অভিনয় ছাড়তে চেয়েছিলেন দিনার
১৯৯৭ সালের কথা। ক্যারিয়ারের শুরুতেই টেলিভিশন পর্দায় এসে জয় করেছিলেন দর্শকমন। এর পরের এক যুগে দর্শকদের কাছে অভিনেতা হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠা ইন্তেখাব দিনার যেন একটু একটু করে কোথায় হারিয়ে যাচ্ছিলেন। একসময় টিভি নাটকে শুরু হলো ভিউয়ের হিসাব–নিকাশ। অভিনেতার মনে জড়ো হতে থাকল রাজ্যের হতাশা। তাঁর নাটকের নাকি ভিউ হয় না, তাই কাজও নেই। তবে ক্যারিয়ারের দুই যুগ পূর্তির ঠিক আগে এভাবে জ্বলে উঠবেন, নিজেও ভাবেননি। কলকাতা থেকে ইন্তেখাব দিনার শোনালেন সেই অজানা গল্প।
নতুন দিনারের উত্থান
এক বছর আগে ইন্তেখাব দিনারের ক্যারিয়ারের উত্থান ঘটে চরকির অ্যানথোলজি সিরিজ ‘ঊনলৌকিক’-এর পর্ব ‘দ্বিখণ্ডিত’ দিয়ে। কাজটা নিয়ে এতটা প্রশংসা পাবেন, নিজেও ভাবেননি।
দিনার বলেন, ‘মাঝে আমাকে কেউ কাজে ডাকত না। আমার গ্রহণযোগ্যতা কম ছিল। কাজের তেমন কোনো ভিউ নেই। পরে ‘দ্বিখণ্ডিত’ করে পরিচালক, দর্শক থেকে শুরু করে আমার সহকর্মীদের এতটা প্রশংসা পাব, ভাবতেও পারিনি। এখন সবাই কাজের জন্য ডাকে। এ জন্য পরিচালক রবিউল আলম রবি ও চরকির কাছে কৃতজ্ঞতা। তারাই আমাকে দ্বিতীয় জীবন দিয়েছে।’
অভিনয় ছাড়তে চেয়েছিলেন
২০১০ সালের পর ইন্তেখাব দিনারের কাজ এতটাই কমে যাচ্ছিল যে ভেবেছিলেন অভিনয় ছেড়ে অন্য পেশায় যাবেন। একসময় পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন অভিনয় ক্যারিয়ারের ইতি টানবেন। তিনি বলেন, ‘আমার মধ্যে হতাশা চলে এসেছিল। কিন্তু আমি অভিনয় ছাড়া কিছুই কোনো দিন শিখিনি। কী করা যায়, বন্ধুদের কাছে পরামর্শ নিচ্ছিলাম। এর মধ্যে বদলে গেল অভিনয়জীবনটাই।’
ক্যারিয়ারের সুসময়
এই অভিনেতা ক্যারিয়ারের সুসময় পার করছিলেন শুরুর দিকে। তখন ভেবেছিলেন, অভিনয় নিয়ে বাকি জীবন থাকতে পারবেন। কিন্তু তাঁর কাজ কমে যাওয়ায় হোঁচট খেতে হয়। দিনার বলেন, ‘এভাবে ক্যারিয়ারে আবার ফিরে আসব, ভাবিনি। সবার ভালোবাসায় এখন আগের চেয়েও ভালো সময় কাটছে। কাজের ব্যাপ্তি অনেক বেড়েছে। ভালো কাজ করতে পারছি। এখন বাইরে গেলে দর্শকেরা প্রশংসা করেন। কলকাতায় আসার পর দর্শকেরা অনেক চরিত্রের প্রশংসা করছেন। চরিত্রের নাম ধরে ডাকছেন। এগুলো প্রেরণা।’
ব্যস্ততা ওয়েব ঘিরেই
ইন্তেখাব দিনারের নামের আগে এখন বলা হয় ‘ওয়েব শিল্পী’। তাকদীর সিরিজে প্রথম অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেন। পরে ‘ঊনলৌকিক’ দিয়ে শুরু হয় নতুন এক দিনারের যাত্রা। সেই থেকে তাঁর ৮০ শতাংশ ব্যস্ততা ওয়েব ঘিরেই। প্রতিদিনই কোনো কোনো নির্মাতা ওয়েবের কাজের জন্য ফোন করেন। তবে দিনার সব কাজে যুক্ত হতে চান না। জানালেন, আগামী কয়েক মাসের শিডিউল এখনই প্রায় শেষ।
বাইরে বের হলে যা শুনতে হয়
তরুণ প্রজন্মের দর্শকদের কাছে অনেকটাই অপরিচিত হয়ে যাচ্ছিলেন দিনার। সেই তিনিই এখন এ সময়ের দর্শকদের প্রশংসা পাচ্ছেন। এক বছর ধরে সবচেয়ে বেশি প্রশংসা শুনতে হয়েছে চরকির ‘ঊনলৌকিক’-এর জন্য। গত মাসে ‘কারাগার’ প্রচারের পর সিরিজটির জন্যও ব্যাপক প্রশংসা পাচ্ছেন। ‘ঊনলৌকিক’ প্রসঙ্গে দিনার বলেন, ‘এ ধরনের অফ ট্র্যাকের কাজ যে দর্শক গ্রহণ করবেন, সেটা আমাদের ধারণার বাইরে ছিল। পরে দেখলাম, আমরা দর্শকদের আন্ডারএস্টিমেট করি। ভালো কাজ হলে দর্শক অবশ্যই দেখেন। ‘ষ’ নিয়েও অনেক প্রশংসা পেয়েছি। এখন বাইরে বের হলেই সবচেয়ে বেশি শুনতে হয়, ‘কারাগার’-এর দ্বিতীয় পর্ব কবে আসবে?’
সব চরিত্রই জনপ্রিয়
প্রথম ‘তাকদীর’-এ অতিথি চরিত্র করেই বাজিমাত করেন দিনার। সিরিজে চেয়ারম্যানের চরিত্রে দর্শক দারুণভাবে গ্রহণ করে তাঁকে। এরপর ‘ঊনলৌকিক’-এর মোস্তাক চরিত্রে একাই দাপট দেখিয়েছেন। ‘জাগো বাহে’ অ্যানথোলজি সিরিজের ‘লাইটস, ক্যামেরা, অবজেকশন...’–এ পাকিস্তানি সেনার চরিত্রেও মাতিয়েছেন। ‘কারাগার’, ‘মাকাল’সহ একাধিক ওয়েবে সবার মধ্য থেকে আলাদা করা যায় দিনারের চরিত্রগুলো।
শুধু ওয়েবেই নয়, সম্প্রতি তিনি প্রশংসিত হচ্ছেন ‘বীরত্ব’ সিনেমায় মুসা চৌধুরী চরিত্র করে। এই প্রথম সিনেমায় প্রধান খলচরিত্রে দেখা গেল তাঁকে। একের পর এক সিরিজ ও সিনেমায় বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় প্রসঙ্গে দিনার বলেন, ‘আমি বলতে পারব না কীভাবে চরিত্রগুলো আলাদা হয়। এটা আসলে পরিচালক আমাকে দিয়ে করিয়ে নেন। আমি ভিন্ন চরিত্র, লুকের মধ্যে ডুবে থাকতে পছন্দ করি। চরিত্রের অভিনয়ের সুযোগ থাকলে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিই। এটা হয়তো আমার ডেডিকেশন।’
পরিকল্পনা একটাই
সারা জীবন পরিকল্পনাহীনভাবে এগিয়েছেন দিনার। কখনোই ভাবেননি, এটা করতে হবে, সেটা করতে হবে। ভাবনা ছিল না কাজ নিয়েও। যখন যে চরিত্র পেয়েছেন, শতভাগ দিয়ে কাজ করেছেন। ‘আমাকে অনেক বড় কিছু হতে হবে, ভাবিনি। যখন যা ভালো লেগেছে, তা–ই করেছি। একটা সময় ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশা থেকে অন্য পেশায় যেতে চাইছিলাম। হয়তো অন্য কিছু করতাম। কিন্তু তখন আমি কোনো পেশাই খুঁজে পাইনি। তবে এখন আমার একটাই পরিকল্পনা, আমৃত্যু ভালো কাজ করতে চাই,’ বলেন ইন্তেখাব দিনার।