‘এ ধরনের গল্পে সাধারণত ধাক্কা খেয়ে আমরা গল্পের বাইরে চলে আসি’
ওটিটিতে মার্ডার মিস্ট্রি ঘরানার সিরিজ কম হয়নি। তবে মার্ডার মিস্ট্রির সঙ্গে সায়েন্স ফিকশনের মিশেলে নির্মিত বাংলা কনটেন্ট সেভাবে দেখা যায়নি। ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকির নতুন সিরিজ ‘কালপুরুষ’ দর্শককে সেই নতুনত্বের স্বাদ দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার মুক্তির পর থেকেই অন্তর্জালে সিরিজটির প্রশংসায় সরব অনেক দর্শক।
ক্রিপটিক ফেইট ব্যান্ডের ভোকালিস্ট শাকিব চৌধুরী নিয়মিত দেশি-বিদেশি কনটেন্টের রিভিউ করেন। নিজের ফেসবুকে সিরিজটি নিয়ে লিখতে গিয়ে ‘কালপুরুষ’-এর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি।
এটিকে বাংলাদেশের ‘জনরা ফিকশনে এক নতুন বেঞ্চমার্ক’ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন তিনি। ‘গল্পটা অনেক সাহসী। সালজার রহমান আপনাকে বয়ে নিয়ে যাবে এ জগতের জঘন্যতম এক খুনের কাহিনি থেকে একটা বিজ্ঞান কল্পজগতের কাহিনিতে। কিন্তু যেহেতু সে অনেক যত্নসহকারে আপনাকে নিয়ে যাবে, তাই কোনো ধাক্কা খাবেন না। এই কাজটা খুবই কঠিন। এ ধরনের গল্পে সাধারণত ধাক্কা খেয়ে আমরা গল্পের বাইরে চলে আসি। সেটা আমাদের দেশি গল্প হোক অথবা হোক হলিউডি। কিন্তু সালজারের দক্ষ লেখা ও ডিরেকশনের কারণে এই স্থানান্তর হয়েছে খুবই স্বচ্ছন্দে।’ এভাবেই ‘কালপুরুষ’ নিয়ে লিখেছেন শাকিব। একই সঙ্গে তিনি সিরিজটির অভিনয়, আবহ সংগীত, সংলাপেরও তারিফ করেছেন। সিরিজটির রেটিং তিনি ১০–এ ৯ দিয়েছেন। তবে শাকিব মনে করেন, একদম শেষের দিকে এসে কাহিনির মান একটু পড়ে গেছে।
সিরিজটির প্রশংসা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের ইউটিউবাররাও। ‘অরিত্রস জ্ঞান’ ইউটিউব চ্যানেলের অরিত্র ব্যানার্জি ‘কালপুরুষ’ নিয়ে যে রিভিউ প্রকাশ করেছেন, তার শিরোনাম ‘টাইম ট্রাভেল নিয়ে বাংলার প্রথম কাজ’।
রিভিউয়ে তিনি বলেন, ‘সিরিজটি দর্শককে পর্দায় আটকে রাখে, এমনভাবে এখানে সায়েন্স ফিকশনের ধারণা ও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, যার সঙ্গে সাধারণ দর্শকেরা সহজেই একাত্ম হতে পারেন।’ তবে অরিত্র বিশেষভাবে সিরিজটির সম্পাদনা ও নির্দেশনার প্রশংসা করেছেন। তাঁর ভাষ্যে, ‘এখানে ঘটনার সঙ্গে মিলিয়ে সম্পাদনা করা হয়েছে। পুলিশ যখন তদন্তে সক্রিয় হয়, তখন সম্পাদনাটাও হাইপার অ্যাকটিভ হয়ে যাচ্ছে; একের পর এক ইন্টার কাট হচ্ছে। আবার পুলিশ যখন ধীরগতিতে এগোয়, সম্পাদনার গতিও ধীর হয়ে যায়।’ চঞ্চল চৌধুরী ও এফ এস নাঈমের মধ্যকার দৃশ্যের সম্পাদনারও প্রশংসা করেছেন তিনি। সিরিজটি তাঁকে সত্যজিৎ রায়ের ছোটগল্প পড়ার স্বাদ দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন অরিত্র। জনপ্রিয় এই ইউটিউবার মনে করেন, এটা এমন একটা সিরিজ, যেটার পরের সিজন হওয়া উচিত।
কলকাতার আরেকটি ইউটিউব চ্যানেল ‘আর্টিস্টিক সেভেনথ সেন্স’। এই চ্যানেলের সমালোচক সাগরনীল মনে করেন, সিরিজটিতে এফ এফ নাঈমের পারফরম্যান্স তাঁর ‘কারাগার’-এর অভিনয়কেও ছাড়িয়ে গেছে। এ ছাড়া নাঈম ও তানজিকা আমিন দম্পতির রসায়নও ছুঁয়ে গেছে তাঁকে। তবে সাগরনীলের প্রথম তিন-চার পর্ব খুব ভালো লাগলেও পরের পর্বগুলো ততটা লাগেনি।
চিত্রনাট্যকার ও সমালোচক মামুনুর রশীদ তানিমের কাছেও ভালো লেগেছে ‘কালপুরুষ’। ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘প্রশংসা করার মতো অনেক ব্যাপারই এই সিরিজে আছে। প্রথমত যদি বলি, ‘কালপুরুষ’ ভালো হোক কি মন্দ হোক; সেটার বিচার এখানকার (বাংলাদেশি কনটেন্ট) নিরিখে করতে হয়নি। এটা দর্শক হিসেবে বড় স্বস্তি!’ নিজের সমালোচনায় তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমি অভিভূত হয়েছে মিস্ট্রি-থ্রিলার, পুলিশি তদন্তের ড্রামা ও হাই কনসেপ্ট সাই-ফাইয়ের পাশে সমতা রেখেই কালপুরুষ যেভাবে একটা চরিত্রনির্ভর ড্রামা হয়ে উঠেছে।’
পরিচালক সালজার রহমানের আলাদা প্রশংসাও করেছেন তানিম। তিনি লিখেছেন, ‘সালজার রহমানের জনরা সিনেমা নিয়ে যে ভালো বোঝাপড়া আছে, তা চিত্রনাট্যের পাশাপাশি ভিজ্যুয়ালেও বোঝা যায়। গল্পের একটা আলাদা মেজাজ ও আলাদা দুনিয়া তৈরি করা হয়েছে। সাই-ফাইয়ে যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
অরিত্রর মতো তানিম ‘কালপুরুষ’-এর দ্বিতীয় সিজন চেয়েছেন। এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে এই প্রতিবেদককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ‘কালপুরুষ’-কে বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি করার ইঙ্গিত দিয়েছিল সিরিজটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো পরের সিজনের ঘোষণা আসেনি।
সালজার রহমানের পরিচালনায় সিরিজটিতে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী, এফ এস নাঈম, তানজিকা আমিন, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, ইমতিয়াজ বর্ষণ, প্রিয়ন্তী উর্বী, সুষমা সরকার, রেজওয়ান পারভেজ, জান্নাতুল মাওয়া লাজুকসহ আরও অনেকে। কিছুদিন আগেই ঘটা করে ঘোষণা দেওয়া হয়, আগামী তিন বছর প্রযোজনা সংস্থা ফিল্ম সিন্ডিকেট চরকির জন্য নির্মাণ করবে ১০টি সিরিজ। ‘কালপুরুষ’ সেই ১০ সিরিজের একটি।