কী ঘটেছিল ১৯৭৯ সালে...
‘রিফিউজিগো দ্যাশ-জাত বইলে কিছু আছে নাকি! আমরা তো মন্দিরের ঘণ্টার মতো। যে বাজায়, খালি বাইজে যাই।’ শনিবার রাত ৮টায় প্রকাশ পাওয়া নতুন ওয়েব সিরিজ ফেউ–এর টিজারে ছিল এই একটি সংলাপ। কোনো চরিত্র প্রকাশ করা হয়নি। তবে উচ্চারিত সংলাপ থেকে ধারণা পাওয়া যায়, শরণার্থীদের নিয়ে কোনো গল্প বলতে চাইছেন নির্মাতা। চরকির পক্ষ থেকে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। টিজারের ক্যাপশনে লেখা, ‘কী ঘটেছিল ১৯৭৯ সালে? কী লুকানো হয়েছে আমাদের কাছ থেকে? চরকিতে শিগগিরই আসছে সত্য ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত চরকি অরিজিনাল সিরিজ “ফেউ”।’
পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ পরগনা জেলার দ্বীপ মরিচঝাঁপি। দেশভাগ ও মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক মানুষ শরণার্থী হয়ে ভারত পাড়ি দিয়েছিল। নানা ঘাত–প্রতিঘাত পেরিয়ে নিম্নবর্ণের (নমঃশূদ্র) হিন্দুধর্মাবলম্বীদের একটা অংশ এসে এই মরিচঝাঁপিতে আশ্রয় নেয়। সরকারি আশ্বাসেই সেখানে আবাস গড়ে তোলেন তাঁরা।
কিন্তু ভোটের আগের রাজনীতি রূপ পাল্টায় ভোটের পরে। শুরু হয় উদ্বাস্তু উচ্ছেদ। শরণার্থী উচ্ছেদ করতে মরিচঝাঁপিতে খাবার ও পানি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, ঘরে আগুন দেওয়া, নৌকা ডোবানোসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটে। এভাবে ১৯৭৯ সালের ১৬ মে মরিচঝাঁপিকে উদ্বাস্তুশূন্য করতে সক্ষম হয় ভারতের তৎকালীন রাজ্য সরকার।
ইতিহাসের এই ঘটনার অনুপ্রেরণায় নির্মিত হয়েছে ওয়েব সিরিজ ‘ফেউ’।
ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকির জন্য এটি নির্মাণ করেছেন সুকর্ন সাহেদ ধীমান। পরিচালকের ভাষ্যে, ‘সুন্দরবনে তো অনেক গল্প; বনবিবির গল্প, ডাকাতের গল্প, স্থানীয় মিথ। কিন্তু আমি খুঁজেছি ওই অঞ্চলের রাজনীতি।’ সুকর্ন সাহেদ ধীমান জানান, ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে এসব তথ্য সংগ্রহ করেছেন তিনি, এগিয়েছে গল্প বুননের কাজ। ধীমান বলেন, ‘২০২১–এ আমার মনে হয় এটি দিয়ে আমি কিছু নির্মাণ করতে চাই। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে গল্পটা লক করি।
চিত্রনাট্যের ১৭টা ড্রাফট করার পর আমরা কাজ শুরু করতে পেরেছি।’ শনিবার প্রকাশ পাওয়া পুরো টিজারে ছোট ছোট দৃশ্যে বোঝানো হয়েছে গল্পটির অঞ্চলগত বৈশিষ্ট্য। ছোট-বড় নৌকা, ঘন জঙ্গল, কিছু মানুষের ধস্তাধস্তি, উদ্যাপনের মতো দৃশ্যও আছে। এসবের ব্যাখ্যা এখনই দিতে চাননি পরিচালক। জানিয়েছেন ধীরে ধীরে পুরোটাই উন্মোচিত হবে।
প্রেক্ষাপট ইতিহাসনির্ভর হলেও ‘ফেউ’-এর গল্পটি ফিকশনাল। লিখেছেন সুকর্ন সাহেদ ধীমান, রোমেল রহমান। চিত্রনাট্য করেছেন সুকর্ন সাহেদ ধীমান, সিদ্দিক আহমেদ। ইতিহাসের সঙ্গে নিজের দেখা চরিত্র, নিজের জানা ঘটনা, নিজের অঞ্চলের গল্প সিরিজে তুলে ধরেছেন বলে জানান নির্মাতা। ধীমান বলেন, ‘আমরা একটা সত্য ঘটনার ছায়া অবলম্বন করেছি, অনুপ্রেরণা নিয়েছি। সেটা এই সিরিজের মূল কেন্দ্র। তবে সেই কেন্দ্রকে আবর্তিত করে যত কিছু, তার সবটাই আমার দেখাজানা মোংলার মানুষ, তাদের জীবন ও রাজনীতি থেকে নেওয়া অভিজ্ঞতা।’
এখনই শিল্পীদের নাম প্রকাশ করতে চাইছেন না নির্মাতা। চরকিতে শিগগিরই আসছে ফেউ। মুক্তির তারিখ দ্রুতই জানানো হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।