‘ফরগেট মি নট’, কী চলছিল ছেলেটির মনের ভেতর
হঠাৎ করে নাই হয়ে যাওয়া ছেলেটার ভেতর কী চলছিল? সিনেমার প্রথম পোস্টারে লেখা ছিল লাইনটি। আর ‘ফরগেট মি নট’ সিনেমাজুড়ে যেন খুঁজে বেড়ানো হয়েছে এ প্রশ্নের উত্তর।
ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকির মিনিস্ট্রি অব লাভ প্রকল্পের চতুর্থ সিনেমা ‘ফরগেট মি নট’। ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের এ ওয়েব ফিল্মটি পরিচালনা করেছেন রবিউল আলম রবি। ৫ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায় সিনেমাটি।
একনজরে
ওয়েব ফিল্ম: ‘ফরগেট মি নট’
স্ট্রিমিং: চরকি
জনরা: সাইকোলজিক্যাল-ড্রামা
পরিচালক: রবিউল আলম রবি
অভিনয়ে: মেহজাবীন চৌধুরী, ইয়াশ রোহান, বিজরী বরকতউল্লাহ, ইরফান সাজ্জাদ
‘ফরগেট মি নট’ রোমান্টিক-সাইকোলজিক্যাল ড্রামা। গল্পের কাহিনি ধীরে এগোলেও দর্শকের মোটেও সময় লাগে না গল্পের ভেতর ঢুকে যেতে। অর্থি আর ফাহিমকে দেখে মনে হয়, নিজেদের প্রেমের কোনো এক পর্যায় তো এ রকমই ছিল। কিংবা এ রকম একটা প্রেম তো আমরা সবাই দেখেছি।
তুমুল ভালোবাসা, লুকিয়ে প্রেম, মান-অভিমান বা তুচ্ছ কারণে ভুল–বোঝাবুঝি। কিন্তু গল্প তখনই নতুন দিকে মোড় নেয়, যখন ফাহিম পাঁচ মাসের জন্য নিরুদ্দেশ হয়ে যায়।
এদিকে অর্থি তত দিনে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে চাকরিতে ঢুকেছে। পাঁচ মাস পর অর্থির জন্মদিনে ফিরে আসে ফাহিম। কিন্তু যখন সে ফিরে আসে, তখন আর কিছুই থাকে না আগের মতো। ফাহিম কোথায় গিয়েছিল, সে উত্তরই খুঁজতে থাকে অর্থি।
এদিকে ফাহিমের মা খুঁজতে থাকেন ছেলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের ভুলত্রুটি আর মানসিক দ্বন্দ্বের নানা দিক। শেষ পর্যন্ত কি সব প্রশ্নের উত্তর মেলে? কিন্তু তখন কি অনেক দেরি হয়ে যায়?
‘ফরগেট মি নট’ ফিল্মের প্রতিটি চরিত্রই তৈরি করা হয়েছে বেশ মনোযোগ দিয়ে। তাই কাহিনি একটু ধীরগতিতে এগোলেও কোনো দৃশ্যই বাহুল্য মনে হয়নি। মেহজাবীন চৌধুরী অর্থি চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন। ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে মেহজাবীন যেভাবে তাঁর আবেগ সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, তাঁর প্রশংসা করতেই হয়। ইয়াশ রোহান ফাহিমের চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন খুব সাবলীলভাবে।
খামখেয়ালি, চঞ্চল, পাগলামিতে ভরপুর উচ্ছল প্রেমিক হিসেবে তাঁকে মানিয়েছে সুন্দর। পর্দায় মেহজাবীন-ইয়াশের সম্পর্কের রসায়ন দর্শককে আনন্দ দিয়েছে। পার্শ্ব চরিত্রে ইরফান সাজ্জাদ ও বিজরী বরকতউল্লাহও ভালো করেছেন। বিশেষ করে ফাহিমের মায়ের চরিত্রটি বিজরী বরকতউল্লাহ ফুটিয়ে তুলেছেন নিখুঁতভাবে।
এই ফিল্মে সবচেয়ে বেশি কৃতিত্বের দাবিদার পরিচালক রবিউল আলম রবি। সাধারণ একটা গল্পকে তিনি অসাধারণভাবে পর্দায় তুলে এনেছেন; যা ছাপ ফেলে যায়, আলোড়িত করে দর্শককে। কম সংলাপ, সাধারণ দৃশ্য আর বাহুল্যহীন অভিনয়কে পরিচালক যেভাবে চিত্রায়ণ করেছেন, তা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।
‘ফরগেট মি নট’-এর আবহ সংগীতের কথা না বললেই নয়। শেষ দিকে আহমেদ আহসান সানির ‘কেমনে কী’ গানটি মন ছুঁয়ে যায়। সম্পর্ক, পরিস্থিতি আর মানসিক টানাপোড়েন, সব যেন এই একটা গানেই ফুটে উঠেছে সুন্দরভাবে।
এ গল্পের মধ্যে পরিচালক রবিউল আলম রবি অনেক কথাই বলেননি। বরং দর্শককে সুযোগ দিয়েছেন ছোট ছোট ঘটনা থেকে কাহিনির সূত্র খুঁজে নিতে। পুরো সিনেমায় পোষা বিড়ালকে যেভাবে আলাদা চরিত্র হিসেবে হাজির করা হয়েছে, সেটাও তারিফযোগ্য। গল্প এগোতে এগোতে যখন অতীত থেকে বর্তমানে আসে বা এক দৃশ্য থেকে অন্য দৃশ্যে যায়, সেটা যেন দর্শক ধরতেই পারেন না কখনো।
বরং মিশে যান কাহিনির সঙ্গে। ছোটখাটো দৃশ্য আর সংলাপ অজান্তেই গেঁথে যায় হৃদয়ে। তাই গল্পটি যেন শেষ হয়েও শেষ হয় না। মনে রয়ে যায় এর রেশ।
সিনেমাটির শেষ দৃশ্যটিও অনেক দিন মনে রাখার মতো। ভিন্ন বয়সের দুই নারী, দুজনই হারানোর বেদনা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে; দুজনের উপলব্ধি ভিন্ন হলেও কোথাও যেন এসে একসূত্রে মিলে যায়। তখন চাইলে আপনি সিনেমায় ফাহিমের সেই সংলাপটাও মনে করতে পারেন, ‘ইমপারফেক্ট জিনিসকে মানুষ ভালোবাসতে চায় না।’ যা আসলে এক লাইনে পুরো সিনেমার আবেগটাকেই তুলে ধরে।