সমালোচিত হলেও কেন জনপ্রিয়তা পেল ‘মিসিং ইউ’?

‘মিসিং ইউ’–এর দৃশ্য। নেটফ্লিক্স

নতুন বছরের প্রথম দিন নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে লিমিটেড সিরিজ ‘মিসিং ইউ’। হারলান কোবানের উপন্যাস অবলম্বনে সিরিজটি বানিয়েছেন নির্মাতা ভিক্টোরিয়া আসারি-আর্চার। মুক্তির পর থেকেই সিরিজটি ঘিরে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। তবে মুক্তির ১১ দিন পেরিয়ে গেলেও সিরিজটি এখনো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নেটফ্লিক্সের সবচেয়ে বেশি দেখা সিরিজের তালিকায়।

একজন নিখোঁজ অধ্যাপককে খুঁজে বের করার কেস পায় ডিটেকটিভ ইন্সপেক্টর ক্যাট ডোনোভান (রোসালিন্ড এলেজার)। সাহসী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ একজন অফিসার ক্যাট। তবে ব্যক্তিজীবনে সে এখনো একা। বন্ধু একোয়া (ম্যারি ম্যালোন) ও স্টেসির (জেসিকা প্লামার) কথায় সে এক ডেটিং অ্যাপে যোগ দেয়। কিন্তু ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয় যখন ক্যাট তার প্রাক্তন প্রেমিক ও বাগ্‌দত্তা জশের (অ্যাশলে ওয়াল্টার্স) প্রোফাইল সেই অ্যাপে খুঁজে পায়।

একনজরে
সিরিজ: ‘মিসিং ইউ’
পরিচালক: ভিক্টোরিয়া আসারি-আর্চার
গল্প: হারলান কোবান
স্ট্রিমিং: নেটফ্লিক্স
পর্ব সংখ্যা: ৫
অভিনয়ে: রোসালিন্ড এলেজার, অ্যাশলে ওয়াল্টার্স, লেনি হেনরি, মার্ক ওয়ারেন, রিচার্ড আরমিটেজ, জেসিকা প্লামার, ম্যারি ম্যালোন

জশ কিছু না বলেই ১১ বছর আগে হারিয়ে যায় ক্যাটের জীবন থেকে। ক্যাট যখন জশের ব্যাপারে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে থাকে, তখনই অন্য আরেক তথ্য তার ভাবনার মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ক্যাট জানতে পারে, তার বাবার খুনি মন্টে লেবার্নে (মার্ক ওয়ারেন) ক্যানসারে আক্রান্ত, আর বেশি দিন বাঁচবে না। ক্যাট জানতে মারিয়া হয়ে ওঠে কেন মন্টে খুন করেছিল তার বাবা ক্লিন্ট ডোনোভানকে (লেনি হেনরি)। কিন্তু তা জানতে গিয়ে ঘটনা দ্রুত মোড় নিতে থাকে অন্যদিকে। ক্যাট কি পারে তার বাবার মৃত্যুরহস্য জানতে? নাকি ব্যক্তিজীবনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে ওঠে তার কর্মজীবন?

‘মিসিং ইউ’–এর দৃশ্য। নেটফ্লিক্স

‘হারলান কোবেনস শেল্টার’, ‘দ্য স্ট্রেঞ্জার’, ‘ফুল মি ওয়ান্স’-এর জনপ্রিয় এ সিরিজগুলো যাঁরা দেখেছেন, হারলান কোবেনের গল্প নিয়ে তাঁদের নতুন করে কিছু বলার নেই। তাঁর ১২টি উপন্যাস নিয়ে ইতিমধ্যেই সিনেমা বা সিরিজ বানানো হয়েছে। অতীতের অমীমাংসিত ঘটনা, রহস্যময় চরিত্র আর একের পর এক টুইস্ট; হারলার কোবেন বিখ্যাত তাঁর রোমাঞ্চকর ধারার গল্পের জন্যই। তাই রহস্য ও থ্রিলারের ভক্তদের কাছে তিনি জনপ্রিয়।

‘মিসিং ইউ’ সিরিজে ক্যাটের ব্যক্তিজীবনের সঙ্গে কর্মজীবন গল্প এগিয়ে গেছে একসঙ্গে। এখানে ক্যাট একের পর এক রহস্যের জট খোলার মাধ্যমে অতীতের নানান ঘটনা জোড়া লাগাতে থাকেন। ডিটেকটিভ ইন্সপেক্টর ক্যাট ডোনোভানের চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন রোসালিন্ড এলেজার। নিজের বাবা আর প্রাক্তন প্রেমিক; সম্পর্কের বাইরে গিয়ে ব্যক্তিজীবনের টানাপোড়েনের ঘটনা দেখানো হয়েছে এখানে।

‘মিসিং ইউ’–এর দৃশ্য। নেটফ্লিক্স

জীবন যতই এগিয়ে যায় আমাদের বেদনা ও ক্ষতি আমাদের সঙ্গেই থাকে, তা কখনো মুছে যায় না; দুর্দান্ত অভিনয়ের মাধ্যমে রোসালিন্ড সেটা ফুটিয়ে তুলেছেন সুচারুভাবে।
তবে শুধু টানপোড়নের মধ্যে গল্প সীমাবদ্ধ ছিল না। প্রতি পর্বে নতুন রহস্য আর একটু একটু করে সত্য ঘটনার প্রকাশ দর্শককে আটকে রাখে পর্দায়। একই সঙ্গে কেস সমাধান করার জন্য ক্যাটের উদ্যোগ ছিল পুরোদমে পেশাদার। কেসগুলোর অদ্ভুত চরিত্র গল্পে ভয় ধরানো এক আবহ তৈরি করতে পেরেছে।

রোমাঞ্চকর গল্প আর ব্যক্তিগত অনুভূতির মিশ্রণ ‘মিসিং ইউ’ সিরিজটি। গল্পের শুরু প্রথমদিকে একটু ধীরগতির হলেও দ্রুতই গল্প জমে ওঠে। এখানে সহায়ক চরিত্রে প্রত্যেকেই ভালো অভিনয় করেছেন। তবে কুকুরের ফার্মের মালিক আর দুর্বৃত্ত টাইটাসের (স্টিভ পেমবারটন) কথা বলতে হয় আলাদাভাবে।

‘মিসিং ইউ’–এর পোস্টার। নেটফ্লিক্স

নির্মাতা ভিক্টোরিয়া আসারি-আর্চার চাইলেই টাইটাসকে অতিরঞ্জিত করে তুলতে পারতেন। তবে তিনি সেটা না করেই বরং দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। নেতিবাচক এ চরিত্রে যখনই দর্শক ভাবতে শুরু করে সবকিছু বুঝতে শুরু করেছে, তখনই ঘটনা অপ্রত্যাশিত দিকে মোড় নিতে থাকে।

আরও পড়ুন

‘মিসিং ইউ’ গল্পের পটভূমি এক দশকের বেশি সময় ধরে বিস্তৃত। যদিও অতীত ঘটনার পুনরাবৃত্তি রয়েছে কিছু জায়গায়। কোথাও মনে হয়েছে দু-একটি চরিত্র গঠনে আরেকটু সময় দেওয়াই যেত। তবে রহস্য, ভয় ধরানো ঘটনা, বিশ্বাসঘাতকতা; একের পর এক ঘটনার বাঁকবদলে গল্পের রোমাঞ্চে ভাটা পরে না। তাই গল্পের ভেতরে একবার ঢুকে গেলে শেষ না করে বের হওয়া যায় না।

যদিও সিরিজটি সমালোচকেরা বলছেন, ‘মিসিং ইউ’ মনে দাগ কেটে যাওয়ার মতো কোনো গল্প নয়। তবুও সিরিজটি শেষ করার পর একটি জটিল ধাঁধা সমাধান করার মতো তৃপ্তি মেলে। তাই বলা যায়, রোমাঞ্চকর সিরিজ হিসেবে এটি তার মর্যাদা ধরে রাখতে পেরেছে। আর নেটফ্লিক্সের টপ ওয়াচিং লিস্টে থাকাই সে প্রমাণ দিয়ে যায়।  

‘মিসিং ইউ’–এর দৃশ্য। নেটফ্লিক্স