বাস্তবের গল্প যখন পর্দায়
অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে যাওয়া এক তরুণীর জীবনে ঘটে যাওয়া সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি ‘বাবা, সামওয়ানস ফলোয়িং মি’ মুক্তি পাচ্ছে আজ। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বিঞ্জে দেখা যাবে শিহাব শাহীন পরিচালিত ওয়েব ফিল্মটি। এটি পরিচালকের চার নম্বর ওয়েব ফিল্ম।
দীর্ঘ সময় ধরে নাটক, টেলিছবি বানানো এই পরিচালক ওটিটিতে বানিয়েছেন একাধিক সিরিজ। তাঁর প্রথম ওয়েব ফিল্ম ‘দ্বিতীয় কৈশোর’। এরপর ‘যদি কিন্তু তবুও’ ও ‘মায়াশালিক’ বানিয়েছেন। এবার অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে নিজের মেয়ের জীবনে ঘটে যাওয়া একটি সত্য ঘটনাকে ‘বাবা, সামওয়ানস ফলোয়িং মি’–এর মাধ্যমে পর্দায় তুলে এনেছেন।
সিনেমায় নিজের জীবনের ঘটনা নিয়ে আসা নির্মাতাদের জন্য নতুন কিছু নয়। তবে কাকতালীয় ব্যাপার হলো ‘বাবা, সামওয়ানস ফলোয়িং মি’–এর ঘটনার সঙ্গে পরিচালক শিহাব শাহীন তো বটেই, অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিমের নিজের জীবনের ঘটনারও মিল আছে! এ ওয়েব ফিল্মটিতে বাবার চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন সেলিম।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘আমার মেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় সিডনি ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করে। পাশাপাশি চাকরিও করে। হঠাৎ একদিন রাতে মেয়ে আমাকে ফোন দিয়েছে। তখন আমি ঘুমাচ্ছিলাম। মেয়ে কাজ থেকে ফিরছিল। ফোন করে সে আমাকে বলল, “বাবা, কেউ একজন আমাকে ফলো করছে, তুমি আমার সঙ্গে কথা বলতে থাকো।” আমি কথা বলতে থাকলাম। ওই রাতে এত দূরের দেশে মেয়ের জন্য কার কাছে সাহায্য চাইব, বুঝতে পারছিলাম না আমি। খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। সেই ঘটনাকে ধরে গল্পটি বলার চেষ্টা করেছি। তাতে আরেকটু ফিকশনাইজড করে, আরও চরিত্র, ঘটনা এনে গল্পটাকে একটু নাটকীয় করার চেষ্টা করেছি।’
বাস্তবে একই রকম একটা ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলেন সেলিমের অস্ট্রেলিয়ায় পড়ুয়া মেয়ে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় এই অভিনয়শিল্পী বলেন, ‘২০১৯-২০ সালের দিকে আমার মেয়ে যখন অস্ট্রেলিয়ায় পড়ত, তখন ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে। শিহাব শাহীন যখন গল্পটা শোনাচ্ছিল, আর বলছিল, আমার মেয়ের জীবনে ঘটেছে। পত্রিকায় ছাপাও হয়েছে এই গল্প। আমি বললাম, কি বলো! আমার মেয়ের সঙ্গেও তো এমন ঘটনা ঘটেছে। সত্যিই একজন বাবার জন্য একটা বাজে অভিজ্ঞতা আছে। আমি বুঝতে পারছি তোমার আবেগটা। গল্পটা শোনার পর আমি কাজটা করতে সম্মত হই।’
কথায় কথায় সেলিম বলেন, ‘বাবা-মেয়ের এক রাতের ঘটনা পর্দায় তুলে ধরা হয়েছে। এটা অনেক কঠিন কাজ। একটা রাতের ঘটনা দেখাতে আমাদের চার রাত জেগে থাকতে হয়েছে। বেশ কঠিন এবং পরিশ্রমের কাজ করেছি। প্রোডাকশনের প্রত্যেকে কষ্ট করেছে।’
‘বাবা, সামওয়ান ফলোয়িং মি’ নিয়ে অনেক পরিকল্পনা করেছিলেন শিহাব শাহীন। চেয়েছিলেন এই ওয়েব ফিল্মে এমন একজন অভিনয়শিল্পীকে বাবার চরিত্রে পেতে, যাকে নিয়ে তাঁর দীর্ঘদিনের কাজ করার স্বপ্ন। সেই আফজাল হোসেনের সঙ্গে কথা বলে সব ঠিকঠাকও করে রেখেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ বাধা আসে সেই শিল্পীর অসুস্থতায়। পরে আফজাল হোসেনের পরিবর্তে পরে বাবা জাফর চরিত্রে অভিনয় করেছেন শহীদুজ্জামান সেলিম। অসুস্থতার কারণে শেষ পর্যন্ত এই ওয়েব ফিল্মে কাজ করাতে না পারায় পরিচালক হিসেবে থেকে গেছে আক্ষেপ। তবে এটাও বিশ্বাস করেন, শিগগিরই তা পূরণ হবেই।
শিহাব শাহীন জানালেন, অসাধারণ অভিনয় করেছেন শহীদুজ্জামান সেলিম। বাবা হিসেবে তাঁর জীবনে এমন একটি ঘটনা ঘটে যাওয়ায় আরও অনেক বেশি একাত্ম হতে পেরেছেন তিনি। পরিচালক বললেন, ‘সেলিম ভাই ব্রিলিয়ান্ট কাজ করেছেন। এই অর্থে বলছি, তাঁর জীবনে এ রকম একটা ঘটনা ঘটেছে। তাঁর মেয়েও অস্ট্রেলিয়ায় পড়ত।
ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছিল। আহত হয়েছিল। তাঁর জীবনেও এ রকম একটা বাজে সময় গেছে। লাইফ এক্সপেরিয়েন্স থাকায় গল্পের সঙ্গে ভালো রিলেট করতে পেরেছেন। কাজটা তাঁর জন্য সহজ হয়েছে। আমি যা চেয়েছি, তাই পেয়েছি। একজন বিপর্যস্ত বাবা দুঃসাহসী হয়ে যা করেন আর কি।’
পরিচালক আরও জানালেন, ছেলেমেয়ে বাইরে থাকলে দেশে বাবাদের কেমন লাগে, সেই ব্যাপার গল্পে তুলে ধরার চেষ্টা আছে।
ওয়েব ফিল্মটিতে মেয়ে বিজয়া চরিত্রে অভিনয় করেছেন তাসনিয়া ফারিণ। গল্পে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় লেখাপড়া ও চাকরি করেন। মোট ১০ দিনের শুটিংয়ে ওয়েব ফিল্মটির কাজ শেষ হয়েছে। আগস্টে শুটিং শুরু হয়। পাঁচ দিন হয় বাংলাদেশে ও পাঁচ দিন অস্ট্রেলিয়ায়। ফারিণের শুটিং অস্ট্রেলিয়ায় হলেও শহীদুজ্জামান সেলিমের শুটিং হয়েছে ঢাকায়।
ওটিটিতে মুক্তির আগে আজ ওয়েব ফিল্মের বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। ফিল্মটির অভিনয়শিল্পী, কলাকুশলী ও বিনোদন অঙ্গনের তারকা-পরিচালকের উপস্থিতিতে ঢাকার মহাখালীতে আজ সন্ধ্যায় প্রদর্শনীটি হবে বলে জানালেন পরিচালক।