ফেসবুকেও কখনো কেউ বাজে মন্তব্য করে না, দেখা হলে বলে আপনি সালমানের নায়িকা...
ক্যারিয়ারে ৩৫টি সিনেমায় অভিনয় করে এখনো দর্শকদের কাছে পরিচিতি নাম চিত্রনায়িকা শিল্পী। জনপ্রিয়তা থাকার পরও হঠাৎ করেই অভিনয় থেকে দূরে সরে যান। দর্শকদের কাছ থেকে এখনো তাঁকে শুনতে হয় রোমান্টিক নায়িকা কখনো সালমানের নায়িকা। আজ শিল্পীর জন্মদিন। বিশেষ এই দিনে আলাপচারিতায় উঠে এল ক্যারিয়ারের নানা প্রসঙ্গ।
প্রশ্ন :
শুভ জন্মদিন। জন্মদিনটা এবার কী কারণে বিশেষ?
ধন্যবাদ। আমার কাছে জন্মদিন খুবই বিশেষ। এবার অনেক ঘটা করে আয়োজন করার ইচ্ছা ছিল। ভেবেছিলাম সিনেমা অঙ্গনের পরিচিত সবাইকে একত্র করব। কিন্তু হঠাৎ করেই আমার স্বামী জরুরি কাজে জার্মান যাওয়ায় আর কিছু করতে ইচ্ছা হয়নি। প্রিয় মানুষ কাছে নেই, জন্মদিনটায় মন খারাপ। সে যাওয়ার আগে বলে গেছে, মন খারাপ কোরো না। এসে দিনটি উদ্যাপন করব।
প্রশ্ন :
বললেন সিনেমা অঙ্গনের পরিচিতদের নিয়ে দিনটি বিশেষভাবে উদ্যাপন করবেন, সহকর্মীদের সঙ্গে কি যোগাযোগ আছে?
আমাদের সময়ের আমিন, বাপ্পা ভাই, শাবনাজ এদের সঙ্গে কমবেশি কথা হয়। সানির সঙ্গে পার্কে হাঁটতে গিয়ে দেখা হয়। সে আবার হোয়াটসঅ্যাপে মৌসুমীকে ফোনে ধরিয়ে দেয়। এ ছাড়া রুবেল ভাই, নূতন ভাবি, অঞ্জনা আপা, অরুণা দিদি, দিলারা জামান আপাসহ আরও অনেকের সঙ্গে কথা হয়। আমি অভিনয় ছাড়ার পর দূরে থাকার কথা ছিল। কিন্তু কেন যেন ফিল্মের সবাই আমাকে খুব পছন্দ করেন। ঘুরেফিরে সবাই আমাকে ফোন দেয়। আমিও সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখি।
প্রশ্ন :
কী নিয়ে আপনাদের কথা হয়?
মাঝখানে চলচ্চিত্রের অস্থির নির্বাচন নিয়েই বেশি কথা হয়েছে। কী সময় আমরা পার করেছি। এখন একটু থেমেছে। মনে হয়েছিল এমন একটা নির্বাচন এটা ছাড়া দুনিয়ায় আর কিছু নেই। সিনেমা অঙ্গন নিয়েই কথা বলি।
প্রশ্ন :
সিনেমা দেখেন?
মাঝেমধ্যে সিনেমা হলে যাই। সবাই বলছে শান সিনেমা নাকি ভালো হয়েছে। পার্কে হাঁটতে গিয়েও কয়েকজনের মুখে শুনেছি। সিয়াম নাকি ভালো করেছে। সিনেমাটা কাল দেখব।
প্রশ্ন :
দীর্ঘদিন সিনেমা থেকে দূরে, সিনেমা কতটা টানে?
সিনেমায় অভিনয় করব, যাই কাজ করি এ জন্য টানে না। কিন্তু যখন শুটিং করেছি সেই সোনালি সময়, যাদের সঙ্গে কাজ করেছি, তাদের মিস করি। কী সুন্দর সিনেমা দিন ছিল। এফডিসিতে কাজ আর কাজ। মানুষ মানুষ। এফডিসিতে কাজ করে কত মানুষের সংসার চলেছে। চলচ্চিত্র শিল্পীরা কিন্তু হাত পেতে খেতে চায় না। তারা কাজ চায়। তখন সবাই কাজ করত। কত ব্যস্ততা। মাঝেমধ্যে মনে হয়, চলচ্চিত্রের অবস্থা কী থেকে কী হয়ে গেল। তখন খুবই খারাপ লাগে।
প্রশ্ন :
আপনি যখন সিনেমা থেকে বিদায় নেন তখন অশ্লীলতা ছিল, পরে অশ্লীলতা দূর হয়, তারপর সিনেমা কি খুব বেশি এগিয়েছে?
একদিনে তো চলচ্চিত্র খারাপ জায়গায় নামেনি। আমাদের পরে যারা আসছে, কিছু প্রযোজক কিছু ডিরেক্টর চলচ্চিত্রটাকে নোংরা জায়গা নিয়ে গেছে। কিছু আর্টিস্ট পয়সা আয় করার জন্য চলচ্চিত্রকে নোংরা জায়গায় নিয়ে গেছে। আমাদের পরে অনেক জুনিয়র নায়িকারা বলে তারা এক শ ছবিতে অভিনয় করেছে। এসব জুনিয়র নায়িকারা কদিন শুটিং করেছে, কয়দিন ডাবিং করেছে? শিল্পমাধ্যমে সহজে, শর্টকাটে কিছু হয় না। হুট করে শুটিং হয় না। এখন ১০–১৫ দিনে শুটিং শেষ হয়। আমরা এই সময়ে দুটি গানের শুটিং করেছি। আমি ৫ বছর অভিনয় করে ৩৫টি সিনেমায় কাজ করেছি। গানের রেকর্ডিং থেকে রিহার্সাল সব জায়গায় সময় দিয়েছে। আজ নায়ক হিসেবে রুবেল এসব কথা বললে মানায়। সে দীর্ঘ সিনেমার সঙ্গে, দেড়–দুই শ সিনেমা করতেই পারে।
প্রশ্ন :
আপনি সিনেমা ছাড়ার পর কখনো কি মনে হয়েছে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?
কখনোই মনে হয়নি সিনেমা ছেড়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি। চলচ্চিত্র ছাড়ার পর দেখতাম আমরা সোনালি যুগ থেকে প্লাটিনাম যুগে পৌঁছেছি, এত ভালো ভালো ছবি হচ্ছে, আমি কেন চলচ্চিত্র ছাড়লাম, তখন খারাপ লাগত। কিন্তু এখন আগের চেয়েও ভালো ছবি হয় না। চলচ্চিত্র ছাড়া নিয়ে কোনো দুঃখ নেই।
প্রশ্ন :
৫ বছরের ক্যারিয়ার নিয়েই আপনি খুশি?
আমি ক্যারিয়ার নিয়ে খুবই খুশি। মেকআপ ছাড়া বাইরে গেলেও এখনো মানুষ ঘিরে ধরে। কথা বলে। আমার সিনেমার প্রশংসা করে, ছবি তুলতে চায় এসবই আমার সার্থকতা।
প্রশ্ন :
সচরাচর সবচেয়ে দর্শকদের কাছে শুনতে হয় কী?
আপু, আপনার ছবি দেখেছি, আপনি সালমানের নায়িকা, আপনি আবার ছবি করেন। আর আমার ফেসবুকেও কখনো কেউ বাজে মন্তব্য করে না। তাঁরা সবাই আমার সিনেমা, আমার অভিনয় প্রশংসা করে মন্তব্য করেন, কেন ফিল্ম ছেড়েছি জানতে চান। আমাদের প্রিয় নায়িকা, পছন্দের নায়িকা এমন মন্তব্য দেখলেই মনটা ভালো হয়ে যায়।
প্রশ্ন :
আপানার অভিনীত সিনেমার মধ্যে আপনার কাছে সেরা সিনেমা কোনটি?
অভিনয়ের দিক থেকে যদি বলি তাহলে ‘প্রেমের নাম বেদনা’, ‘প্রিয়জন’, ‘বাবা কেন চাকর’—আসলে আর্টিস্টের কাছে সব কাজই সেরা। এ ছাড়া দর্শক ‘মিথ্যার মৃত্যু’ সিনেমার অভিনয় নিয়ে কথা বলেন। বাবা কেন চাকর, প্রেমের নাম বেদনাসহ অনেক সিনেমার গান নিয়ে প্রায়ই বিভিন্ন কথা শুনি।
প্রশ্ন :
সেই সময়, নায়িকা হিসেবে কী ধরনের কথা শুনতেন?
আমাকে রোমান্টিক নায়িকা বলত। তখন টিনএজার ছিলাম। রোমান্টিক চরিত্রগুলো বেশি করেছি। আমাদের এখানে তো বয়সের সঙ্গে গল্পের চরিত্রগুলো প্রাধান্য পায় না। কাজের ভ্যারাইটি ছিল না।
প্রশ্ন :
মেয়ে আর ছেলেকে নিয়ে দিনটা কাটছে?
হ্যাঁ। সেই সকাল ছয়টায় ঘুম থেকে উঠেছি। সবার স্কুল বন্ধ, তাদের স্কুল খোলা। তারা রাতে ও সকালে আমাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছে। স্কুলে প্রবেশ করার সময় জানিয়ে গেছে, ফিরে তারা আমাকে সারপ্রাইজ গিফট দেবে। তারা অনেক কিছু আঁকবে, দেখে আমার দিনটাই আরও সার্থক হয়ে যাবে। সেই অপেক্ষায় আছি।
প্রশ্ন :
সন্তানেরা কী ছবি দেখে?
ছবি তেমন দেখে না। মেয়ে বলে বাবা ওই গানটা দাও, আর ছেলে মাকে দেখে লজ্জা পায়। কারণ, আমাকে গান গাওয়া দেখলে তার লজ্জা পায়। কিন্তু মেয়ে বাবার কাছ থেকে আমার গান বের করিয়ে নেয়। সেগুলো গুনগুন করে গায়।