প্রমিজ, এই ভুল আর করব না
শিশুশিল্পী প্রার্থনা ফারদিন দীঘি এখন চিত্রনায়িকা। তাঁর প্রথম ছবি ‘তুমি আছো তুমি নেই’ মুক্তি পাচ্ছে আগামী শুক্রবার। ইতিমধ্যে ছবিটির ট্রেলার প্রকাশ পেয়েছে। তবে এ ট্রেলার নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা বেশি হচ্ছে। নতুন ছবি, ট্রেলার নিয়ে কথা হলো তাঁর সঙ্গে।
প্রশ্ন :
ইউটিউবে ‘তুমি আছো তুমি নেই’ ছবির ট্রেলার প্রকাশিত হওয়ার পর আপনি কখন দেখেছেন?
৪ মার্চ এটি প্রকাশিত হয়। ওই সময়ে আমি সুমন ধরের ‘শেষ চিঠি’ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের শুটিংয়ে ছিলাম। আমারই এক সহকর্মীসহ কয়েকজন ট্রেলারটি দেখছিলেন। ট্রেলারের শব্দ ও সংলাপ শুনেই বুঝে গিয়েছিলাম, তাঁরা আমার ছবির ট্রেলারই দেখছেন আর হাসছেন। শুটিংয়ের মাঝেই দৌড়ে গিয়ে তাঁদের কাছ থেকেই ট্রেলারটি দেখার চেষ্টা করি। কয়েক সেকেন্ড দেখেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। আমি পুরাই আপসেট হয়ে পড়ি। তাঁদের বললাম, ভাই, ট্রেলারটি বন্ধ করেন, তা না হলে আমার শুটিংয়ে প্রভাব পড়বে, কাজ নষ্ট হবে।
প্রশ্ন :
পরেও পুরো ট্রেলার দেখেননি?
ওই দিন শুটিং শেষ হয় ভোর পাঁচটায়। পুরো সময়টা মন খারাপ ছিল। বিষয়টি বুঝতে পেরে শুটিং শেষে পরিচালক ও সহশিল্পী মিলে আমাকে ঘুরতে নিয়ে যান। একসঙ্গে সবাই সকালের নাশতা করি। এরপর সকাল নয়টায় বাসায় ফিরি। ফিরেই পুরো ট্রেলার দেখি। ওভারঅল ট্রেলারটি ভালো লাগেনি। ভীষণ আপসেট হয়ে পড়ি। ট্রেলার প্রকাশের পর এমন পরিস্থিতির কারণে গত তিন দিন সাংবাদিকদের কারও ফোন ধরিনি। হতাশার মধ্যে পড়ে গেছি।
প্রশ্ন :
ছবির শুটিং করার সময় এমন অবস্থা হবে বুঝতে পেরেছিলেন কি?
না না, বুঝিনি। দেলোয়ার জাহান ঝন্টু আঙ্কেল একজন গুণী নির্মাতা। তা ছাড়া শুটিং শেষ করে আমি যখন ডাবিং করলাম, তখনো কিন্তু মনে হয়নি এত খারাপ হবে কাজটি। এই ট্রেলার দেখার পর আমার আত্মবিশ্বাস কমে গেছে। প্রায় আড়াই মিনিটের এই ট্রেলার তো পুরো ছবিকে রিপ্রেজেন্ট করে না।
প্রশ্ন :
এমন তো হতে পারে, ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে ভালো যাচ্ছে, তাই নয়?
তা কীভাবে সম্ভব! ছবির ট্রেলার দেখেই যদি দর্শকেরা হতাশ হন, তাহলে তাঁরা কেন সিনেমা হলে যাবেন? ইতিমধ্যে ট্রেলার দেখেই ছবির ওপর দর্শকের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। আর আমি বাস্তবতায় বিশ্বাসী।
প্রশ্ন :
এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ছবিটি নিয়ে দর্শককে কিছু বলতে চান আপনি?
কিছুই বলতে চাই না। এই ট্রেলার দেখার পর দর্শকদের কোনো আশা দিতে পারি না। ছবিটি দেখতে উৎসাহিত করতে পারি না। আমার নিজেরই তো কোনো প্রত্যাশা নেই ছবিটি নিয়ে। কারণ, মুক্তির পরে ছবিটি ভয়াবহ অবস্থায় পড়তে পারে। তখন যাতে আমি বিষয়টি সহজভাবে নিতে পারি।
প্রশ্ন :
বেশ কয়েক দিন ধরে ট্রেলারটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ট্রল হচ্ছে। কেউ আবার এ–ও বলছেন, প্রথম ছবি হিসেবে ‘নায়িকা দীঘি’র এমন কাজ করা ঠিক হয়নি। এ ধরনের মন্তব্য কি আপনার নজরে এসেছে?
যেহেতু আমি ফেসবুক ব্যবহার করি, কিছু কিছু তো চোখে পড়ছেই । তবে এসব এখন আর দেখছি না। আমিও স্বীকার করছি, ভুল করেছি। একটি জিনিস মাথায় কাজ করছে, আমার বাবা দীর্ঘদিন সিনেমায় আছেন, আমারও সিনেমা নিয়ে চোখ–কান খোলা আছে, কিন্তু আমরা দুজনই এ সময়ে এসে কীভাবে ভুল করলাম, মাথায় আসছে না। আরেকটি জিনিস, অনেকেই ভুল করছেন, ‘তুমি আছো তুমি নেই’ আমার প্রথম ছবি নয়। প্রথম ছবি ‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়া ভাই’। ‘তুমি আছো তুমি নেই’ ছবিটি আমার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি হবে।
প্রশ্ন :
‘তুমি আছো তুমি নেই’ ছবিতে কাজ করতে আগ্রহী হলেন কীভাবে?
আমার এবং বাবার সঙ্গে দেলোয়ার জাহান ঝন্টু আঙ্কেলের ভালো সম্পর্ক। ছবিটি করার আগে তিনি বাবাকে বলেছিলেন, শুটিং করতে করতে মরেও যেতে পারেন। আমাকে নিয়ে শেষ ছবিটি করতে চান তিনি। আমি এবং বাবা দুজনই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে কথাটা ফেলতে পারিনি। তিনি সিনেমার গুণী মানুষ, কাজটি না করার কোনো পথ ছিল না। আবেগ থেকেই কাজটি করা। কিন্তু তাঁর সিনেমার ট্রেলার দেখার পর মানুষের প্রতিক্রিয়া এত ভয়াবহ হবে, বুঝিনি। তবে আমার মনে বলছে, ট্রেলার এত খারাপ হবে, ঝন্টু আঙ্কেলও বুঝতে পারেননি।
প্রশ্ন :
এই ছবিতে কাজ করে নিজের কাছে অনুতপ্ত লাগছে কি?
অনুতপ্ত নই। তবে বলব, কাজটি করা আমার ভুল হয়েছে। আর ভুল থেকেই মানুষ শিক্ষা নেয়, ঘুরে দাঁড়ায়। আমি প্রমিজ করছি, এই ভুল আর করব না। কোনো দিনই করব না। যদি কখনো করেই ফেলি, সেদিন সিনেমা ছেড়ে দেব।
প্রশ্ন :
এ অবস্থায় সিনেমাটি দেখতে ১২ মার্চ প্রেক্ষাগৃহে যাবেন না?
অবশ্যই যাব। তবে যেদিন ছবিটি মুক্তি পাবে, ওই দিন আমার অন্য ছবির শুটিং আছে। নায়িকা হিসেবে প্রথম নিজেকে পর্দায় দেখব, ব্যাপারটা নিয়ে নিজের মধ্যে যে উন্মাদনা ছিল, সেটা এখন নেই।
প্রশ্ন :
আর কী কী কাজ করছেন?
‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়া ভাই’ ছবিটি মুক্তির অপেক্ষায়। ‘শেষ চিঠি’ নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের শুটিং চলছে। দুটি ওয়েব ফিল্মে অভিনয়ের কথাবার্তাও চলছে। চূড়ান্ত না হলে বলা ঠিক হবে না।