেখছেন। তারা বুঝেছে, সমাজের পরিবর্তনের জন্য নারীদের গুরুত্ব দেওয়াটা জরুরি। কিন্তু, আমরা নারীদের সুযোগ দেব কি দেব না, সেটা নিয়েই হয়তো দোটানায় রয়েছি। দেরিতে হলেও যে এখান থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছি, এটা ইতিবাচক।’
তারিন পুলিশ, মিথিলা আইনজীবী, তানজিন তিশা আসামি—তিন অভিনেত্রীকে নিয়ে প্রচারিত হয় তানিম রহমান অংশুর ‘সাহসিকা’। এটি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম দীপ্ত প্লেতে প্রচারিত হয়। চলতি বছর ‘সাহসিকা ২’ নামে এটির সিকুয়েলও তৈরি হয়েছে। ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের গল্প উঠে আসে এতে।
অন্যদিকে রুবেল হাসানের ‘নিকষ’-এর গল্প এগিয়েছে দুই বোনকে কেন্দ্র করে। হঠাৎ একটা ঘটনায় দুই বোনের জীবনেই নেমে আসে নিকষ অন্ধকার। গত ঈদে দীপ্ত প্লেতে প্রচারিত ওয়েব ফিল্মটি দর্শক পছন্দ করেছেন। এতে তাসনিয়া ফারিণের লুক প্রশংসিত হয়।
গত ঈদে চরকিতে আবু শাহেদ ইমনের ওয়েব সিরিজ ‘মারকিউলিস’ দিয়ে ব্যাপক আলোচনায় ছিলেন সাবিলা নূর। সিরিজটিতে ‘জয়িতা’ চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। পর্দায় তিনি যেভাবের জয়িতার অসহায়ত্ব, আবেগ আর হার না মানা মানসিকতা ফুটিয়ে তুলেছেন, তাতে চমকে গেছেন তাঁর ভক্তরাও। সিরিজটি নিয়ে সাবিলা বলেন, ‘এতটা প্রশংসা পাব, ভাবিনি। আরও বেশি নারীদের নিয়ে গল্প হলে কাজের পরিসর বাড়বে, কাজে বৈচিত্র্য আসবে।’
ওয়েবে নারীকেন্দ্রিক কাজ নিয়ে জানতে চাওয়া হয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেদওয়ান রনির কাছে। এ প্রসঙ্গে তিনি গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় চরিত্র নারী না পুরুষ, সেটা আমরা দেখি না। চরিত্রকে চরিত্র হিসেবে দেখি। চরিত্রটা কত যত্ন নিয়ে তৈরি করা হয়েছে, সেটাই ব্যাপার। যে কারণে নারীপ্রধান চরিত্র চলবে না, সেই ভাবনা থেকেই আমরা সরে আসছি। যখন নারীপ্রধান চরিত্র খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, তখন আমরা লিঙ্গভেদ না করেই প্রযোজনা করি।’