অ্যালেন স্বপন ফিরলেন, রোমাঞ্চ ফিরল কি
আপাদমস্তক শয়তানি কিন্তু মেজাজে রসিক—এমন একটা চরিত্র অ্যালেন স্বপন। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা চরিত্রটিকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন নাসির উদ্দিন খান। তাঁর উপস্থিতি এতটাই প্রবল যে একাই পুরো সিরিজকে টেনে নিয়ে যেতে পারেন তিনি, সে গল্প যা–ই হোক। এই ধরনের জনপ্রিয়তার নেতিবাচক দিক হলো, প্রধান চরিত্রের পারফরম্যান্সের ওপর অতিনির্ভরতা অনেক সময় চিত্রনাট্য থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেয়। চাঁদরাতে চরকিতে মুক্তি পাওয়া ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন ২’ কি সে চক্করেই পড়ল?
একনজরে
সিরিজ: ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন ২’
ধরন: ক্রাইম ড্রামা
পরিচালনা: শিহাব শাহীন
অভিনয়ে: নাসিরউদ্দিন খান, রাফিয়াত রশিদ মিথিলা, জেফার রহমান, ইন্তেখাব দিনার, সুমন আনোয়ার, আইমন শিমলা, ফরহাদ লিমন, অর্ণব ত্রিপুরা
স্ট্রিমিং: চরকি
মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন-এর প্রথম কিস্তি ছিল দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত একটা কাজ। চিত্রনাট্যের আঁটসাঁট গাঁথুনি আর নাসিরউদ্দিন খানের অভিনয়ের গুণে অল্প বাজেটেও ধারালো হয়ে উঠেছিল সিরিজটি। এবার নাসিরউদ্দিন আছেন, পর্দায় তাঁর খ্যাপাটে পারফরম্যান্সও আছে, তবে চিত্রনাট্যের গাঁথুনি কোথাও যেন ঢিলে হয়ে গেছে।
‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন ২’ মোটের ওপর উপভোগ্য হয়েছে ঠিকই কিন্তু প্রথম কিস্তির মান ছুঁতে পারেনি। প্রথম মৌসুমে ক্রাইম ড্রামার আড়ালে চিত্রনাট্যে নারী-পুরুষের সম্পর্ক, কামনা-বাসনা নিয়ে সূক্ষ্ম একটা দিক ছিল, এবার সেটা নেই। নির্মাতারা বেছে নিয়েছেন সহজ একটা গল্প, সেখানে অ্যালেন স্বপন হিসেবে নাসিরউদ্দিন যদি না থাকতেন, তাহলে কতটা জমত বলা মুশকিল।
গল্পে দিশা চরিত্রটিকেও যথাযথভাবে খাপ খাইয়ে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এই চরিত্রে সংগীতশিল্পী জেফার রহমান চলনসই। নাসিরউদ্দিনের স্ত্রীর চরিত্রে মিথিলা প্রথম মৌসুমের মতোই ভালো কাজ করেছেন। খল চরিত্রে আবার ফিরেছেন সুমন আনোয়ার। তবে এবার তাঁকে গত মৌসুমের মতো ততটা ভয়ংকর মনে হয়নি। সেটা এবার তাঁর স্বল্প উপস্থিতির কারণে হতে পারে অথবা ওয়েবে টানা খলনায়ক চরিত্রে অভিনয়ের একঘেয়েমি থেকেও হতে পারে। ইন্তেখাব দিনার অভিনীত চরিত্রটিও সেভাবে ছাপ ফেলতে পারে না।
প্রথম মৌসুমের উচ্চতা ছুঁতে না পারলেও মাত্র ঘণ্টা আড়াই দৈর্ঘ্যের সিরিজটি এক বসায় শেষ করতে অসুবিধা হয় না। সেটা সিরিজের মজ্জাতে অপরাধ, হিংস্রতা আর কামনার মিশ্রণে তৈরি আবহের কারণেই। অ্যালেন স্বপন আর শায়লার দাম্পত্য জীবন ভয়, সন্দেহ, কামনা আর লোভের মিশ্রণে তৈরি এক রসায়ন। এবারও তাদের সেই রসায়ন ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন নির্মাতা।
তুলনামূলক দুর্বল চিত্রনাট্য নিয়েও মোটের ওপর উপভোগ্য সিরিজ বানিয়েছেন, সে জন্য শিহাব শাহীনের আলাদা করে ধন্যবাদ পাওনা।
মুক্তির কিছুদিন আগপর্যন্তও সিরিজটির শুটিং হয়েছে, বিভিন্ন সংলাপে অতি সাম্প্রতিক কিছু প্রসঙ্গের উল্লেখে সেটা বোঝা যায়। একটি দৃশ্যে যেমন ভাইরাল হওয়া তরমুজওয়ালার ‘মধু মধু’ সংলাপ আছে। অ্যালেন স্বপন চরিত্রে নাসিরউদ্দিন খানের যা অভিনয়, তাতে ‘মধু মধু’ বললে বাড়িয়ে বলা হয় না।