শুধু ‘কারাগার’ নিয়েই ছিলাম
গত মাসে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচইয়ে মুক্তি পায় ওয়েব সিরিজ কারাগার। সিরিজে ডিবি কর্মকর্তা আশফাক চরিত্রে অভিনয় করে আলোচনায় এসেছেন এফ এস নাঈম। এই সিরিজসহ নানা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
প্রশ্ন :
‘কারাগার’ নিয়ে কেমন প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন?
পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাংলাভাষী দর্শকদের কাছ থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি। কয়েক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশের পত্রপত্রিকাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আমাকে নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে। মানুষ আমাকে এত ভালোবাসে দেখে আমার ভীষণ ভালো লাগছে।
প্রশ্ন :
সিরিজে যুক্ত হলেন কীভাবে?
ফিল্ম নোয়্যার ও সিন্ডিকেট যাকে নিয়ে কাজ করে, তার ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে গবেষণা করে। ওরা আমাকে ফোন করার পর মিটিংয়ে গিয়ে দেখি আমার ক্যারিয়ারের উল্লেখযোগ্য কাজের তালিকা তাদের কাছে আছে। আমি তো অবাক। তারা সিরিজের আমার চরিত্র সম্পর্কে ব্রিফ করল, পরে কাজের সঙ্গে যুক্ত হলাম।
প্রশ্ন :
আশফাক চরিত্রে নিজেকে তৈরি করলেন কীভাবে?
চরিত্র তৈরির ক্ষেত্রে প্রথমে যেটা দরকার, পাণ্ডুলিপি। বেশ কয়েকবার পড়তে হয়েছে। পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে আমার মনে হয়েছে, এ রকম একটি চরিত্র করতে ওয়াটার লেভেলে বসবাস করতে হবে। মানে নিউট্রাল জোনে থাকতে হবে। ডিরেক্টর যেভাবে বলবেন, সেভাবে করতে পারলেই কাজটা খুব সুন্দর হবে। সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক প্রস্তুতিও ছিল—আশফাক চরিত্রটি এভাবে ভাবে, এভাবে কাজ করে। সেটা নিয়ে নিজের একটা অনুশীলন ছিল। অনেক বেশি কথোপকথন ছিল ডিরেক্টর শাওকির সঙ্গে। আশফাক চরিত্রটি করার ক্ষেত্রে তিনজন মানুষকে কৃতিত্ব দিতে চাই—নির্মাতা সৈয়দ আহমেদ শাওকি, সিরিজের গল্পকার ও চিত্রনাট্যকার নেয়ামত উল্যাহ মাসুম ও সহশিল্পীদের মধ্যে অন্যতম ইন্তেখাব দিনার। আমার কোনো কৃতিত্ব নেই।
প্রশ্ন :
পর্দায় ইন্তেখাব দিনারের সঙ্গে আপনার রসায়ন কীভাবে জমে উঠল?
দিনার ভাইয়ের সঙ্গে রসায়ন নয়, তাঁর কারণে সব সময় আতঙ্কে থাকতাম। তিনি এত ভালো অভিনয় করেন, একটু এদিক–ওদিক হলেই আমার অভিনয়টা বাজে লাগবে। দিনার ভাই, চঞ্চল ভাইয়ের মতো বড়মাপের অভিনয়শিল্পীরা নিজেদের এত সহজ করে ফেলেন যে সহশিল্পীরা সহজভাবে কাজটা করে ফেলতে পারে।
প্রশ্ন :
মনস্তাত্ত্বিক প্রস্তুতির বাইরে শারীরিক প্রস্তুতিও ছিল…
চরিত্র নিয়ে পরিকল্পনার সময় ফিলোসফিক্যাল ডেভেলপমেন্ট হয়ে গেলে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে ভাবনা শুরু হয়। মনে হয়েছিল, আমি অনেক বেশি ফিট। কিন্তু আশফাক তো খুব সচেতন না, ফোকাস না। চরিত্রটির যে নিজের প্রতি সচেতন থাকবে, তা–ও না। সে অলস, তার বড় কোনো চাওয়া–পাওয়া নেই, স্বপ্ন নেই। সে কারণেই শাওকির সঙ্গেই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলাম, ওজন বাড়াব। তাহলে চরিত্রটি আরও বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হবে। শাওকি বললেন, চেষ্টা করেন। মোটামুটি বিশ্বাসযোগ্য না হলে আপনাকে আবার কমাতে হবে। এই সিরিজে যুক্ত হওয়ার পর আমি কোনো কাজই করিনি, শুধু কারাগারই করেছি। এটা একটা বড় প্রস্তুতি।
প্রশ্ন :
অন্য কোনো কাজে যুক্ত হওয়াটা তো ঝুঁকিও বটে...
আমার প্রেরণা সিরিজের চিত্রনাট্য ও টিম। পুরো টিমটা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। তারা তাদের কাজের ব্যাপারে শতভাগ সচেতন ও শতভাগ পেশাদার। আমি এমন একটি চরিত্র পাওয়ার পর যদি শতভাগ চেষ্টা, পরিশ্রম না করি; তাহলে ক্ষতিটা নিজেরই হবে। সেটাকে আমি নষ্ট করে ফেলব, সেটা ঠিক হবে না। এটা অসততা হবে।
প্রশ্ন :
ওটিটি অনেকেরই কাজের ক্ষেত্র বাড়িয়েছে।
অর্থ খরচ করে দর্শকেরা ওটিটি দেখছে। দর্শকেরা গল্পের বিষয়, পরিবেশনা, নির্মাণ—সব মিলিয়ে দর্শকরা বিনোদন নিতে চায়। একটি গল্প পূর্ণাঙ্গভাবে তুলে আনতে অনেকগুলো চরিত্র কাজ করে। সেই চরিত্রগুলোতে যখন যে পারফরমারকে দরকার, সেই পারফরমারকে লাগবে—এই অনুশীলনটা ওটিটি করে দিয়েছে। আমাদের দেশে ভালো ভালো অভিনেতা আছেন। সুযোগ পেলে অচিরেই ভালো কিছু প্রডাকশন দেখতে পাব। ওটিটিতে কেউ টাকা দিয়ে ফালতু জিনিস দেখতে চাইবে না। দর্শকেরা সচেতন, সে কারণেই একের পর এক আমাদের ওটিটি মাধ্যমগুলোতে ভালো ভালো প্রডাকশন হচ্ছে। শুধু হইচই না, চরকি যেসব কাজ করছে; প্রতিটি কাজ দর্শকেরা মুগ্ধ হয়ে দর্শক দেখছেন।
প্রশ্ন :
ওটিটিতে কাজ নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?
পরিকল্পনার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, গল্প ও টিম পাওয়া। মন ভরে কাজ করতে পারব, এমন গল্প ও টিম খুঁজছি। আমি কাজ করতে ভালোবাসি। মন দিয়ে কাজ করাটাই আমার পরিকল্পনা।