টম ক্রুজ পারেননি, পারলেন এই নায়ক
টম ক্রুজও তাহলে ব্যর্থ হন! দীর্ঘ ক্যারিয়ারের নানা ধরনের সিনেমা করেছেন হলিউডের এই অ্যাকশন তারকা, সব সিনেমা বক্স অফিসে সাফল্য পায়নি। সব নায়কের সব সিনেমা হিট হবে না, এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। তবে ‘রিচার’ ফ্র্যাঞ্চাইজির সিনেমায় অভিনয় করে যেভাবে ডাহা ফেল করেছেন, সেটা টম ক্রুজ নামটার সঙ্গে ঠিক যায় না। সবাইকে চমকে দিয়ে এই ফ্র্যাঞ্চাইজির সিনেমায় ঝড় তুলেছেন তুলনামূলক কম পরিচিত এক নায়ক। কে তিনি? কেনই বা টম ক্রুজ ব্যর্থ হয়েছিলেন?
ব্রিটিশ লেখক লি চাইল্ডের উপন্যাসের চরিত্র জ্যাক রিচার। জনপ্রিয় এ চরিত্র নিয়ে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৮টি উপন্যাস লিখেছেন চাইল্ড। এই সিরিজের প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয় ১৯৯৭ সালের মার্চে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, ব্যাপক সাড়াজাগানো এই সিরিজের চলচ্চিত্রায়ণে সময় লেগে যায় ১৫ বছর! ২০১২ সালে মুক্তি পায় রিচারকে নিয়ে সিনেমা ‘জ্যাক রিচার’।
চার বছর পর আসে দ্বিতীয়টি ‘জ্যাক রিচার: নেভার গো ব্যাক’। দুই সিনেমায় রিচারের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন টম ক্রুজ। কোনো ছবিই সেভাবে সাড়া জাগাতে পারেনি। ফলে প্রযোজকেরা আর রিচারকে নিয়ে সিনেমা করতে উৎসাহ পাননি। দর্শক–সমালোচক তো বটেই, রিচারকে নিয়ে নির্মিত দুটি সিনেমা তেমন পছন্দ হয়নি লেখক লি চাইল্ডেরও। তাঁর মতে, তাঁর লেখা রিচারকে পর্দায় ঠিকমতো দেখাতে পারেননি নির্মাতা। বাহ্যিক ব্যাপারটিই ধরা যাক, লেখায় আছে রিচার সাড়ে ছয় ফুট লম্বা। বিশালদেহী রিচারের বর্ণনার সঙ্গে টম ক্রুজকে কোনোভাবেই মেলানো যায় না।
রিচারের চলচ্চিত্রায়ণ যখন অনিশ্চিত, তখনই তাঁকে সিরিজ হিসেবে পর্দায় নিয়ে আসে অ্যামাজন প্রাইম। ২০২২ সালের শুরুতে এর প্রথম সিজন মুক্তির পরই বাজিমাত। দর্শক, সমালোচকদের তুমুল প্রশংসা কুড়ায় সিরিজটি। নেলসন স্ট্রিমিং র্যাঙ্কিংয়ের জরিপ অনুসারে, মুক্তির সপ্তাহে রিচারই ছিল সবচেয়ে বেশি স্ট্রিম হওয়া সিরিজ। এই সিরিজ উপন্যাস অবলম্বনে অ্যামাজন প্রাইমের ওয়েব সিরিজ ‘রিচার’।
২০২৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছিল এটির দ্বিতীয় মৌসুম। দর্শক, সমালোচকের কাছে ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে। সেটা এতটাই যে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই নতুন মৌসুম নিয়ে আসছে অ্যামাজন, এর মধ্যেই আরও নতুন নতুন মৌসুম নিশ্চিতও করেছে প্ল্যাটফর্মটি।
জ্যাক রিচার যুক্তরাষ্ট্রের মিলিটারি পুলিশের সাবেক মেজর। নিজের মর্জিমতো ঘুরে বেড়ায় এ শহর থেকে ও শহর। প্রায়ই জড়িয়ে পড়ে রহস্যের জালে। মোটাদাগে এই হলো ক্রাইম, থ্রিলার ঘরানার উপন্যাসগুলোর গল্প।
কিন্তু কী এমন আছে এই সিরিজে, যা রিচারকে নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোয় পাওয়া যায়নি? সমালোচকদের ভাষ্যে, সিরিজের মূল শক্তির জায়গা রিচার চরিত্রে অ্যালান রিটসসনের অভিনয়। এই অভিনেতা দেখতে বইয়ে লেখা রিচারের বর্ণনার সঙ্গে অনেকটাই মিলে যান। সিরিজটি দেখার পর দর্শক, সমালোচকের কথা—অবশেষে রিচারকে পাওয়া গেছে। রিটসসনের অভিনয়ের সঙ্গে বুদ্ধিদীপ্ত চিত্রনাট্য আর নির্মাণ মিলিয়ে যথেষ্ট উপভোগ্য হয়ে উঠেছে সিরিজটি।
দ্বিতীয় সিজন মুক্তির আগে ভ্যারাইটিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অ্যালান বলেন, ‘প্রথম সিজনের পাত্র–পাত্রী সবাই মিলে একটা দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন, আমাদের সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে হবে। প্রতি সিজনে সব নতুন চরিত্র, আমরা চেষ্টা করেছি দর্শকদের সর্বোচ্চটা দিতে। রিচার খুবই শক্তিশালী চরিত্র, যে চরিত্রে অভিনয়ের চ্যালেঞ্জ নিতে যেকোনো শিল্পীই মুখিয়ে থাকবেন।’ চরিত্রটির প্রস্তুতির জন্য রিচারকে নিয়ে লেখা প্রায় সব বইও পড়েছেন এই অভিনেতা।
হঠাৎই ‘রিচার’ নিয়ে এত আলাপের কারণ আজ রাতেই আসছে বহুল প্রতীক্ষিত এই সিরিজের তৃতীয় মৌসুমের প্রথম তিন পর্ব। আট পর্বের সিরিজের বাকি পর্বগুলো ধারাবাহিকভাবে আগামী ২৭ মার্চ পর্যন্ত মুক্তি পাবে।
গত মাসেই মুক্তি পেয়েছে নুতন মৌসুমের ট্রেলার, যা রোমাঞ্চপ্রেমীদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। এবারও নতুন এক রহস্যের জালে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায় রিচারকে। দর্শকও জানেন যত কঠিন চ্যালেঞ্জই আসুক, রিচার ঠিকই উতরে যাবেন। কিন্তু নির্মাতা সেটা কতটা বুদ্ধিদীপ্তভাবে তুলে ধরেছেন সেটাই দেখার।
এই সিরিজ দিয়ে রাতারাতি তারকা বনে গেছেন অ্যালান রিটসসন। প্রচুর অ্যাকশন সিনেমা, সিরিজের প্রস্তাব পাচ্ছেন। তবে রিচার চরিত্রে অভিনয় উপভোগ করলেও অ্যাকশন তারকা হিসেবে পরিচিতি পেতে চান না ৪২ বছর বয়সী এই তারকা। সব ধরনের বৈচিত্র্যময় চরিত্রের জন্য নিজের দরজা খোলা রেখেছেন। নতুন মৌসুমে ‘রিচার’ কেমন হয় সেটাই এখন দেখার।
তথ্যসূত্র: আইএমডিবি, ভ্যারাইটি