অনেকেই পকেটে মাস্ক নিয়ে বাবুগিরি দেখান
ঈদের পর আবার নাটকের কাজে ব্যস্ত হয়েছেন অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম। তাঁর হাতে রয়েছে করোনায় স্থগিত হওয়া পাঁচটি ছবির কাজ। গত মাসে সাংগঠনিক কাজের এক বছর পূর্ণ করেছেন তিনি। ক্যারিয়ার, সাংগঠনিক কাজ ও অন্যান্য বিষয়ে কথা বললেন এই অভিনেতা ও অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি।
প্রশ্ন :
নিউ নরমালে শুটিং কতটা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন?
এখনো পুরোমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের অনেকে অতি উৎসাহী হয়ে মনে করছেন, করোনা চলে গেছে। তাঁদের মধ্যে গা–ছাড়া একটা ভাব দেখছি। ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ঝুঁকি আছে।
প্রশ্ন :
তার মানে অনেকেই শুটিংয়ে সচেতন নন?
অনেকেই নিয়ম মেনে শুটিং করছেন। কিছু ক্ষেত্রে কেউ আবার সচেতন নন। নিয়ম মানেন না। অনেক ইউনিটে গিয়ে মন খারাপ হয়েছে। রাগারাগি করেছি। পরে তারা তাড়াহুড়া করে কিছুটা আয়োজন করেছে। অনেকেই পকেটে মাস্ক নিয়ে বাবুগিরি দেখান। স্বাস্থ্যবিধি মানতে সচেতনতা দরকার। এটা শাস্তি দিয়ে মানানো যায় না।
প্রশ্ন :
করোনাকালীন সাংগঠনিক কাজ কতটা ঝুঁকির ছিল?
পাঁচ মাস ধরে যেসব শিল্পী ও সহকর্মী আর্থিক সংকটে পড়েছিলেন, তাঁদের ২০ লাখ টাকার খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে পাশে থেকেছি রাতদিন। এমনকি যাঁরা করোনা বা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁদের পাশেও থেকেছি। আমরা ঝুঁকি নিয়ে বাড়িতে বাড়িতে খাবার পাঠিয়েছি। আমাদের ৪টি আন্তসংগঠন এক হয়ে ১৬টি সংগঠনের জন্য কমন ফান্ড গঠন করে সহায়তা করেছি। নাটক ও সংস্কৃতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশ–বিদেশের অনেকেই আমাদের সহায়তা করেছেন।
প্রশ্ন :
গত মাসে সাংগঠনিক দায়িত্ব এক বছর পূর্ণ হলো, কাজে কতটা সফল?
সাংগঠনিকভাবে একটি সংগঠনকে সচল রাখার ক্ষেত্রে অভিনয়শিল্পী সংঘ অন্যান্য সংগঠনের কাছে উদাহরণ হতে পারে।
প্রশ্ন :
অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর কতটা সফল?
বিশ্বব্যাপী এ দুর্যোগ অন্য সময়ে আসেনি। এ জন্য তুলনামূলক বিবরণে যেতে চাই না। এটুকু বলব, আমরা কাজ দিয়েই প্রমাণ করেছি। বর্তমান মহামারি পরিস্থিতিতে অভিনয়শিল্পী সংঘ শিল্পীদের পাশে থাকতে পেরেছে, এটাই আমাদের অর্জন।
প্রশ্ন :
একজন অভিনেতা হিসেবে গত বছর থেকে এ বছরের ঈদের নাটকে কী ধরনের পরিবর্তন চোখে পড়েছে?
গল্পে বৈচিত্র্য এসেছে। পারিবারিক চরিত্র ফিরে এসেছে। স্টারদের ওপর নির্ভর করে এককভাবে চলত, সেই কনটেন্টের পরিবর্তন হয়েছে। চার–পাঁচ বছর ধরে নাটকে এ ধরনের এক্সপেরিমেন্ট হয়নি। করোনা আমাদের শিখিয়েছে, গল্প পরিবর্তন করে কীভাবে দর্শকদের কাছে যাওয়া যায়। সুপারস্টারদের বাইরেও অনেক গল্প দর্শকপ্রিয়তা পাচ্ছে।
প্রশ্ন :
চার–পাঁচ বছর পর নাটকে এ ধরনের এক্সপেরিমেন্টকে কীভাবে দেখছেন?
এটা ইতিবাচক হিসেবে দেখি। আমি কাউকেই ছোট করছি না। ভালো অভিনয় না করলে কেউ তারকা হতে পারেন না। তাঁদের প্রতি সম্মান রেখে বলছি, আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে আরও অনেক প্রতিভাবান অভিনেতা আছেন। তাঁদের ঠিকভাবে দর্শকের কাছে তুলে ধরা হয়নি। সেই সুযোগগুলো থাকলে অনেক তারকা তৈরি হবে। তাহলে ভবিষ্যতে কয়েকজন তারকার ওপর নির্ভর করতে হবে না। তাহলে নির্মাতাদের জন্য বাধ্যবাধকতা থাকবে না। ওঁকেই নিতে হবে, সেই জায়গা থেকে মুক্তি পাবে ইন্ডাস্ট্রি।
প্রশ্ন :
নির্মাতারা প্রতিভাবান সেসব শিল্পীকে নিয়ে কাজ করছেন না কেন?
অনেক ক্ষেত্রে নির্মাতাদের বাধ্য করা হয়। আমি সেসব টেলিভিশনের নাম বলতে চাইছি না। তারা আগেই বলে দেয়, অমুককে শিল্পীকে নিলে কাজ দেবে। সেই নির্মাতা তখন হন্যে হয়ে ওই তারকাকে খোঁজেন।
প্রশ্ন :
তাহলে এভাবে কি তারকাদের পারিশ্রমিক বাড়ছে?
যখন তারকা দেখেন তাঁকেই দরকার, তখন তিনি পারিশ্রমিক বাড়ানোর সুযোগ পান। তারকাদের উচ্চ পারিশ্রমিক দিতে গিয়ে নাটকের অন্যান্য চরিত্র গল্প থেকে বাদ দিতে হয়। টেলিভিশন ও এজেন্সির কাছে অনুরোধ করব, গল্পে যাকে প্রয়োজন তাকে নিন। এই উপমহাদেশের দর্শক ভালো গল্প খোঁজেন। ভালো গল্পের চরিত্র অনুযায়ী অভিনেতা–অভিনেত্রীই সবচেয়ে দামি শিল্পী।
প্রশ্ন :
করোনায় কাজের ক্ষেত্রে কোনো সংকট তৈরি হতে পারে?
কাজ কমে যাচ্ছে। শিল্পীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আমি নিজের উদাহরণ দিই, আগে ১৫ থেকে ২০ দিন কাজে ব্যস্ত থাকতাম, সেখানে এখন মাসে ৭ থেকে ৮ দিন কাজ করি।
প্রশ্ন :
কোন অভিনেত্রীর সঙ্গে পর্দা ভাগ করতে চান?
আমি সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে অনেক কাজ করেছি, আরও কাজ করতে চাই। হলিউড–বলিউডের অনেক পছন্দের তারকার সঙ্গে কাজ করতে চাই। একজনের নাম বলতে পারব না।