হইচই ফেলে দেওয়া সিরিজটি কেন সব মা-বাবার অবশ্যই দেখা উচিত
সন্তানের শূন্য বিছানা, ঘর খালি। ডুকরে কেঁদে ওঠেন বাবা; তাঁর হাহাকার চলতেই থাকে। শেষের এ দৃশ্যটি দেখার আগেই সিরিজটির সঙ্গে জুড়ে গেছেন আপনি, পর্দায় বাবার কান্না তাই আপনাকেও ছুঁয়ে যেতে বাধ্য। শেষ করার পরও অনেক দিন ধরেই সিরিজটির কথা মনে পড়বে, চরিত্রগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন সংলাপও আপনাকে তাড়া করে ফিরবে; কে জানে হয়তো জাগিয়ে তুলবে অপরাধবোধও। সিনেমা-সিরিজের খোঁজখবর যাঁরা রাখেন, এতক্ষণে হয়তো বুঝে গেছেন হচ্ছিল ‘অ্যাডোলেসেন্স’-এর কথা। ১৩ মার্চ নেটফ্লিক্সের মুক্তির পর কার্যত সারা দুনিয়ায় ঝড় তুলেছে চার পর্বের মিনি সিরিজটি। স্ট্রিমিংয়ে নতুন রেকর্ড গড়েছে, অন্তর্জালে ঢুঁ মারলেই চোখে পড়ছে ‘অ্যাডোলেসেন্স’ নিয়ে এন্তার লেখা। কিন্তু এত কিছু না হলেও সিরিজটির গুরুত্ব এতটুকু কমত না। নির্মাতারা বিষয় হিসেবে এমন কিছুকে বেছে নিয়েছেন, যার সঙ্গে সারা দুনিয়ার মানুষ আরও নির্দিষ্ট করে বললে মা-বাবারা নিজেদের মেলাতে পারেন। কিন্তু কী এমন আছে এই সিরিজে? কেন সমালোচকেরা একবাক্যে মেনে নিচ্ছেন, ‘অ্যাডোলেসেন্স’ সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম সেরা সিরিজ?
একনজরে
সিরিজ: ‘অ্যাডোলেসেন্স’
ধরন: ড্রামা
পর্বসংখ্যা: ৪
রান টাইম: ৫১-৬৫ মিনিট
স্ট্রিমিং: নেটফ্লিক্স
ক্রিয়েটর: জ্যাক থোর্ন ও স্টিফেন গ্রাহাম
অভিনয়ে: স্টিফেন গ্রাহাম, ওয়েন কুপার, অ্যাশলি ওয়ালটারস
১৩ বছরের কিশোর জেমি মিলার তারই এক সহপাঠীকে খুনের দায়ে গ্রেপ্তার হয়। বিশাল এক বাহিনী নিয়ে বাড়িতে রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অভিযোগ যে ভয়াবহ, জেমি ছুরি দিয়ে নৃশংসভাবে সহপাঠী কেটিকে খুন করেছে! জেমি তো বটেই, ওর মা-বাবা, বড় বোন সবাই হতবাক। থানায় নেওয়ার পর জেমি অভিযোগ অস্বীকার করে। তাঁকে সহায়তার জন্য আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়, আসেন মনোবিদ। জেমি কি সত্যিই খুন করেছে—এমন প্রশ্ন নিয়ে এগিয়ে যায় গল্প।
গল্প শুনে আবার ভাববেন না এটি থ্রিলার, জেমি খুন করেছে কি না, সেটা এই সিরিজে আদৌ গুরুত্বপূর্ণ নয়। আসলে সে কী করেছে, শুরুর কিছুক্ষণ পর সেটা আপনিও বুঝে যাবেন। আবার কিশোর গ্যাং নিয়ে পুলিশি তদন্ত সিরিজও এটা নয়। এই গল্পের পরতে পরতে রোমাঞ্চ নেই, নেই ধাক্কা দেওয়ার মতো চমকও।
‘অ্যাডোলেসেন্স’ ড্রামা ঘরানার সিরিজ, ‘জনপ্রিয়’ হওয়ার মতো অনেক কিছু না থাকার পরও এতে এমন সব রসদ আসে, যা আপনাকে নাড়িয়ে দেবে। তদন্ত বলতেও তেমন কিছু নেই, একটা সময়ের পর তো পুলিশদের আর দেখানোই হয় না। সিরিজটিতে আসলে এই সময়ের তরুণদের মনোজগতে ঢুকে পুরো পৃথিবীকেই বার্তা দিতে চেয়েছেন নির্মাতারা। গল্পটি যুক্তরাজ্যের প্রেক্ষাপটে হলেও সারা পৃথিবীর সব প্রান্তের মানুষকেই ছুঁয়ে যায়। কারণ আজকাল তো পৃথিবীতে দেশ আসলে একটাই, ‘ইন্টারনেট’, আর গ্রাম বলে সেটাও একটা—‘ইনস্টাগ্রাম’।
আলফা মেল, উগ্র পুরুষত্ব, নারীবিদ্বেষ; সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার পর এই শব্দগুলোও বারবার ব্যবহৃত হয়ে আসছে। গত কয়েক বছরে নির্মিত অনেক সিনেমা (‘কবির সিং’, ‘অ্যানিমেল’) এই বিতর্ক আরও উসকে দিয়েছে। মত-দ্বিমত আছে, তবে মোটাদাগে তরুণেরা এখন যে ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামনির্ভর জীবন যাপন করেন, সেটা বোধ হয় বলাই যায়। বয়ঃসন্ধিকালে ইনস্টাগ্রামে মডেলের আবেদনময়ী ছবি আর ইনফ্লুয়েন্সারদের ভুল বয়ানের ফাঁদ কজনই বা এড়িয়ে যেতে পারে?
এই সিরিজে জানা যায়, জেমি বেছে বেছে মডেলদের অনুসরণ করত, তাদের আবেদনময় ছবি দেখে সময় কাটাত, তখন চমকে উঠতে হয়। ১৩ বছরের জেমি যখন ইনস্টাগ্রামে মডেলদের ছবি দেখে যৌনতা নিয়ে ভাবে, সহপাঠীর টপলেস ছবি দেখে সবাই যখন তাকে বিদ্রূপ করছে; তখন সেটার সুযোগ নিয়ে সেই সহপাঠীর কাছাকাছি যেতে চায়, তখন বিস্ময়ের ঘোর কাটে না। তৃতীয় পর্বে মনোবিদের কাছে জেমি বয়ান দেয়, সে প্রেম করতে চায়, সুযোগ পেলে প্রেমিকার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতেও ইচ্ছুক, তখন যেন ঘোর কাটে না। কিশোরের কথা শুনে দুঁদে মনোবিদও চমকে যান। শান্ত জেমি যখন তার মতের বিরুদ্ধে গেলেই চোখের পলকে বদলে যায়, সহিংস হয়ে ওঠে, তখন নিজের চোখকেও যেন বিশ্বাস হয় না।
সিরিজে বারবার এসেছে আলাফা মেল, উগ্র পৌরুষত্ব আর ইনসেল কালচার।
সিরিজের মূল সুরই বলা যায়, ইনসেল সংস্কৃতির প্রভাব তুলে ধরা। ইনসেল সংস্কৃতি বিষয়টা হলো, আকাঙ্ক্ষা থাকার পরেও কেউ যখন নিজের সঙ্গী খুঁজে পায় না, তখন তাঁকে বিদ্রূপ করা হয়, মন আরও বিষিয়ে ওঠে। বিদ্রূপের শিকার হওয়ার পর সে আরও বড় অপরাধে যুক্ত হওয়ার হতে পারে। অনেকেই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিজেদের ইনসেল হিসেবে ঘোষণা করে, এদের বেশির ভাগই পুরুষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর ইনস্টাগ্রাম যেন হয়ে উঠেছে ইনসেলের এক গুপ্ত ভান্ডার। অনেক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আছে যেখানে ক্রমাগতভাবে নারীবিদ্বেষ ছড়ানো হয়, ছড়ানো হয় বর্ণবাদ। জেমি আর তাঁর বন্ধুরাও আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে এই ইনসেল সংস্কৃতির জালে। সে ধরেই নিয়েছে, প্রেমিকাকে আকৃষ্ট করার মতো যথেষ্ট যোগ্যতা তার নেই। এই যে নিজেকে ‘অযোগ্য’ ভাবা, এটা এমন প্রবলভাবে জেঁকে বসে, তখন সেই কিশোর যা খুশি করতে পারে।
পুরুষত্ব নিয়ে ১৩ বছরের কিশোরের ধারণা বোঝার চেষ্টা করেন মনোবিদ ব্রিয়নি। পুরুষ ও নারীকে নিয়ে জেমির ধারণা একটু একটু করে পেঁয়াজের খোসা ছাড়ানোর মতো করে তুলে আনেন মনোবিদ। এই টক্সিক সোশ্যাল মিডিয়ার যুদ্ধে যে টিনএজার নিজেকে আগলি মনে করে, যে মনে করে নারীর সঙ্গে তার ‘কুশ্রী’ চেহারা নিয়ে; সে তখনই অগ্রসর হতে পারবে, যখন মেয়েটি সবচেয়ে অসহায়; তখন নির্মাতা দর্শকদের কার্যত আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দেন।
মনোবিদের সঙ্গে জেমির এই সেশনটি নিয়েই সিরিজের তৃতীয় পর্ব। এই পর্ব নিয়েই সবচেয়ে বেশি কথা হচ্ছে। এই পর্ব জেমির মতো দর্শকদের মনোজগতেও নাড়িয়ে দিয়েছেন নির্মাতা। মনোবিদ তাকে সময় দিচ্ছে, তার মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে শুনছে; বয়ঃসন্ধিতে দাঁড়িয়ে জেমির জীবনে একজন নারীর এতটা কাছাকাছি আসার সুযোগ আর কখনো আসেনি। সে কী বলবে, কী করবে বুঝতে পারে না। জেমি কখনো ব্যঙ্গ করে, কখনো আপত্তিকর ভাষা ও বডি ল্যাংগুয়েজ প্রয়োগ করে নিজের ক্ষমতা প্রমাণ করতে চায়। এই প্রবণতা জেমি শিখল কোথায়?
সেই ছোটবেলায় ফুটবলে ভালো করতে না পারায়, বাবার চোখে লজ্জা দেখেছিল, সেই লজ্জা আর অপমানের দাগ এতটাই গাঢ় যে সে এখনো অপমানিত হলে নিজেকে ডিফেন্ড করতে শেখেনি, কেবল ভেতরে ভেতরে রাগ পুষে রাখতে শিখেছে। রেগে গেলে জেমি এবং তার প্রজন্ম জানে কেবল আক্রমণ করতে। ফুটবল ইংল্যান্ডে খুবই জনপ্রিয়, সব স্কুলবালকই বোধ হয় ফুটবলার হতে চায়। কিন্তু খেলার প্রতিভা কি আর সবার থাকে? সেদিন যদি বাবা যদি ফুটবল মাঠে জেমির ‘ব্যর্থতা’র জন্য লজ্জা না পেয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন, হয়তো জেমির এই পরিণতি হতো না।
সিরিজের আরেকটি দৃশ্যে এক পুলিশ সদস্যকে বলতে শোনা যায়, ‘সব শিশু চায় তাকে “ঠিক আছে” বলার কেউ থাকুক’, তখন নির্মাতার বার্তা আরও স্পষ্ট হয়। তৃতীয় পর্বে জেমি যখন শোনে মনোবিদ ব্রিয়নি আর আসবে না, সে ভেঙে পড়ে।
সে চিৎকার করতে থাকে, বারবার জিজ্ঞেস করে, ‘তুমি কি আমাকে পছন্দ করেছ?’ যেন এই উত্তরের ওপর তার বেঁচে থাকা, তার অস্তিত্ব নির্ভর করছে। ‘ডু ইউ লাইক মি’ যেন একটা হাহাকার। চেহারা নিয়ে, অন্যের কাছে নিজেকে আকর্ষণীয় লাগা না নিয়ে এই যে কিশোরের আক্ষেপ, সেটা দর্শকদের আরও অনেক দিন তাড়া করে ফিরবে।
‘অ্যাডোলেসেন্স’-এ এসেছে ইনফ্লুয়েন্সারের কথা। আছে বিতর্কিত ইনফ্লুয়েন্সার অ্যান্ড্রু টেটের প্রসঙ্গ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইনফ্লুয়েন্সাররা যে কীভাবে বয়ঃসন্ধিকালের বয়সের কিশোরদের মনোজগতে প্রভাব ফেলছে, সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন নির্মাতা।
সন্তানদের হাতে ফোন তুলে দেওয়া, মা-বাবার সময় না দেওয়া, কিশোর বয়সে বেড়ে ওঠার দিনগুলোতে একাকিত্ব উঠে এসেছে ‘অ্যাডোলেসেন্স’-এ। মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার মতো যখন কেউ থাকে না, তখন কিশোরেরা ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে পড়ে, ইনফ্লুয়েন্সারের প্রেরণা আর সহপাঠীর সঙ্গে মিলে তৈরি করে ইনসেলের বিষময় পৃথিবী। চতুর্থ পরে জেমির বাবাকে আক্ষেপ করতে শোনায়, জেমি আগে তাঁর সঙ্গে খেলত, দুর্দান্ত ছবি আঁকত; উচ্ছল এক শিশু ছিল। বাবার অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হতে থাকলে নতুন কাজ নেন তিনি। সেখানে চাপ বড্ড বেশি, ভোর ছয়টায় বেরিয়ে যান, ফিরতে ফিরতে রাত আটটা।
জেমিকে সময় দিতে পারেন না, জেমিকে তখন কিনে দেওয়া হয় কম্পিউটার। বাবার আশা ছিল, কম্পিউটার পেয়ে জেমি আরও ভালো আঁকা শিখবে। তবে ফোন, কম্পিউটারপ্রাপ্তি বাবার অনুপস্থিতি মিলিয়ে জেমি নিজের স্বপ্নের জগৎ থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। বাবাকে আক্ষেপ করে বলতে শোনা যায়, আমরা ওকে তৈরি করেছি, আবার আমরাই আমাদের মেয়ে লিসাকেও তৈরি করেছি, তাহলে গন্ডগোলটা কোথায়? স্ত্রী বলেন, ছেলে তোমার মতো মেজাজ পেয়েছে, কিন্তু তার মনের মধ্যে কী চলছে, বন্ধ ঘরে কী করছে, কী করে বুঝব?
গল্প, চিত্রনাট্যের সঙ্গে এই সিরিজের সবচেয়ে বড় সম্পদ অভিনয়। যাকে যে চরিত্র দেওয়া হয়েছে, তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। জেমির বাবার চরিত্রে স্টিফেন গ্রাহাম অবিশ্বাস্য অভিনয় করেছেন, তিনি এই সিরিজের সহস্রষ্টাও বটে। ছেলেকে খুনের দায়ে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ক্ষোভে ফুঁসতে থাকা, শেষের দিকে অসহায়ত্বের প্রকাশ; নিখুঁতভাবে তুলে এনেছেন তিনি। তবে সবচেয়ে বেশি বলতে হয় জেমির চরিত্রে ওয়েন কুপারের অভিনয়। জীবনে প্রথমবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েই সে যা করেছে, পর্দায় না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। অসহায়ত্ব, একাকিত্ব, ক্ষোভ আর দ্বিধায় ভুগতে থাকা জেমির সার্থক রূপায়ণ। তৃতীয় পর্বে মনোবিদের সঙ্গে সেশনে যে যা এক্সপ্রেশন দিয়েছে, শিউরে উঠতে হয়। দুই তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা, জেমির সহপাঠী, স্কুলশিক্ষক—সবাই যে যার চরিত্রে যথাযথ।
‘অ্যাডোলেসেন্স’-এর প্রতিটি পর্ব নির্মিত হয়েছে প্রায় ওয়ান টেকে। একেকটি চরিত্রকে অনুসরণ করে শুরু হয় সিরিজ, তাঁর জার্নির সঙ্গে ক্যামেরাও চলে। নির্মাতা সিরিজটি এতটাই বাস্তবসম্মতভাবে বানিয়েছেন যে দেখার সময় মনে হয়, আপনি বোধ হয় ঠিক পাশেই আছেন। সিরিজের বার্তা এতটাই শক্তিশালী যে ‘অ্যাডোলেসেন্স’-এর কারিগরি দিক নিয়ে তেমন কথা হচ্ছে না।
চার পর্বের সিরিজটির প্রথম পর্ব জেমিকে গ্রেপ্তারের পর থানায় যা হয় সেটার বয়ান, দ্বিতীয় পর্ব পুরোটাই করা হয়েছে জেমির স্কুলে। তৃতীয় পর্ব মনোবিদের সঙ্গে সেশন আর শেষ হয়েছে জেমির পরিবারের অবস্থা দেখানোর মধ্য দিয়ে। দ্বিতীয় পর্বে যখন জেমির স্কুল দেখানো হয়, তখন মা-বাবার উদাসীনতার সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থার দুরবস্থা সামনে চলে আসে। স্কুলে সবাই ফোন ব্যবহার করে, এক শিক্ষার্থী খুন হয়ে গেছে অথচ সেসব নিয়ে কারও যেন হেলদোল নেই। শিক্ষার্থী-শিক্ষক সবাই যেন নীরব দর্শক।
নৃশংস খুনের ঘটনা নিয়ে যে সিরিজ, সেখানে কিন্তু কোনো রক্তপাত দেখানো হয়নি।
একবারও খুনের ঘটনা দেখানো হয়নি, কীভাবে কেটি মারা গেল, সেটাও নেই। কেন খুন করল, সে প্রশ্নেরও যথাযথ উত্তর নেই, সে উত্তর তো আসলে পাওয়াই সম্ভব না। নির্মাতা বরং কেন-এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে দর্শকদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এই সময়ের বয়ঃসন্ধিকালীন বয়সের কিশোরের মনোজগতে ঢুকে পড়ার। সন্তানের এত কাছে থেকেও হয়তো সে দুনিয়ার কিছুই আপনার জানা নেই। সিরিজ শেষে হয়তো জেমির বাবার আক্ষেপ, হতাশা আর অসহায়ত্ব আপনাকেও গ্রাস করে। অবচেতন মনে চলে আসে, ‘মা-বাবা হিসেবে আমরা কোথায় ভুল করেছি’—এ প্রশ্নটাও।