ফেলুদা হিসেবে দুর্দান্ত টোটা, তবে...

‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর’–এর দৃশ্য। হইচইয়ের ইনস্টাগ্রাম থেকে

গল্প চেনা। কে, কেন আর কীভাবে খুন করে, সেটাও জানা। রহস্য ফাঁসের ফেলু মিত্তিরির ভঙ্গিও জানা। অনেক ফেলুদা–ভক্তের তো সংলাপসহ মুখস্থ। তবে আপনি যতই ফেলুদা-ভক্ত হন, শুরুর দৃশ্য দেখে না চমকে গিয়ে উপায় নেই।

একনজরে
সিরিজ: ‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর’
পরিচালক: সৃজিত মুখোপাধ্যায়
অভিনয়ে: টোটা রায়চৌধুরী, কল্পন মিত্র, অনির্বাণ চক্রবর্তী, ঋদ্ধি সেন, দেবেশ চট্টোপাধ্যায়, অনিরুদ্ধ গুপ্ত
স্ট্রিমিং: হইচই

পাকিস্তান-ভারতের রাজনৈতিক টানাপোড়েন বলিউডি সিনেমার নিয়মিত চর্চার বিষয়। পাকিস্তানে বসে ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে, এমন ভূরি ভূরি দৃশ্যের কথা হিন্দি সিনেমার নিয়মিত দর্শকেরা বলে দিতে পারেন। সে যা–ই হোক, সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদায়ও শেষ পর্যন্ত ‘আমদানি’ হলো সেই ‘পাকিস্তানি ষড়যন্ত্র’। ‘আমদানি’ বলতেই হচ্ছে; কারণ, হইচইয়ের ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি’ সিরিজের নতুন পর্ব ‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর’ শুরুই হয় এমন একটি দৃশ্য দিয়ে। বাঙালি দর্শক নাকি মূল গল্প বদল করলে খেপে যান, নির্মাতা সৃজিত মুখার্জি সে কারণেই কিনা আগের পর্বগুলোতে তেমন বদল আনেননি, মূল উপন্যাসের যতটা সম্ভব কাছাকাছি থেকেছেন। এবারের পর্বেও খুব বেশি যে বদল করেছেন, তা নয়। কিন্তু অন্য বদল যা–ই হোক, ‘পাকিস্তানি ষড়যন্ত্র’ আর ‘র’-এর প্রসঙ্গ এই ফেলুদার আবেগের সঙ্গে একেবারেই যায় না।

‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর’-এর গল্প সবারই কমবেশি জানা। তবু একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক। ফেলুদা, লালমোহনবাবু আর অবশ্যই তোপসে ছুটি কাটাতে হাজির কাশ্মীরে। লালমোহনবাবুর দিনকাল ভালো যাচ্ছিল না।

‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর’–এর দৃশ্য। হইচইয়ের ইনস্টাগ্রাম থেকে

তাই জ্যোতিষীর পরামর্শে হাওয়াবদলে যাওয়া। সেখানেই আলাপ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সিদ্ধেশ্বর মল্লিক ও তাঁর সহকারী সুশান্তর সঙ্গে। তারপরই জড়িয়ে পড়া এই পরিবারের সঙ্গে। সিদ্ধেশ্বরবাবু শেষ বয়সে এসে নিজের দেওয়া কিছু ফাঁসির আদেশ নিয়ে সন্দিহান। তাঁর চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকের সাহায্যে আত্মা নামান ফাঁসির আদেশ দেওয়া আসামিদের। অর্থাৎ করেন প্ল্যানচেট। জানতে চান, তাঁর বিচার ঠিক, না ভুল। এরপরই একটা খুন, একটা খুনের চেষ্টা, একটা হিরের আংটি চুরি, বারবার ফেলুদার ওপর হামলা আর সঙ্গে সবশেষে রহস্যভেদ!

সিরিজের এক পর্যায়ে এসে ফেলুদার আগের কেসের একঝলক দেখিয়েছেন সৃজিত। যা দেখে ফেলুদা–ভক্তরা নস্টালজিক হতে বাধ্য। সঙ্গে আফসোস বাড়ে, কেন আর ফেলুদা বানাবেন না সৃজিত। ‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর’ মুক্তির আগে নির্মাতা জানিয়েছেন, তিনি আর ফেলুদা সিরিজ বানাবেন না। কারণ, ফেলুদা করতে অন্য আর দশটা বাংলা সিরিজের চেয়ে বেশি বাজেট লাগে। তিনি বরং সিনেমায় ফেলুদা বানাতে চেয়েছিলেন কিন্তু স্বত্বের জটিলতায় সেটা সম্ভব নয়। তাই এটি হয়তো তাঁর শেষ ফেলুদা হয়ে রইল।

‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর’–এর দৃশ্য। হইচইয়ের ইনস্টাগ্রাম থেকে

‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর’-এর প্রধান সমস্যা হলো এটি দেখতে সিরিজের চেয়ে ট্রাভেল ভ্লগ বেশি মনে হয়। বাড়তে গিয়ে টান টান উত্তেজনা যেন একটু হলেও কমেছে। একঘেয়ে লাগলেও লাগতে পারে। মনে হয়, পর্বসংখ্যা অর্ধেক হলে ক্ষতি কী ছিল! অনেক সময়ই মনে হয়েছে, এটি কি রহস্য-রোমাঞ্চ সিরিজ, নাকি কাশ্মীরের সৌন্দর্য নিয়ে তথ্যচিত্র। কারণ, পাত্রপাত্রীদের সবাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, গল্প কিন্তু যেখানে ছিল, সেখানেই আছে।

তবে যত দুর্বলতাই থাক, ফেলুদার ভূমিকায় টোটা রায়চৌধুরী লা-জওয়াব। এবার তিনি প্রায় নিখুঁত ফেলু মিত্তির হয়ে উঠেছেন। তাঁর কথা বলা, তাকানো, বন্দুক ধরা, চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া—সবই দশে দশ। তোপসে হিসেবে যথাযথ কল্পন।

‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর’–এর দৃশ্য। হইচইয়ের ইনস্টাগ্রাম থেকে

লালমোহনবাবুর চরিত্রে অনির্বাণ চক্রবর্তী মন্দ নন। অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের চরিত্রে রজতাভ দত্তও অসাধারণ।

আলাদা করে এই সিরিজের সিনেমাটোগ্রাফির প্রশংসা করতেই হয়। কাশ্মীর নিয়ে গল্প যখন, প্রাকৃতিক দৃশ্য আপনাকে চমকে দেবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে নির্মাতা যেভাবে ড্রোন শটে বারবার কাশ্মীরের বরফের পাহাড়, উপত্যকা দেখিয়েছেন, সেটা দুর্দান্ত।

আরও পড়ুন

কখনো বরফঢাকা পর্বতশৃঙ্গ, কখনো লিডার নদীর জল, কখনো ডাল লেকের বোট কিংবা পাহাড়ের মাথায় মেঘের আনাগোনা চোখ জুড়িয়ে দিয়েছে। টপ শটে পাহাড়ি পথে ঘোড়া যাওয়ার দৃশ্যও বেশ মনে থেকে যায়। ছুটির মেজাজে একবার দেখতে বয়সে হয়তো ফেলুদা–ভক্তরা শেষ না করে উঠবেন না।