কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কীভাবে টম হ্যাঙ্কস ও রবিন রাইটের বয়স কমাল

`হেয়ার' ছবিতে টম হ্যাংকস ও রবিন রাইট। দেখে কে বলবে এখন তাঁদের বয়স যথাক্রমে ৬৮ ও ৫৮। ছবি: আইএমডিবি

পর্দায় অভিনয়শিল্পীদের বয়স কমানো–বাড়ানো নতুন কিছু নয়। ভারতীয় তারকা রজনীকান্ত ব্যাপারটাকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তবে এত দিন সে কাজে মূলত প্রস্থেটিক মেকআপই ব্যবহার করা হতো বেশি। আবার একই চরিত্রের বিভিন্ন বয়সের উপস্থাপনের জন্য সাধারণত ভিন্ন ভিন্ন অভিনয়শিল্পী নেওয়া হয়। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘হেয়ার’ নামের সিনেমায় পরিচিত এসব কৌশলকে রীতিমতো বুড়ো আঙুল দেখিয়েছেন রবার্ট জেমেকিস। কয়েক দশক ব্যাপ্ত ছবির গল্পে ‘ফরেস্ট গাম্প’ জুটি টম হ্যাঙ্কস ও রবিন রাইটকে দেখা গেছে তরুণ থেকে বৃদ্ধ বয়স অবধি। কৈশোর থেকে আশি

পেরোনো বয়স পর্যন্ত গল্পের পুরোটাতেই অভিনয় করেছেন হ্যাঙ্কস-রাইট জুটি। অথচ এখন তাঁদের বয়স যথাক্রমে ৬৮ ও ৫৮। রূপসজ্জায় নয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে পর্দায় তাঁদের বিভিন্ন বয়সের চেহারায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আর কাজটা করেছে ‘মেটাফিজিক’। তার জন্য অবশ্য প্রস্তুতিও কম নিতে হয়নি।

হেয়ার ছবিতে টম হ্যাংকস ও রবিন রাইট। ছবি: আইএমডিবি

হ্যাঙ্কস ও রাইটের পুরোনো চলচ্চিত্রগুলোর সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে পরিচিত করানো হয়েছে। সেখান থেকে তাঁদের বিভিন্ন বয়সের চেহারার সব তথ্য, বিভিন্ন মুখভঙ্গি, ত্বকের গঠন ও বিন্যাস, ভিন্ন ভিন্ন আলো ও কোণ থেকে দেখতে কেমন লাগে, এসব নিয়েছে মেটাফিজিক।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে অভিনয়শিল্পীদের বয়স কমানোর এটাই অবশ্য প্রথম উদাহরণ নয়। এর আগে মার্টিন স্করসেজির ‘দ্য আইরিশম্যান’-এ রবার্ট ডি নিরোকে দেখা গিয়েছিল বিভিন্ন বয়সে। পরে ‘ইন্ডিয়ানা জোন্স অ্যান্ড দ্য ডায়াল অব ডেসটিনি’তেও একই কৌশলে কমানো হয় হ্যারিসন ফোর্ডের বয়স। সেগুলোতে ব্যবহার করা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নাম ‘ফ্লাক্স’। আর দশটা দৃশ্যের মতোই দৃশ্যধারণ করে পরে পোস্ট-প্রোডাকশনের সময় বয়স চুরির কলাকৌশল করা হয়। সঙ্গে ইনফ্রারেড ক্যামেরা ব্যবহার করা হয় অভিনয়শিল্পীর চেহারার তথ্য ধারণ করতে। পরে সেখানে বসিয়ে দেওয়া হয় তাঁর পুরোনো কম বয়সী চেহারা।

আর এখানেই এক ধাপ এগিয়ে মেটাফিজিক। এর জন্য পোস্ট-প্রোডাকশন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় না। ‘হেয়ার’-এ যেমন দৃশ্যধারণের সময় ব্যবহার করা হয়েছে দুটি মনিটর। একটিতে দেখা গেছে আসল দৃশ্য। আরেকটিতে অভিনয়শিল্পীদের ভিন্ন বয়সের মুখ বসানো দৃশ্য। ফলে সাধারণ দৃশ্যধারণের মতোই পরিচালক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন ‘টেক’ বা দৃশ্যধারণ ঠিক হয়েছে কি না।

এতে করে অভিনয় যে খুব সহজ হয়ে গেছে, ব্যাপারটা মোটেও তেমন নয়। জেমেকিস নিজেই স্বীকার করেছেন, তিন বছর আগেও এই ছবি বানানো সম্ভব হতো না। কারণ, এ প্রযুক্তি ছিল না। কিন্তু হ্যাঙ্কস-রাইটের দারুণ অভিনয় ছাড়াও এটা অসম্ভব ছিল। কারণ, তাঁদের চট করে ৪০-৫০ বছর আগের বয়সে ফিরে যেতে হয়েছে। সে বয়সের প্রাণচাঞ্চল্য নিয়ে, সে অনুযায়ী শারীরিক ভাষায় অভিনয় করতে হয়েছে। এমনকি কথাও বলতে হয়েছে চড়া গলায়।

আরও পড়ুন

এমনিতে বক্স অফিসে তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি ‘হেয়ার’। তবে সিনেমার দুনিয়ায় নিশ্চিতভাবেই প্রযুক্তির নতুন এক দুয়ার খুলে দিল। যেমনি এর আগে করেছিল টম হ্যাঙ্কসের কণ্ঠ দেওয়া ‘টয় স্টোরি’। সেটা ছিল প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য থ্রিডি অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র।

তথ্যসূত্র: আর্জ টেকনিকা, ইউএস উইকলি