প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নির্মিত ছবি নিয়ে আলোচনা
বিনোদন দুনিয়ার খোঁজখবর রাখলে গল্পটা আপনার চেনা মনে হতে পারে। প্রখ্যাত তারকা এলিজাবেথ স্পার্কলসের গল্প। টিভির এই ফিটনেস শো তারকার ক্যারিয়ার পড়তির দিকে। নিজের ৫০তম জন্মদিনের দিনই সে জানতে পারে যে তার বিকল্প খোঁজা হচ্ছে। মরিয়া হয়ে ব্ল্যাক মার্কেট ড্রাগ নিতে চায় সে। কিন্তু ঘটনা ঠিক তার মতো হয় না। এলিজাবেথ চেয়েছিল, ব্ল্যাক মার্কেট ড্রাগ নিয়ে উন্নততর সংস্করণে হাজির হতে। কিন্তু নিজের সিদ্ধান্ত দুঃস্বপ্ন হয়ে ফিরে আসে।
হচ্ছিল ‘দ্য সাবস্ট্যান্স’ সিনেমার কথা। চলতি বছর কান উৎসবে প্রদর্শিত হওয়ার পর থেকেই কোরেলি ফারজার এই বডি হরর সিনেমার উচ্চকণ্ঠ প্রশংসা করেছেন সমালোচকেরা। গত ২০ সেপ্টেম্বর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম মুবিতে মুক্তির পর থেকে সে প্রশংসায় যোগ দিয়েছেন সাধারণ দর্শকও। কিন্তু কী এমন আছে এই সিনেমায়?
আলাপ শুরুর আগে জানিয়ে রাখা ভালো, ‘দ্য সাবস্ট্যান্স’ কিন্তু সবার জন্য নয়। নগ্নতা, সহিংসতা ও বীভৎসতার কারণে ছবিটি কেবলই প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য। অনেকের ছবিটি দেখতে গা গুলিয়েও উঠতে পারে। পর্দায় যাঁরা বডি হরর ঘরানার সিনেমা দেখতে অস্বস্তি বোধ করেন, তাঁদের ‘দ্য সাবস্ট্যান্স’ এড়িয়ে যাওয়া ভালো।
নিরীক্ষাধর্মী নির্মাণ, দুর্দান্ত সম্পাদনার সঙ্গে ডেমি মুর, মার্গারেট কোয়ালি, ডেনিস কোয়েদের অভিনয়ের কারণে সমালোচকেরা তারিফ করেছেন ‘দ্য সাবস্ট্যান্স’-এর। অন্যান্য বডি হরর সিনেমার মতো এতেও প্রস্থেটিক মেকআপের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এ ছবিতে প্রস্থেটিকসের কাজ দেখলে চমকে যাবেন। অতীতের সব কাজ মনে রেখেও এটিকে ডেমি মুরের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা সিনেমা বললেও ভুল হবে না।
‘দ্য সাবস্ট্যান্স’ দ্রুতলয়ের সিনেমা। তাই পর্দায় পূর্ণ মনোযোগ জরুরি।
মন দিয়ে দেখলে আপনি এ সিনেমায় পপ কালচারের পরিচিত অনেক কিছুরই প্রভাব দেখতে পারবেন। মূলত এ সিনেমায় প্রিয় অনেক নির্মাতাকে শ্রদ্ধার্ঘ জানিয়েছেন কোরেলি ফারজা। প্রথম ছবি ‘রিভেঞ্জ’ দিয়েই সমালোচকদের প্রিয় পাত্রী হয়ে গেছেন তরুণ এই ফরাসি নির্মাতা; ‘দ্য সাবস্ট্যান্স’ দিয়ে আরও একধাপ এগিয়ে গেলেন। ‘রিভেঞ্জ’ নির্মিত হয়েছিল ফরাসি ভাষায়, পুরোপুরি ফরাসি ভাষায়। ‘দ্য সাবস্ট্যান্স’ যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত। ছবির ভাষাও ইংরেজি, সে জন্যই হয়তো এটি আরও বেশিসংখ্যক দর্শকের কাছে পৌঁছে গেছে।
হচ্ছিল ‘দ্য সাবস্ট্যান্স’ সিনেমায় বিভিন্ন প্রেরণার কথা। এতে আপনি ‘ডক্টর জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইড’-এর অনুপ্রেরণা যেমন পাবেন, তেমনি পাবেন বডি হরর সিনেমার ওস্তাদ নির্মাতা ডেভিড ক্রোনেনবার্গের কাজের প্রভাবও। ছবিতে ডেনিস কোয়েদ অভিনীত চরিত্রটির নাম ‘হার্ভে’, এটি কুখ্যাত মার্কিন চলচ্চিত্র প্রযোজক হার্ভে ওয়েইনস্টাইনের নাম থেকে নেওয়া হয়েছে বলে অনুমান করা শক্ত নয়।
‘বয়স’ নিয়ে তারকাদের চিন্তার কমতি নেই। বোটক্স, ফিলার বা অস্ত্রোপচারের কথাও প্রায়ই শোনা যায়। ‘দ্য সাবস্ট্যান্স’ দেখতে দেখতে তারকাদের নিয়ে বহুলচর্চিত শব্দগুলোই বারবার মনে পড়বে। এসব বিষয় আগেও নানাভাবে পর্দায় উঠে এসেছে। কিন্তু কোরেলি ফারজার বুদ্ধিদীপ্ত নির্মাণে ‘দ্য সাবস্ট্যান্স’ হয়ে ওঠে চলতি বছরের অন্যতম সেরা সিনেমা।
কানে স্বর্ণপামের দৌড়ে ছিল ‘দ্য সাবস্ট্যান্স’, শেষ পর্যন্ত জেতে সেরা চিত্রনাট্যের পুরস্কার। এরপর পুরস্কার জেতে টরন্টো উৎসবেও। সমালোচকেরা মনে করছেন, নিশ্চিতভাবেই আগামী অস্কারেও কয়েকটি শাখায় মনোনয়ন বাগাবে সিনেমাটি।