আগামীকাল মুক্তি পাচ্ছে ‘ওপেনহাইমার’, নোলান-জাদু দেখতে তর সইছে না ভক্তদের

‘ওপেনহাইমার’ সিনেমার পোস্টার। আইএমডিবি

সময়, স্মৃতি আর ব্যক্তিসত্তার অদ্ভুত সমাবেশ ঘটান নিজের ছবিতে। মেটাফিজিকস, কাঠামো ভাঙা গল্প বলার ভঙ্গি মিলিয়ে ক্রিস্টোফার নোলান যে এ শতকের অন্যতম সেরা নির্মাতা, তাতে কেউ দ্বিমত করবেন না। মোটামুটি দুই থেকে তিন বছর পর নতুন ছবি নিয়ে হাজির হন নোলান, এবার তিনি আসছেন বহুল প্রতীক্ষিত ছবি ‘ওপেনহাইমার’ নিয়ে। শেষ ছবি ‘টেনেট’-এ নোলান-জাদুর কিছুটা কমতি দেখা গেছে। দর্শক-সমালোচকদের আশা, এবার কড়ায়-গন্ডায় সব পুষিয়ে দেবেন তিনি। সারা বিশ্বে আগামীকাল মুক্তি পাচ্ছে তারকাবহুল ছবি ‘ওপেনহাইমার’।

২০০৫ সালে ‘আমেরিকান প্রমিথিউস’ নামে বই লিখেছিলেন কাই বার্ড ও মার্টিন জে শেরউইন। পরের বছরই যে বই পেয়েছিল পুলিৎজার পুরস্কার।

‘ওপেনহাইমার’ সিনেমার অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলান
রয়টার্স

বইটি প্রকাশের বছর কয়েকের মধ্যেই শোনা যায়, স্যাম মেন্ডেস বইটি নিয়ে সিনেমা বানাবেন। পরে অবশ্য ছবিটি এসে পড়ে নোলানের হাতে। নোলান যে সেই কাহিনিই নিজের মতো করে গড়েপিঠে নিয়ে ‘ওপেনহাইমার’ বানিয়েছেন, সে কথা বলাই বাহুল্য।

আরও পড়ুন

ছবিটি যে অ্যাটম বোমার জনক জে রবার্ট ওপেহাইমারকে নিয়ে নির্মিত, সে কথা এত দিনে কারও জানতে বাকি নেই। তবে যেটা নতুন তা হলো, ছবিটি পরিচালক বানিয়েছেন ওপেনহাইমারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। এই প্রথম পর্দায় উত্তম পুরুষে গল্প বলেছেন নোলান। তাঁর আগের ছবি ‘ডানকার্ক’ তৈরি হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘটনা নিয়ে, এটির সঙ্গে ওই যুদ্ধ ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

পরিচালকের প্রিয় পাত্র কিলিয়ান মার্ফি, আগে পাঁচবার নোলানের ছবিতে দেখা গেছে তাঁকে; পর্দায় ‘ওপেনহাইমার’ হওয়ার জন্য তাঁকে নির্বাচন করা হয়েছে। তারকাবহুল এ ছবিতে আরও যাঁদের নাম না বললেই নয় তাঁরা হলেন এমিলি ব্লান্ট, ম্যাট ডেমন, রবার্ট ডাউনি জুনিয়র, ফোরেন্স পিউ, কেসি অ্যাফ্লেক, রামি মালিক।

‘ওপেনহাইমার’ সিনেমার নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীরা
রয়টার্স

এমিলি অভিনয় করেছেন ওপেনহাইমারের স্ত্রী ক্যাথরিন কিটি ওপেনহাইমারের চরিত্রে। এ ছবিতে শুটিংয়ের আগে অভিনয় থেকে বিরতি নিয়েছিলেন ম্যাট ডেমন। স্ত্রী অবশ্য বলে রেখেছিলেন, নোলানের প্রস্তাব পেলে তাঁকে ঘরে আটকে রাখা যাবে না।

কাকতালীয়ভাবে এরপরই প্রিয় পরিচালকের প্রস্তাব পান, পত্রপাঠ হাজির হয়ে যান।
অহেতুক প্রযুক্তির ব্যবহার, সুপার-হিরো সিনেমা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশসহ নানা কারণে নোলানের সাক্ষাৎকার আগ্রহভরে গেলেন তাঁর ভক্তরা। এবার মুক্তির আগে দ্য টেলিগ্রাফকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, এখনকার সিনেমায় তিনি প্রাণ খুঁজে পান না। তিনি আরও জানান, ‘ওপেনহাইমার’ ছবিতে তিনি কোনো সিজিআই ব্যবহার করেননি। তাহলে সিনেমায় বিস্ফোরণের দৃশ্যগুলো কীভাবে তৈরি করা হয়েছে? এই রহস্য অবশ্য খোলাসা করেননি পরিচালক।

ছবিতে ওপেনহাইমারের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করা এমিলি ব্লান্ট জানিয়েছেন ওপেনহাইমার হতে গিয়ে মার্ফির নিবেদনের কথা। তিনি জানান, শারীরিক প্রস্তুতির চেয়ে তিনি জোর দিয়েছেন মানসিক প্রস্তুতিতে। এমিলির কথায়, ‘তিনি ওজন কমানো নিয়ে খবরের শিরোনাম হতে চাননি।’ এর আগে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অভিনেতা নিজেও তেমনই জানিয়েছেন। এ–ও বলেছেন যে পরমাণুবিদ্যার কিছুই তিনি বোঝেন না। মার্ফি বলেন, ‘আমি ওই ব্যক্তিকে নিয়ে এবং তাঁর আবিষ্কার তাঁর ওপর কী প্রভাব ফেলেছে, সেটা নিয়েই আগ্রহী ছিলাম। তবে তাঁর উদ্ভাবন বোঝা আমার কম্ম নয়, ওই পর্যায়ের বুদ্ধিবৃত্তিক বিদ্যা আমার নেই।’

প্রিমিয়ারের পর এর মধ্যেই ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছে ‘ওপেনহাইমার’। অনেকেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে আগামী বছর সব পুরস্কার নিয়ে যাবে নোলানের ছবিটি। প্রখ্যাত চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক পল শ্রেইডার ওপেনহাইমারকে এ শতকের সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিনেমা হিসেবে অভিহিত করেছেন।