মন্দ-ভালোয় দুই দশক পার

শারমিন জোহা শশী। ছবি: অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে
ক্যারিয়ারে দুই দশক পার করেছেন ‘হাজার বছর ধরে’ সিনেমায় টুনি চরিত্রে অভিনয় করে পরিচিতি পাওয়া শারমিন জোহা শশী। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে যেমন প্রাপ্তি রয়েছে, তেমনি রয়েছে অপ্রাপ্তির অভিমান। তাঁর ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত নানা প্রসঙ্গে অভিনেত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন মনজুরুল আলম

শশীকে প্রায়ই শুনতে হয়, ‘আপনি কি বিদেশ থাকেন? কাজ ছেড়ে দিয়েছেন কেন’ এমন প্রশ্নের। তখন শান্ত স্বরে জানান, কাজ খুব কম করেন। চরিত্র পছন্দ না হলে কাজ করতে চান না। এ জন্যই পর্দায় তাঁর উপস্থিতি কম। এই বাছবিচার বহুদিনের। যে কারণে মনে হয় নীরব শশী। তিনি বলেন, ‘আমি নিয়মিত কাজ করি, কিন্তু সংখ্যায় কম। যখন একের পর এক চিত্রনাট্য পেয়েছি তখনো কম করতাম, এখনো তা–ই করি। সত্যি বলতে, কাজ ছাড়া কারও সঙ্গে বাড়তি কথা হয় না। আমার গণসংযোগ একটু দুর্বল। এর মধ্যে “কুসুমকথা” ধারাবাহিকের কাজ করেছি। নাম ভূমিকায় অভিনয় করছি, যে শূন্য থেকে একসময় উদ্যোক্তা হয়।’

শারমিন জোহা শশী। ছবি: অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

বাড়তি আড্ডা দরকার
এই যুগে নিয়মিত কাজ না করলে অনেকেই ভুলে যান, এটা স্বাভাবিক। সবার মনে থাকার জন্য কিছুটা হলেও সহকর্মীদের সঙ্গে হাই, হ্যালো থাকা দরকার উল্লেখ করে শশী বলেন, ‘এখন আগের চেয়ে অনেক ক্ষেত্রেই ভালো কাজ হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বিষয়টা এমন আড়াল হলেই কেউ কাউকে মনে রাখছে না। আমি মনে করি, আগে আমার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা দরকার। তবে এমন না আমি আড্ডা পছন্দ করি না। আমার সার্কেলে তুমুল আড্ডা হয়। প্রায়ই মনে হয় বাড়তি আড্ডার দরকার।’

সহকর্মীরা কী ভাবেন
শশীকে নিয়ে তাঁর সহকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অকারণেই অনেকে তাঁকে অপছন্দ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি কারও পেছনে থাকি না। তবু কিছু সহকর্মী আমাকে নিয়ে নেতিবাচক কথা বলেন। আমরা তারকারাই নিজেদের নিয়ে গসিপ করি। আমাকে না জেনে, না বুঝে কেউ কেউ নেতিবাচক কথা বলে বেড়ান। এটা খারাপ লাগে।’ সহকর্মীদের অনেকেই জানেন, শশী শান্ত মনের মানুষ।

শারমিন জোহা শশী। ছবি: অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

কাজে মনোযোগী। আলাপে আলাপে শশী জানালেন, অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ তাঁকে প্রায়ই বলেন, ‘তুই অনেকটাই নীরবে থাকিস। এ জন্য চিন্তা হয়।’ শশী বলেন, ‘আসাদ ভাইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ। তিনি আমাকে পছন্দ করেন। এমন আরও অনেকেই আছেন। কিন্তু কিছু সহকর্মী না জেনে কথা বললে দুঃখ লাগে।’  

২০ বছরে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ভক্তরা তাঁকে চেনেন, ভালোবাসেন, এটাই তাঁর অন্যতম পাওয়া। তবে এই পথ কখনো মসৃণ ছিল, কখনো কঠিন। তারপরও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন শশী।

আরও পড়ুন

তিনি বলেন, ‘দর্শক এখনো আমাকে টুনি নামে ডাকেন, প্রশংসা করেন। নিজের মতো করে ভালো আছি। ক্যারিয়ারে অনেক সময় হয়তো সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেছি। কিন্তু এসব নিয়ে এখন আর ভাবি না। তবে মিস করি শুটিংয়ের আগের সেই বন্ডিং। যখন সবাই মিলে শুটিং করতাম। সবার মধ্যে আন্তরিকতা ছিল। কোনো কাজ শেষ হলে সবার মন খারাপ হতো। কিন্তু এখন সেই আন্তরিকতা নেই। এমনও হয়, এক ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করছি, কিন্তু আমাদের দেখাও হয় না। দিন দিন ইউনিট, চরিত্রের পরিসর ছোট হয়ে আসছে।’  

বিয়ে কবে
অনেক সময় নিজের সম্পর্কে এই অভিনেত্রীকে নাকি শুনতে হয়েছে, তাঁর নাকি দুই তিনটি বিয়ে হয়েছে। যে সহকর্মীদের তিনি পরিবার মনে করেন, সেই সহকর্মীদের কাছে এসব কথা শুনে মন খারাপ হয় শশীর। তিনি জানালেন, এবার বিয়ে তিনি সত্যি সত্যি করবেন। সেই কথা পরিবারকে জানিয়েছেন। পরিবারের পছন্দসই ছেলেকেই বিয়ে করবেন। ‘অনেকেই না জেনে আমাকে নিয়ে অনেক কথা বলেন। এটা ঠিক না। কারণ কেউ এগুলো বিশ্বাস করেন। আর কাউকে না জেনে তার সম্পর্কে কোনো কথা না বলাই ভালো। যাহোক, এগুলোতে কান দিই না। সামনে বেশ কিছু বড় কাজ আছে, সেগুলো নিয়েই ভাবছি। আমার কোনো কিছু নিয়েই তাড়াহুড়ো নেই,’ বলেন শশী। গত বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত নাটক ‘এক কাপ ঠান্ডা চা’ নিয়ে প্রশংসা পাচ্ছেন শশী। নাটকটি পরিচালনা করেছেন মামুনুর রশীদ।