হারিয়ে গেল ‘বন্ধু’, প্রয়াত ‘ফ্রেন্ডস’ অভিনেতা
মনিকা, রস, রেচেল, জোয়ি, ফিবিকে রেখে চলে গেল চ্যান্ডলার, মাত্র ৫৪ বছর বয়সে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করলেন ‘ফ্রেন্ডস’ অভিনেতা ও কৌতুকশিল্পী ম্যাথিউ পেরি। সিএনএন ও বিভিন্ন মার্কিন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শনিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসে ম্যাথিউয়ের বাসভবন থেকে তাঁর নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়। আপাতত অভিনেতার আকস্মিক মৃত্যু নিয়ে তদন্ত চলছে। প্রাথমিক তদন্তে ধারণা, বাথটাবের পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
শনিবার লস অ্যাঞ্জেলসের বাড়িতে পিকেল বল খেলে ফেরেন ম্যাথিউ। তার পরই এই অভিনেতা তাঁর সহকারীকে কিছু জিনিসপত্র কিনতে বাইরে পাঠিয়ে দেন। ফিরে এসে ম্যাথিউয়ের সহকারী তাঁকে জাকুজিতে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেন। জরুরি সাহায্যের জন্য ৯১১-এ ফোন করেন। কিন্তু শেষরক্ষা আর হয়নি। ঘটনাস্থলে পুলিশ আপাতত কোনো রকম সন্দেহজনক কিছু পায়নি।
১৯৬৯ সালের ১৯ অগস্ট ম্যাসাচুসেটে জন্মগ্রহণ করেন ম্যাথিউ পেরি। অল্প বয়সেই অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে লস অ্যাঞ্জেলসে আসেন তিনি।
১৯৮৭ সালে ‘বয়েজ উইল বি বয়েজ’-এ প্রথম অভিনয় করার সুযোগ পান তিনি। তবে তাঁর অভিনয় জীবনের মাইলফলক ছিল ‘ফ্রেন্ডস’। ১৯৯৪ সালে এই টেলিভিশন সিটকম সিরিজ শুরু হয়। এতটাই জনপ্রিয়তা পায় ওই সিরিজ যে টানা ১০ বছর ধরে তা চলে। ১০ সিজন পর, ২০০৪ সালে শেষ হয় ‘ফ্রেন্ডস’। সবার কাছে ম্যাথিউ পরিচিত হয়ে ওঠেন তাঁর বিখ্যাত চরিত্র ‘চ্যান্ডলার বিং’ হিসেবেই। বলা চলে, খাতা-কলমে লেখা সেই চরিত্রকে অভিনয় গুণে প্রাণদান করেছিলেন তিনি।
দেশ–বিদেশের দর্শক তাঁকে ম্যাথিউ নয়, চিনেছিলেন চ্যান্ডলার নামেই। তাঁর সংবেদনশীল কৌতুকাভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন অনুরাগীরা। সূক্ষ্ণ রসবোধ, বুদ্ধিদীপ্ত সংলাপে অবলীলায় নজর কেড়ে নিয়েছিলন এই মার্কিন অভিনেতা।
বিশেষ করে মনিকা ও জোয়ির সঙ্গে চ্যান্ডলারের সমীকরণ দর্শকদের খুব বিনোদন দিয়েছে। বন্ধুত্ব ও প্রেমের মিশেলে চ্যান্ডলারের চরিত্রকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন ম্যাথিউ।
পর্দায় কৌতুক চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের আনন্দ দিলেও ব্যক্তিগত জীবনে খুব একটা সুখী ছিলেন না ম্যাথিউ। জনপ্রিয় এই অভিনেতার জীবনে বিতর্কও নিছক কম ছিল না।
১৯৯৭ সাল থেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন তিনি। মাঝে কিছুদিন সুস্থ হয়ে উঠলেও ২০০১ সালে আবার নেশার দুনিয়ার চলে যান। ২০১৩ সালে একটি সাক্ষাৎকারে ম্যাথিউ নিজেই মাদকাসক্তির কথা স্বীকার করেন এবং কীভাবে পর্দার ‘ফ্রেন্ডস’রা বাস্তব জীবনেও তাঁকে নেশা থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করেছিল, তা বর্ণনা করেন।
পরে তিনি ম্যালিবুতে তৈরি করেন ‘পেরি হাউস’, যা মাদকাসক্তি থেকে মুক্তি ও সুস্থ জীবনে ফিরতে সাহায্য করত যুব প্রজন্মকে। একাধিকবার নিরাময়কেন্দ্রে ভর্তি ছিলেন। জনসমক্ষে নিজের এই লড়াইয়ের কথা তুলে ধরেছিলেন তারকা। এমনকি, ম্যাথিউ জানান, ‘ফ্রেন্ডস’-এর শুটিং চলাকালে বারবার নাকি হতাশায় ডুবে যেতেন তিনি। যদিও গতকাল মরদেহ উদ্ধারের পর তাঁর বাড়িতে কোনো মাদকদ্রব্য পাওয়া যায়নি।