অন্তরঙ্গ দৃশ্যের ভিডিও, তরুণীদের আত্মহত্যা আর বদমেজাজি পুলিশ অফিসারের গল্প

‘অফিসার অন ডিউটি’ সিনেমার প্রচ্ছদ। আইএমডিবি

কোভিডের সময় ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো মালয়ালম থ্রিলার সিনেমাকে যেন নতুন জীবন দেয়। আগে কেবল সীমিত পরিসরে যেসব সিনেমা মুক্তি পেত, ওটিটির কল্যাণে সিনেমাগুলো ছড়িয়ে পড়তে থাকে বিশ্বব্যাপী। সেই সময়ে অন্যতম আলোচিত সিনেমা ছিল ‘নায়াত্তু’। ২০২১ সালে মুক্তির পর মার্টিন প্রাকাট পরিচালিত সিনেমাটি চমকে দিয়েছিল সমালোচকদের। ‘নায়াত্তু’তে পুলিশ চরিত্রে অভিনয় করেন কানচাকো বোবান, চিত্রনাট্য লিখেছিলেন শাহী কবীর। এই লেখক-অভিনেতা জুটির নতুন সিনেমা ‘অফিসার অন ডিউটি’। গত বৃহস্পতিবার রাতে ওটিটিতে মুক্তি পেয়েছে চলতি বছরের অন্যতম আলোচিত সিনেমাটি। কিন্তু কানচাকো-কবীর জুটির প্রত্যাবর্তন কি মন ভরাতে পারল?

গল্পের শুরু কেরালা পুলিশের কর্মকর্তা হরিশঙ্করকে দিয়ে। বদমেজাজি এই কর্মকর্তা নিজের আচরণের জন্য সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিল, তার নিম্ন পদায়নও হয়েছে। বহিষ্কারাদেশ শেষে কাজে যোগদানের প্রথম দিনেই থানায় আসে বাসে গলার চেইন চুরির কেস। ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে এমন আরও চেইন চুরির কথা জানা যায়।

‘অফিসার অন ডিউটি’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

এটা নিছক চেইন চুরি, নাকি এর নেপথ্যে জড়িয়ে আছে অন্য কোনো ঘটনা? চেইন হারানো কয়েকজন তরুণীর অন্তরঙ্গ দৃশ্যের ভিডিও প্রকাশ্যে আসায় তাদের আত্মহত্যার কথাও জানা যায়। এদিকে হরিশঙ্করের দাম্পত্য জীবনও টালমাটাল, মেয়ের আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে এক দুঃসহ অতীত তাড়া করছে তাকে। তার মেয়ের আত্মহত্যার সঙ্গে কি বর্তমান কেসের সম্পর্ক আছে? এমন গল্প নিয়ে এগিয়ে যায় সিনেমাটি।

একনজরে
সিনেমা: ‘অফিসার অন ডিউটি’
ধরন: অ্যাকশন থ্রিলার
পরিচালনা: জিতু আশরাফ
অভিনয়ে: কানচাকো বোবান, প্রিয়ামনি, জগদীশ
দৈর্ঘ্য: ১৩৭ মিনিট
স্ট্রিমিং: নেটফ্লিক্স

গল্প হিসেবে ‘অফিসার অন ডিউটি’তে নতুন কিছু নেই। ওটিটি প্রতি সপ্তাহেই নানা ধরনের থ্রিলার মুক্তি পায়; এ সিনেমায় সেখান থেকে নতুন কোনো বার্তা দিতে পারে না। তবে চিত্রনাট্য আর নির্মাণের মুনশিয়ানায় সিনেমাটি উতরে যায়। ‘জোসেফ’, ‘নায়াত্তু’ দিয়ে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন চিত্রনাট্যকার শাহী কবীর। বাস্তবঘেঁষা গল্পে তিনি তুলে এনেছেন সমাজের নানা বাস্তবতা। ‘অফিসার অন ডিউটি’ তাঁর আগে করা বহুলচর্চিত দুই সিনেমার মতো হয়নি ঠিকই, তবে বিনোদনের বিচারে একেবারে ফেলনাও নয়।

নির্মাতা জিতু আশরাফের প্রথম সিনেমা এটি। তিনি চেয়েছেন বিনোদনের মোড়কে একটি মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমা বানাতে যেখানে পরতে পরতে রোমাঞ্চ থাকবে; এতে তিনি যে ভালোভাবেই সফল সেটা বক্স অফিসের অঙ্কই বলে দিচ্ছে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পর ১২ কোটি রুপি বাজেটের সিনেমাটি ৫০ কোটি রুপির বেশি আয় করেছে।

‘অফিসার অন ডিউটি’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

‘অফিসার অন ডিউটি’র চরিত্রগুলো খুব চেনা। ব্যক্তিগত জীবনে বিপর্যস্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়ে সারা দুনিয়ায় প্রচুর সিনেমা, সিরিজ হয়েছে। এই সিনেমায় খলনায়কদের মধ্যেও নতুনত্ব নেই। তবে বুদ্ধিদীপ্ত চিত্রনাট্যের কারণেই পর্দা থেকে চোখ ফেরানো যায় না; সিনেমা শুরুর পর থেকে একটার পর একটা ঘটনা ঘটতেই থাকে। এই সিনেমার অ্যাকশন দৃশ্যগুলো দারুণভাবে কোরিওগ্রাফি করা হয়েছে, হাসপাতালের মর্গের অ্যাকশন দৃশ্যটি গায়ে কাঁটা দেয়। খলনায়কদেরও চরিত্রগুলোও গুরুত্ব দিয়ে লেখা হয়েছে। তাদের অতীত, মাদকাসক্তি, গ্যাং কালচার বিশ্বাসযোগ্যভাবে পর্দায় তুলে আনা হয়েছে।

অভিনেতা হিসেবে কানচাকো বোবান খুব কমই হতাশ করেন, এ সিনেমাতেও ব্যতিক্রম হয়নি। দুঃসহ অতীত বয়ে বেড়ানো বদমেজাজি এক পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্রে তিনি দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন।

‘অফিসার অন ডিউটি’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

চন্দ্রবাবুর মেয়ের আত্মহত্যার দৃশ্য দেখে তিনি যেভাবে ভেঙে পড়েন, বাসায় ফিরে প্রতিক্রিয়া দেখান; সেই আবেগ সহজেই ছুঁয়ে যায়। সিনেমা শুরু হয়েছিল বদমেজাজি হরিশঙ্করকে দিয়ে, শেষ হয় তার চারিত্রিক বদলের মধ্য দিয়ে। নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করে সত্যানুসন্ধানে হরির এই যাত্রাকে দারুণ দক্ষতায় ফুটিয়ে তুলেছেন কানচাকো বোবান। তবে তাঁর স্ত্রীর চরিত্রে হতাশ করেছেন প্রিয়ামনি। খুবই স্বল্পদৈর্ঘ্যের চরিত্র, এখানে তাঁর প্রায় কিছুই করার ছিল না। তাঁর মতে, একজন অভিনেত্রীকে এ ছবিতে নিয়ে অপচয় করেছেন নির্মাতা।

আরও পড়ুন

খল চরিত্রে তরুণ অভিনেতারাও যথাযথ। তাঁদের চাউনি, হিংস্রতা আর হার না মানার মনোভাব খবরের শিরোনামে আসা কিশোর গ্যাংদের কথা মনে করিয়ে দেয়।
‘অফিসার অন ডিউটি’ অবশ্যই ‘নায়াত্তু’ হয়নি, তবে একবার দেখার জন্য মন্দ নয়।