মায়ের কাছ থেকে অন্যের পাশে দাঁড়ানোটা শিখেছি: মুশফিক
‘কলিজার আধখান’ নাটক দিয়ে প্রশংসা পাচ্ছেন অভিনেতা মুশফিক আর ফারহান। মিফতাহ আনানের পরিচালনায় নাটকে ফারহানের সহ-অভিনেত্রী তানজিন তিশা। সাম্প্রতিক কাজ ও ব্যক্তিগত নানা প্রসঙ্গে বিনোদনের মুখোমুখি হলেন এই অভিনেতা।
প্রশ্ন :
অনেকটা সময় আপনাকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না, ব্যস্ত?
আমি ব্যস্ত নই। তিন দিন ধরে অসুস্থ। জ্বর-ঠান্ডা। এ জন্য শুটিং রাখিনি। ঘুমাচ্ছিলাম।
প্রশ্ন :
ডেঙ্গু বা অন্য কোনো শারীরিক পরীক্ষা করিয়েছেন?
কিছু পরীক্ষা করিয়েছি। এখন আবার পরীক্ষা করানোর জন্যই বাইরে যাচ্ছি। শারীরিক অবস্থা নিয়ে একটু চিন্তায় আছি। সবার কাছে দোয়া চাই।
প্রশ্ন :
‘কলিজার আধখান’ নাটকটি ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে ২ নম্বরে রয়েছে, নাটকটি নিয়ে প্রত্যাশা কেমন ছিল?
খুবই কম নাটকে এমন পরিশ্রম করতে হয়েছে। এই নাটকের শুটিং যে গ্রামে করেছি, সেখানে বসার জায়গা নেই, খাওয়ার জায়গা নেই, ফ্যান—কিছু ছিল না। শত শত মানুষের মধ্যে শুটিং করতে হয়েছে। এর মধ্যে আবার একজন শুটিং দেখতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার সব রকম ব্যবস্থা করেছি। তিশা, পরিচালকসহ আমাদের সবাইকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। সেই নাটক দর্শকের কাছ থেকে প্রশংসা পাচ্ছে। সব পরিশ্রম এখানেই সার্থক।
প্রশ্ন :
নাটকের কোন প্রতিক্রিয়াটি আপনাকে মুগ্ধ করেছে?
এক নিঃসন্তান দম্পতির গল্প এটি। নাটকটি দেখে হাজার হাজার দর্শক কমেন্ট করেছেন। অনেক কমেন্ট পড়ে কেঁদেছি। গল্পটি দিয়ে যে দর্শকের মনে দাগ কাটতে পেরেছি, সেটাই আমার বড় প্রাপ্তি।
প্রশ্ন :
আপনার সঙ্গে তানজিন তিশার জুটি দর্শকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে...
আমি প্রায়ই বাইরে গেলে ভক্তদের কাছ থেকে আমাদের জুটির কথা শুনি। তাঁরা আমাদের একসঙ্গে দেখতে চান। পরে আমাদের কী নাটক মুক্তি পাবে, সেটা জানতে চান। অনেক পরিচালকও আমাদের জুটি হিসেবে ভাবছেন। সবাইকে বলি, ভালো গল্প আর চরিত্র মিলে গেলে কাজ করব।
প্রশ্ন :
ঈদের পর থেকে কি কাজে কিছুটা অনিয়মিত?
ঈদের পর হঠাৎ করেই আমার ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপক স্ট্রোক করে মারা যায়। দীর্ঘ সাত বছর সে আমার সঙ্গে ছিল। আমরা সব সময় একসঙ্গে থাকতাম। সে ছিল আমাদের পরিবারেরই সদস্য। এক মাস আমি এই শোক থেকে বের হতে পারিনি। শুটিং তো দূরের কথা। ওর পরিবার নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। সে মারা যাওয়ার পর সেসব দায়িত্ব পালন করেছি। তার মা-বাবার জন্য একটা পাকা ঘর করার ইচ্ছা ছিল। সেই ঘর আমি বানিয়ে দিয়েছি। ওর বাবা জমি লিজ নিয়ে কৃষিকাজ করতেন। তাদের অ্যাগ্রো খামার করে দিচ্ছি। এমনও হয়েছে, আমার জন্মদিনের কেক রাত ১১টা ৫৯ মিনিটে কেটে রওনা দিয়েছি তার গ্রামের বাড়ি পাবনায়। এসব করতে গিয়ে অনেক কাজ করিনি।
প্রশ্ন :
শুনেছি, শুটিংয়ের প্রোডাকশন বয় বা অন্যান্য কলাকুশলী বিপদে-আপদে আপনাকে পাশে পান....
আমার মায়ের কাছ থেকে অন্যের পাশে দাঁড়ানোটা শিখেছি। এটা শিল্পী হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে করার চেষ্টা করি। মানুষকে সাহায্য করলে কমে না। আমার আশপাশের মানুষ খারাপ থাকলে আমার অস্থির লাগে। আমার পাশে বসে যে মানুষটা হাসত, সে হাসছে না, অসুস্থ, এটা আমি নিতে পারি না। আলাউদ্দিন লাল নামের একজন অভিনয় করেন। তাঁর বয়স ৭৫-এর কাছাকাছি। কাজি, শ্বশুরসহ অনেক চরিত্র অভিনয় করেন। সেই লোকটা আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। অনেকে শিল্পীর কাছে টাকা চেয়েছিলেন। তখন আমি দেশের বাইরে ছিলাম। পরে দেশে এসে শুনে তাঁকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। আমি মনে করি, আমাদের উচিত একজন শিল্পীর যথাযথ সম্মান রেখে পাশে দাঁড়ানো। পরে আমি তাঁর দায়িত্ব নিয়েছি। দুই দিন পরে তিনি সুস্থ হন।
প্রশ্ন :
নাটকের মানের প্রশ্নে অনেকেই ১০-১৫ বছর আগের নাটকের সঙ্গে তুলনা করেন...
১০-১৫ বছর আগের সময়ের সঙ্গে মেলালে তো হবে না। তখন সময়টা আলাদা ছিল। ভালো কাজ করেছেন অভিনয়শিল্পীরা। এখনো ভালো কাজ হচ্ছে। আমার মনে হয়, এই সময়ে থেকে এই সময়ের দর্শকদের জন্য সেরা কাজটি পৌঁছানোর জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। শুধু তা-ই নয়, আমার পরে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদেরও বলেছি ভালো কাজ করতে। দর্শকের রুচি বদলে গেছে। এটা যাঁরা প্রশ্ন করেন, তাঁদের মনে রাখা উচিত।
প্রশ্ন :
সহকর্মীদের অনেকেই ওয়েব ফিল্ম বা সিনেমায় নাম লেখাচ্ছেন, আপনার পরিকল্পনা কী?
বেশ কিছু নির্মাতার সঙ্গে কথা হচ্ছে। এটুকু বলব, সুখবরটা শিগগিরই দেব।