শতভাগ আঞ্চলিক ভাষা
একজন নারীর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প তুলে ধরা হয়েছে ‘সাহস’ চলচ্চিত্রে—যে নারী সব বাধা পেছনে ফেলে এগিয়ে যায়। এমন গল্পের ছবিটি বানিয়েছেন তরুণ নির্মাতা সাজ্জাদ খান। জীবনের প্রথম সিনেমার শুটিং শেষে ডাবিং ও সম্পাদনার যাবতীয় কাজ করে সেন্সর ছাড়পত্রের জন্য জমা দেন পরিচালক। শুরুতেই বাধে বিপত্তি। দুটি দৃশ্য নিয়ে আপত্তি জানায় সেন্সর বোর্ড। এরপর সেই দুটি দৃশ্য বাদ দিয়ে আবার সেন্সর ছাড়পত্রের জন্য জমা দেওয়া হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানও পেয়ে যায় ছাড়পত্র। পরিচালক সাজ্জাদ খান তাঁর প্রথম চলচ্চিত্রের মুক্তির অনুমতি পেয়েই সুবিধাজনক সময় খুঁজছিলেন দর্শকের কাছে ছবিটি পৌঁছে দেওয়ার। একটা সময় এগিয়ে আসে চরকি। বাংলা চলচ্চিত্রপ্রেমীরা ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকিতে দেখতে পাবেন ‘সাহস’।
চরকির মতো একটি ভালো মানের দেশীয় প্ল্যাটফর্মে নিজের প্রথম চলচ্চিত্র মুক্তি দিতে পেরে খুশি পরিচালক সাজ্জাদ খান। কাল বৃহস্পতিবার রাত আটটায় মুক্তি পাচ্ছে ছবিটি। এই চলচ্চিত্র বাগেরহাটের আঞ্চলিক ভাষায় তৈরি হয়েছে।
ঢাকায় বেড়ে ওঠা এই পরিচালকের মতে, ‘বেশির ভাগ পরিচালক তো একধরনের ভাষায় চলচ্চিত্র বানান, আমি নাহয় বাইরের ভাষায় বানালাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম থেকেই ইচ্ছা ছিল মফস্বলের একটা গল্প দেখানোর। এরপর তো ধীরে ধীরে টিম গঠন করা হলো। ছবিটি বানানো হলো। এখন দর্শকদের দেখার পালা। সাহস মূলত একটা টিমের সিনেমা।’
বাগেরহাটের দুই পাশে নদী আর পেছনে জঙ্গল। জীবন এখানে প্রকৃতির মতোই খেয়ালী, ঝড়ঝঞ্ঝা অবিরাম। এরই মাঝে ফুল হয়ে ফুটতে চায় নীলা-রায়হানের প্রেম। কিন্তু আচমকা ঝড়ে সব লন্ডভন্ড হয়ে যায়। ঘুরে যায় জীবনের কম্পাস। তবু দমে না তারা। বুকে সাহস নিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়, লড়াই করে প্রাণপণ। এমন খাঁটি একটা গল্প নিয়ে সাজ্জাদ খান নির্মাণ করেছেন সাহস।
চরকিতে এই বছরের শুরুতে শতভাগ লোকাল সিরিজ হিসেবে রাজশাহীর ভাষায় নির্মিত ‘শাটিকাপ’ আলোচনার জন্ম দেয়। এবার আসছে আঞ্চলিক ভাষার চলচ্চিত্র। এই ছবির রায়হান চরিত্রে অভিনয়ে দেখা যাবে মোস্তাফিজ নুর ইমরানকে। তাঁর বেড়ে ওঠা, শৈশব, কৈশোর কেটেছে বাগেরহাটেই। ছবিটি নিয়ে তাঁর আবেগের জায়গাটা একটু ভিন্ন। তিনি বললেন, ‘বাগেরহাট আমার নিজের শহর। অভিনেতা হিসেবে যদি বলি, এই শহরে হাঁটাচলা, অভিনয় করাটা আমার জন্য উপভোগ্য ছিল। বাগেরহাটের মানুষ কখনো শুটিং দেখেনি, তার ওপর আবার সিনেমা। গোটা শহরের মানুষ শুটিং দেখে খুব মজা পেয়েছেন। পুরো কাজটা করার সময় আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, বাগেরহাটের রেপার্টরি থিয়েটারের অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। এই মানুষগুলোর সহযোগিতার কারণে কাজটা করার সাহস পেয়েছি। সেই সঙ্গে সিনেমার পরিচালক, সহ–অভিনেত্রীরা ছিলেন দুর্দান্ত।’
এই ছবির প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাজিয়া হক অর্ষা। তিনি বলেন, ‘এ রকম গল্পের সঙ্গে কাজ করতে আমার বরাবরই ভালো লাগে। কারণ, সমসাময়িক যে ধরনের গল্প হয়, তা থেকে আলাদা। একটা অঞ্চলের চিন্তাচেতনা, সংস্কৃতির সঙ্গে মিল রেখে একটা সিনেমা খুব একটা হয় না। দেখা যাচ্ছে, এ রকম একটা কাজের সঙ্গে থাকতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবানই মনে হচ্ছে।’
বাগেরহাটের লোকাল ভাষায় কাজ করার জন্য নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করেছেন, এমন প্রশ্নে অর্ষা বলেন, ‘বাগেরহাটে গিয়ে আমি জানতে পারি সেখানকার লোকাল ভাষায় শুটিং হবে। প্রথমে বেশ ভয়ই পেয়েছি। কিন্তু সবার সহযোগিতায় কাজটা শেষ করেছি। জানি না দর্শকের কতটুকু ভালো লাগবে, তবে আমি চেষ্টা করেছি।’
সাহস-এ একদম ভিন্ন এক চরিত্রে দেখা যাবে খাইরুল বাসারকে। তিনি বলেন, ‘এই ছবিতে আমাকে খুব অল্প সময় দেখা যাবে। তবে খুব গুরুত্বপূর্ণ ও রহস্যময় চরিত্র। সাধারণত এমন চরিত্রে আমার কাজ করা হয়নি। আর এখানে সাহস-এর গল্পটা নিজেই হিরো।’ এই ছবির মধ্য দিয়ে অভিনয়ে অভিষেক হচ্ছে কুন্তল বিশ্বাসের। তিনি বলেন, ‘কাজটা করার সময় আমাদের টিমের দু-একজন ছাড়া সবাই আমরা নবীন অভিনেতা ছিলাম। প্রচণ্ড উত্তেজনা, ভয়, সাহস, আবেগ নিয়ে কাজটা করা হয়েছে। আর মোস্তাফিজ নুর ইমরান ভাইয়ের সহযোগিতায় কাজটা আমার জন্য সহজ হয়ে গিয়েছিল। এখন দর্শক যদি কাজটা পছন্দ করেন, তাহলেই হবে আমাদের সার্থকতা।’
সাহস সিনেমায় অভিনয় করেছেন একঝাঁক নতুন অভিনেতা। যাঁদের বেশির ভাগই বাগেরহাটের স্থানীয়। চরকি এক্সক্লুসিভ চলচ্চিত্র সাহস ফুয়েলড বাই ‘মাই ফুয়েল পাম্প’-এ। ১৬ জুন রাত আটটা থেকে বিশ্বের যেকোনো জায়গা থেকে দেখা যাবে ‘সাহস’।