বাবাকে খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এল চাপা পড়া ইতিহাস

‘ফেউ’ এর দৃশ্যে মোস্তাফিজুর নূর ইমরানচরকি

‘ঈশ্বরের এই বিশাল আকাশের নিচে আমাদের কোনো ঠাঁই হলো না ক্যান?’—সুনীতা দেবী।

‘রিফিউজি গে দ্যাশ জাত বলে কিছু আছে নাকি?’—পলাশ।

‘কয়দিন এদিক–ওদিক কিছু ঘটনা ঘটবে, তুমি শুধু চোখ–কান–নাক সব বন্ধ রাখবা।’—কাজী।

‘অত্যাচারের কথা সারা দুনিয়ার বুঝমান সমস্ত মানুকে জানাতি হবি।’—সুনীল।

ওপরের লাইনগুলো চরকি অরিজিনাল সিরিজ ‘ফেউ’র বিভিন্ন চরিত্রের সংলাপ। গতকাল ২৬ জানুয়ারি প্রকাশ পেয়েছে এর ট্রেলার, সেখানে সংলাপগুলো স্পষ্ট। লাইনগুলো একসঙ্গে মেলালে সিরিজটির গতিপথ নিয়ে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। ‘রিফিউজি’, ‘অত্যাচার’ শব্দগুলো থেকে কিছুটা হলেও অনুমান করা যায় নিপীড়নের কোনো গল্পই হয়তো উঠে আসতে যাচ্ছে।

গল্পটি দর্শকদের ভিন্ন দুটি সময়ের মধ্য দিয়ে নিয়ে যাবে। কারণ, ট্রেলারে দুটি সময়ের উল্লেখ পাওয়া গেছে। যার একটি ১৯৭৯ এবং অন্যটি ২০০২ সাল। সত্য ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মিত হয়েছে ‘ফেউ’। নির্মাতা সুকর্ন সাহেদ ধীমানের ভাষ্যে, ‘সত্য ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা একটি ফিকশনাল গল্প বলতে চেয়েছি। যেখানে আন্তর্জাতিক রাজনীতির সঙ্গে স্থানীয় রাজনীতি ও সংস্কৃতিও উঠে আসবে।’

স্থানীয় রাজনীতি ও সংস্কৃতি বোঝাতে নির্মাতা দেশের খুলনা–মোংলা অঞ্চলের কথা বোঝাতে চেয়েছেন। এ জায়গার নাম দেখানো হয়েছে ট্রেলারে। অস্তমিত সূর্যের আলোয় এক যুবক ছুটছে নৌকা নিয়ে, একা। তার এই ছুটে চলা কিসের জন্য, তা বোঝা যায় সংলাপের মধ্য দিয়ে। সংলাপে সে তার বাবা বেঁচে আছে না মারা গেছে, সেই কথা জানতে চায়।

কাজী চরিত্রে অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান
চরকি

মূলত এই প্রশ্ন থেকেই গল্পের ভেতরে ঢুকতে থাকে ড্যানিয়েল, অর্থাৎ নৌকায় থাকা ছেলেটি। গল্পের ভেতর কী অপেক্ষা করছে, তা বোঝা যাবে ২৯ জানুয়ারি রাত ১২টায় (৩০ জানুয়ারি)। ওই দিন মুক্তি পাবে সিরিজটি। ড্যানিয়েলের এই যাত্রায় পাওয়া যাবে তার বন্ধু সোহেলকেও। এই দুই তরুণ যত এগিয়ে যেতে থাকে, ততই বেরিয়ে আসতে থাকে চাপা পড়ে থাকা ইতিহাস।

ড্যানিয়েল চরিত্রে অভিনয় করেছেন তানভীর অপূর্ব এবং সোহেল চরিত্রে আছেন হোসাইন জীবন। এই দুই তরুণের কাঁধে বড় দায়িত্ব দিয়েছেন পরিচালক। তাঁরা সেটা বেশ ভালোভাবেই পালন করেছেন বলে মনে করেন নির্মাতা। দুজনই লেখাপড়া করছেন, যুক্ত আছেন অভিনয়ের সঙ্গে। পরীক্ষা–নিরীক্ষার পরেই ‘ফেউ’তে সুযোগ পেয়েছেন দুজন। তানভীর অপূর্ব বলেন, ‘ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে এ রকম একটা কাজের অভিজ্ঞতা দরকার ছিল। একজন অভিনেতা নয় বরং ইউনিটের একজন হয়ে কাজটি করেছি। দুর্গম লোকেশনে গিয়ে কাজ করতে হয়েছে। এমন অনেক কিছু করেছি, যা ছিল আমার জন্য প্রথমবার।’

‘ফেউ’ এর সুনীল চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরী
চরকি

হোসাইন জীবন বলেন, ‘সিরিজে অভিনয়ের প্রস্তুতি হিসেবে আমাদের সেলসম্যানের কাজ করতে হয়েছে। এটা আমাদের জন্য একটা দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল। বিক্রেতা হিসেবে কাজ করে আমরা নিজেদের নানা রকম সীমাবদ্ধতা উতরে গেছি। খুলনা অঞ্চলের কথা বলার ঢং শিখেছি আমরা। সব মিলিয়ে এই কাজের অভিজ্ঞতা আমার সব সময়ের জন্য কাজে লাগবে।’

দুই তরুণ যত এগিয়ে যেতে থাকে, ততই বেরিয়ে আসতে থাকে চাপা পড়ে থাকা ইতিহাস
চরকি

সিরিজটি গড়ে উঠেছে মরিচঝাঁপি ম্যাসাকারের অনুপ্রেরণায়। এতে কাজী চরিত্রে অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান, সুনীল চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরী, মার্শাল চরিত্রে মোস্তাফিজুর নূর ইমরান, সুনীতা দেবী চরিত্রে তাহমিনা অথৈ, পলাশ চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিজভী রিজু। নির্মাতা সুকর্ন সাহেদ ধীমানের মতে, সিরিজের সব চরিত্রই রাজনৈতিক এবং তাঁর দেখা খুলনা–সুন্দরবন অঞ্চলের রাজনৈতিক গল্পটাই বলতে চেয়েছেন তিনি। ‘ফেউ’ তারই বহিঃপ্রকাশ।