অঞ্জনা আবারও বললেন, ‘অবশ্যই সন্ধ্যার পর মেয়েদের বের হওয়া উচিত নয়’

‘সন্ধ্যার পর শুধু পরীমনিই নয়, কোনো মেয়েরই বের হওয়া ঠিক নয়,’ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সংবাদ সম্মেলনে অঞ্জনার এ কথা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা–সমালোচনা চলছে। নারী হয়ে নারীবিরোধী এমন একটা কথা কেন বললেন জ্যেষ্ঠ অভিনয়শিল্পী?

চিত্রনায়িকা অঞ্জনাপ্রথম আলো

প্রশ্ন :

আপনি বলেছিলেন সন্ধ্যার পর পরীমনি কেন, কোনো মেয়ের বাসা থেকে বের হওয়া ঠিক নয়।

অবশ্যই সন্ধ্যার পর মেয়েদের বের হওয়া উচিত নয়। আমি এটা ভেবে বলেছি। সন্ধ্যার পর বের হলে বোন বা অন্য কোনো সঙ্গী নিয়ে যেন বের হয়। একা বের হবে না। তবে একটা মেয়ের অফিস থাকতে পারে, চাকরি থাকতে পারে, কাজ থাকতে পারে, গার্মেন্টসের মেয়েরা আছে—তারা তো কাজ করবে। কিছুদিন আগে গার্মেন্টসের একটা মেয়ে ধর্ষণের শিকার হলো। সে তার বুদ্ধিমত্তায় ছাড়া পেয়েছে। ধর্ষণকারীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এ রকম তো অহরহ হচ্ছে। শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা পৃথিবীতে এমন ঘটনা ঘটছে। আমি তো বলছি না, কাজকর্ম বন্ধ করে মেয়েরা ঘরে বসে থাকবে। আমি বলছি, সন্ধ্যার পরে যেন বের না হয়।

চিত্রনায়িকা অঞ্জনা
প্রথম আলো

প্রশ্ন :

সন্ধ্যার পর কাজ থাকলে কী করবে?

কাজ থাকলে কাউকে সঙ্গে নিয়ে যাবে।

চিত্রনায়িকা অঞ্জনা
প্রথম আলো
চিত্রনায়িকা অঞ্জনা
প্রথম আলো

প্রশ্ন :

কাউকে সঙ্গে না নিলে বের হবে না? একজন পুরুষ সন্ধ্যায় বা রাতে যখন বের হয়, তখন তো কাউকে নিয়ে যেতে হয় না?

নারীদের ঘটনা তো অন্য রকম। এটা শুধু বাংলাদেশে নয়, ইন্ডিয়াতে ঘটছে অহরহ। সেদিন দেখলাম, ফ্লোরিডায় একজন নারী সহিংসতার শিকার হয়েছেন।

একটি সিনেমার দৃশ্যে

প্রশ্ন :

তার মানে নারী সঙ্গী না পেলে বের হবে না?

আমি সেটা বলছি না। এখনকার অস্থিরতার জন্য এমনটা বলেছি। একটা সময় যখন ইন্ডিয়াতে যেতাম, ১৫ থেকে ২০ বছর আগে, সারা দিন কেনাকাটা করতাম, কখনো বোন থাকত, কখনো একা। এরপর এয়ারপোর্ট থেকে ট্যাক্সি নিয়ে চলে আসতাম। এখন তো সেটা সম্ভব হচ্ছে না।

প্রশ্ন :

এটা কি নারীর সমস্যা?

এটা কোনো অবস্থায় নারীর সমস্যা নয়। এটা আমাদের মানসিকতার সমস্যা। পরিবেশ–পরিস্থিতির সমস্যা।

চিত্রনায়িকা অঞ্জনা
প্রথম আলো

প্রশ্ন :

কাদের মানসিকতা?

যারা মেয়েদের প্রতি নোংরা মানসিকতা পোষণ করে, তাদের সমস্যা। রাতে বের হওয়ায় সমস্যা না, কিন্তু অ্যাফেক্টেড হয়ে গেলে সমস্যা—সেটাই বলতে চেয়েছি। সারা দিন যারা ব্যাংকে, ফ্যাক্টরিতে, গার্মেন্টসে, কোম্পানিতে কাজ করে—রাতে তো তাদের কাজ নেই। একমাত্র শপিং করা, বাজার করা ছাড়া কোনো কাজ নেই। অনেক গার্মেন্টস কিন্তু সারা রাতও আছে। যেই মেয়েরা ৯-১০টার সময় দল বেঁধে যাচ্ছে যাচ্ছে, তারা সকালে বাসায় ফিরছে। আমরা দেখছি গার্মেন্টসের মেয়েরা বেশি অ্যাফেক্টেটে হচ্ছে। পুরুষ যাঁরা সমাজে আছেন, তাঁদের বুঝতে হবে মেয়েরা কাজ করছে, তাই তাদের বাইরে থাকতে হচ্ছে। সব সময় তো প্রশাসন, পুলিশ দিয়ে সমস্যা ট্যাকল করা যাবে না। নিজেকেও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানে রাতেও নারীদের চাকরি করতে হয়, যদি বাসের ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে ভালো। না হলে মেয়েরা রাতে বের হলে একা একা কীভাবে যাবে, সঙ্গী ছাড়া। সমাজব্যবস্থা এখন সারা পৃথিবীতে অস্থির হয়ে গেছে। এটা আমাদের সমাজব্যবস্থার সমস্যা।

চিত্রনায়িকা অঞ্জনা
প্রথম আলো

প্রশ্ন :

এমনি এমনি ঘুরতে মন চাইলে কী করবে?

একা ঘোরাটা অপরাধ নয়। নারীদের স্বাধীনতা থাকবে। কিন্তু নিরাপত্তার স্বার্থে আরেকজন মেয়ে থাকল, দুজন থাকলে ভালো। আমাদের নিরাপত্তা আমাদেরই নিশ্চিত করতে হবে। একটা মেয়ে রাত ১১টায় বের হয়ে অ্যাফেক্টেড যখন হচ্ছে, তখন বুঝতে হবে, কখন বের হব, কখন হব না। সন্ধ্যার পরে বের হওয়ার মতো নারীদের পরিবেশ আমরা তৈরি করে দিতে পারিনি। কারণ, আমাদের মানসিকতার সমস্যা। কেউ তৈরি করে দিতে পারবে না, এটা আমাদেরই ঠিক করতে হবে। সবকিছু সরকারের আশায় বসে থাকব নাকি। একটা মেয়ে কাজ শেষ করে সন্ধ্যার পর যাচ্ছে, সব সময়ও যে সঙ্গী নিয়ে যাবে তাও তো না।

চিত্রনায়িকা অঞ্জনা
প্রথম আলো