‘ওমর’, প্রত্যাশার চেয়েও বেশি কিছু

‘ওমর’ সিনেমার দৃশ্য। চরকি

ন্যাশনাল জিওগ্রাফির ডকুমেন্টারি সিরিজের ইন্ট্রোর মতো শুরু হয় ‘ওমর’। প্রভাবশালী ব্যক্তি এহসান হক মির্জা ওরফে বড় মির্জা বসে আছেন তাঁর আলিশান গাড়িতে। শহরের একচ্ছত্র অধিপতি তিনি। গাড়ির সামনে বসা পিএস মতি মিয়া। কথিত আছে, মতি মিয়ার তেজ বড় মির্জার চেয়েও বেশি। এ যেন সূর্যের চেয়ে বালু গরম অবস্থা! তাঁর ছেলে ছোট মির্জার সঙ্গে পরিচয় হয় বিলাসবহুল হোটেল সিলভার মুনের বলরুমে।

একনজরে
সিনেমা: ওমর
স্ট্রিমিং: চরকি
জনরা: ক্রাইম, থ্রিলার
পরিচালক: মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ
অভিনয়: শরীফুল রাজ, নাসির উদ্দিন খান, শহীদুজ্জামান সেলিম, রোজি সিদ্দিকী, আয়মান শিমলা, এরফান মৃধা শিবলু, ফজলুর রহমান বাবু, আবু হুরায়রা তানভীর

সেখানে পানীয় হাতে ছোট মির্জা উপভোগ করতে থাকেন ‘ভাইরাল বেবি’র নাচ। এদিকে হঠাৎ ওমর নামের অচেনা এক ছেলে এসে ঝামেলা বাঁধাতে চেষ্টা করে ছোট মির্জার পিএস বদির সঙ্গে। বদি ছোট মির্জার বন্দুক হাতে ওমরকে গুলি করতে যায়। তবে সে যাত্রায় কোনো দুর্ঘটনা ছাড়াই বেঁচে যায় বদি।

তবে বদির আচরণ ভুলতে পারে না ওমর। গভীর রাতে সে ঢুকে ছোট মির্জার রুমে। সেখানে গিয়ে বদিকে শাসাতে থাকে সে৷ ছোট মির্জা সে ঘটনা দেখে গুলি করতে যান ওমরকে। বদি, ওমর আর ছোট মির্জার ধস্তাধস্তিতে হঠাৎ গুলি এসে লাগে ছোট মির্জার গায়ে। ঘটনাস্থলেই মারা যান ছোট মির্জা! ঘটনা ধামাচাপা দিতে বদি ওমরকে বাধ্য করে তাকে সাহায্য করতে। হোটেল থেকে গাড়িতে করে লাশ নিয়ে বের হয় দুজন।

‘ওমর’ সিনেমার দৃশ্য। চরকি

কিন্তু যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই রাত হয়। তারা সোজাসুজি গিয়ে পড়ে বড় মির্জার গাড়ির সামনে। তারপর শুরু হয় রুদ্ধশ্বাস এক যাত্রা! ওমর আর বদি কি লাশ লুকাতে পারে? নাকি ধরা পড়ে যায়? শেষ পর্যন্ত দেখার পরেও কি খুব চেনা চেনা লাগে কোনো ঘটনা?

‘ওমর’ সিনেমাটি দেখার পর মনে হয় সিনেমাটি খুব পরিচিত। কিন্তু ‘পরিচিতির ভিড়ে অনন্য’ বোধ হয় একেই বলে। টান টান উত্তেজনাপূর্ণ এ সিনেমার দুর্দান্ত গল্প আর হাস্যরসই সিনেমাকে মনে রাখার মতো করে তুলেছে।

‘ওমর’-এর প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করেছেন শরীফুল রাজ ও নাসির উদ্দিন খান। দুজন হাতে হাত মিলিয়ে শেষ দৃশ্য পর্যন্ত দুর্দান্ত অভিনয় করে গেছেন। তবে এ সিনেমার পার্শ্বচরিত্রদের কথা না বললেই নয়। গৃহকর্মী ‘ফুলি’ চরিত্রে আয়মান শিমলা অসাধারণ অভিনয় করেছেন। ‘ওমর’ বা ‘বদি’র চরিত্রের বাইরে ‘ফুলি’র কথা মনে থাকবে বহুদিন। এ ছাড়া শহীদুজ্জামান সেলিম, রোজি সিদ্দিকী, এরফান মৃধা শিবলুও ভালো অভিনয় করেছেন। ফজলুর রহমান বাবু ও আবু হুরায়রা তানভীর খুব কম সময়ের জন্য পর্দায় উপস্থিত থাকলেও তাঁদের উপস্থিতি ছিল প্রাণবন্ত।

‘ওমর’ সিনেমার দৃশ্য। চরকি

তবে আইটেম গানে দর্শনা বণিকের নাচের কথা আলাদাভাবে বলতেই হবে। নাচ ও তাঁর অভিব্যক্তি এতটাই মানিয়েছে যে এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল ‘ওমর’ বড় পর্দায় না দেখাটাই যেন একটা মস্ত এক ভুল!

‘ওমর’ সিনেমার নির্মাতা মোস্তফা কামাল রাজ। থ্রিলার সিনেমার প্রধান আকর্ষণ টান টান গল্প। আর গল্পটা সেভাবেই পর্দায় উপস্থাপন করতে নির্মাতা কোনো ছাড় দেননি। ক্রাইম, সাসপেন্স ও কমেডির মিশ্রণে ভালো একটি পরিবেশনা।

‘ওমর’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

গল্পের মোড়ে মোড়ে টুইস্টের কোনো কমতি ছিল না। যখনই মনে হচ্ছিল এই বুঝি শেষ, এই বুঝি ধরা পড়ল, তখনই ঘটনার মোড় অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন নির্মাতা। আবার এমন টান টান গল্পের মধ্যে হাস্যরস দর্শকের স্নায়ুকে আরাম দিয়েছে বারবার। পরক্ষণেই আবার তা ফিরিয়ে নিয়ে গেছে রোমাঞ্চকর সে যাত্রায়।

আরও পড়ুন

থ্রিল আর কমেডির এই মোক্ষম মিশ্রণ খুব কম থ্রিলার সিনেমাতেই পাওয়া যায়। এ ছাড়া কাহিনির সঙ্গে চরিত্র নির্মাণ, চিত্রগ্রহণ, স্থান নির্বাচনও মানানসই ছিল। তবে শেষ দৃশ্যে নির্মাতা ভণিতাহীন যে টুইস্ট রেখেছেন ‘ওমর’ যেন সেখানে আরেকবার মন জয় করে নেয়। তাই ‘প্রত্যাশার চেয়েও ভালো’, ‘ওমর’ দেখে এমন কথা বলাই যায়।