পরিচিতজনদের মধ্যে যাঁরা ছবিটা দেখেছেন, তাঁরা কী বলছেন আপনাকে?
নাসির উদ্দিন খান : কেউ বলেছেন দারুণ হয়েছে, ফাটাইয়ে দিয়েছেন, মানে প্রশংসা করছেন আরকি। সংলাপের প্রশংসা করেছেন। আসলে ‘৮৪০’-এর সংলাপ চমৎকার। রাজনীতি নিয়ে একটা সংলাপ ছিল, ‘রাজনীতি খুব খারাপ জিনিস, এখানে অজগর সাপরে কোলবালিশ বানাইয়ে জড়াইয়ে ধরে শুয়ে থাকতে হয়।’ অনেকে আবার ফেসবুক পোস্টে নেতিবাচক মন্তব্যও করছেন।
প্রথম আলো :
বলা হচ্ছে, ‘৮৪০’ হচ্ছে ১৭ বছর আগের ‘৪২০’ ধারাবাহিকের ডাবলআপ। ‘৪২০’–এ কেন্দ্রীয় দুটি চরিত্রে মোশাররফ করিম ও লুৎফর রহমান জর্জ অভিনয় করেছেন। ‘৮৪০’-এর ট্রেলার প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই দুই অভিনয়শিল্পীকে খুঁজেছেন অনেকে...
নাসির উদ্দিন খান : এটা আমার নজরেও এসেছে। বিষয়টি আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। এ থেকে আমি বুঝতে পারলাম, ‘৪২০’-এর সঙ্গে দর্শকদের কী পরিমাণ আবেগ জড়িত, ধারাবাহিকটি কী পরিমাণ পছন্দ করেছেন তাঁরা। তবে বিষয়টা মোটেও এমন নয় যে দর্শক আমাকে ঘৃণা করেন বা অপছন্দ করেন। এতে বরং ‘৪২০’ ও এর কলাকুশলীদের প্রতি তাঁদের ভালোবাসাই প্রকাশ পেয়েছে। আশা করি, ‘৮৪০’-ও তাঁদের ভালো লাগবে।
আপনি একজন অভিনয়শিল্পী, সচেতন মানুষও। ‘৮৪০’ প্রেক্ষাগৃহে যখন দর্শক হিসেবে দেখলেন, কেমন লেগেছে?
নাসির উদ্দিন খান : ভীষণ ভালো লেগেছে। আমার সব সময়ই মনে হয়, রাজনীতিবিদেরা যদি সততার সঙ্গে শুধু রাজনীতিটাই করেন, তাহলে দেশের চেহারা পাল্টে যাবে। তাই মনে হচ্ছিল, ‘৮৪০’ যদি রাজনীতিবিদেরা দেখেন, তাহলে নিশ্চয় তাঁরা অনেক কিছুতে সাবধান হতে পারবেন, শুধুই নিজের জন্য নয়, জনগণের জন্যও ভাববেন। জনগণকে সম্মান দিতে না পারলে, ভালোবাসতে না পারলে, জনগণের কষ্ট উপলব্ধি করতে না পারলে, সবকিছু দিয়েও তার মন পাওয়া যাবে না।
প্রথম আলো :
‘৮৪০’–এ আপনি ছাড়া আর যাঁর অভিনয় ভালো লেগেছে, কেন লেগেছে?
নাসির উদ্দিন খান : শাহরিয়ার নাজিম জয় ও জায়েদ খান। জানি, অনেকেই মুখ টিপে হাসছেন। বিশ্বাস না হলে ‘৮৪০’ দেখে আসুন।
প্রথম আলো :
পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তাঁর কথায় বলেছেন, ‘৮৪০’ হচ্ছে আওয়ামী দুঃশাসনের এক্স–রে রিপোর্ট। প্রধান অভিনয়শিল্পী হিসেবে এটা কি আপনি জানতেন?
নাসির উদ্দিন খান : যতটুকু সিনেমায় দেখেছি, ততটুকু জানতাম না। তবে মেয়র ডাবলুর চরিত্র আমি সব দলের লোকদের মধ্যেই দেখেছি। এই চরিত্রের লোকেরা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে যা হয়, তা-ই আমরা ‘৮৪০’-এ দেখতে পেয়েছি।
পরিচালক জানিয়েছেন, এটা রাজনৈতিক স্যাটায়ার। আপনার অভিনীত যত কাজ প্রচারিত হয়েছে, এর মধ্যে এটিকে কোন অবস্থানে রাখবেন?
নাসির উদ্দিন খান : রাজনৈতিক স্যাটায়ার হিসেবে ‘৮৪০’ সবার ওপরে রাখব। এটা আমার ভালো লাগার কাজ বিভিন্ন কারণে। পরিচালক থেকে শুরু করে সহশিল্পীর অনেকেই আমার পূর্বপরিচিত, অনেকের সঙ্গে আবার সেটে গিয়ে পরিচয়। কিন্তু দিন শেষে মনে হয়েছে, তাঁদের সবাই আত্মার আত্মীয়। ফারুকী ভাই তো দুর্দান্ত। শুটিংয়ের সময় দেখেছি, মারজুক রাসেল, আশুতোষ সুজন, ফজলুর রহমান বাবু, নাদের খান, শাহরিয়ার নাজিম জয়, মম, বিজরী বরকতউল্লাহসহ যাঁরাই ছিলেন, সবাইকে ফারুকী ভাই এমনভাবে সব গুছিয়ে দিয়েছেন, কাজটা করতে অনেক সুবিধা হয়েছে। সহজ হয়ে গেছে। ফারুকী ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম কাজ করতে গিয়ে মনে হয়েছে, কাজের কষ্ট তুলনামূলকভাবে কম হয়। তিনি নিজে অনেক কৌশল শিখিয়ে দেন। অনেক চরিত্রের অনেক বিশ্লেষণও দিয়ে দেন।
এখন মূল জায়গায় আসি, আমাদের দেশের মানুষদের রাজনীতি বা সমসাময়িক বিষয় নিয়ে বেশি বেশি কথা বলা উচিত, নিরপেক্ষভাবে। এসব যত বেশি গঠনমূলক আলোচনা হবে, জনগণ ও রাজনীতিবিদেরা তত বেশি সচেতন হবেন। তবে এসব নিয়ে তর্কবিতর্কও থাকবে। কারণ, বিপক্ষ মতের মানুষ অনেক কিছু গ্রহণ করতে পারেন না। তারপরও দিন শেষে যেটা সাদা, সেটা সাদা বলা উচিত। যেটা কালো, সেটাকে কালো বলা উচিত। সমাজ ও রাষ্ট্রে সাদা-কালো বিষয় বেশি করে পরিচয় করিয়ে দেওয়া উচিত, তাহলে জনগণ সঠিক জিনিসগুলো বুঝতে পারবে। আমাদের দেশের মানুষগুলো অনেক বেশি সহজ-সরল। আমাদের নিজস্ব বিচার-বিবেচনা একটু কম।
প্রথম আলো :
মেয়র ডাবলু হয়ে উঠতে কী কী প্রস্তুতি ছিল আপনার?
নাসির উদ্দিন খান : আমি রাজনৈতিক চরিত্রে অভিনয় করেছি, তবে এতটা বৃহৎ আকারে করিনি। আমি এখানে একজন মেয়রের চরিত্রে অভিনয় করেছি। আমার সামনে চরিত্রটি হয়ে উঠতে কোনো রেফারেন্স ছিল না। কাজটি করতে গিয়ে আমার ভাবনাচিন্তা পরিচালকই জুগিয়ে দিয়েছেন। আমি গত বছরের মে মাসে যুক্ত হই। এরপর নভেম্বরে শুটিং শুরু করি। তার আগের ছয় মাস ফারুকী ভাইয়ের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে দারুণ সময় কাটিয়েছি। চরিত্রের মনস্তত্ত্ব, দর্শন নিজের মধ্যে ধারণ করতে এসব আড্ডা দারুণ কাজে দিয়েছে। আমরা শুটিংয়ে নভেম্বরে গেলেও কস্টিউমসহ মহড়া করেছি এক মাস আগে থেকে। আমার মনে হয়েছে, পরিচালকের প্রতি যত বেশি শিল্পীকে সঁপে দেওয়া যায়, অভিনয়শিল্পীর তত বেশি লাভ। পরিচালকই তখন তাঁর মতো করেই অভিনয়শিল্পীকে গড়ে তুলবেন। তা ছাড়া ইম্প্রোভাইজেশনের মাধ্যমে অভিনয়শিল্পীরা তো তাৎক্ষণিকভাবে কিছু অলংকার যুক্ত করেনই।
প্রথম আলো :
বিভিন্ন সময়ে নানান সরকারের আমলে সেই সরকারের ন্যারেটিভ অনুযায়ী করা চিত্রনাট্যে কাজ করে থাকেন অনেক শিল্পী। একটা সময় সরকার পাল্টে গেলে শিল্পীদের হেনস্তা, ভাবমূর্তির সংকট, গ্রহণযোগ্যতার সমস্যায় পড়ার কথা শোনা যায়। এতে দায়টা আসলে কার বলে মনে করেন?
নাসির উদ্দিন খান : যদি অরুচিকর, আপত্তিকর, অসত্য বিষয়বস্তু শিল্পী উপস্থাপন করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই শিল্পী দায়ী।
চরকিতে আপনার অভিনীত ‘ওমর’ মুক্তি পেয়েছে। এটি নিয়েও দেখলাম বেশ আলোচনা হচ্ছে...
নাসির উদ্দিন খান : অন্য রকম গল্পের একটা ছবি। এ ছবিতে শরীফুল রাজ আছে, তার সঙ্গে আমার ব্যাক টু ব্যাক বেশ কয়েকটি কাজ হয়েছে। ‘পরাণ’, ‘হাওয়া’, ‘দামাল’, ‘ওমর’; যার কারণে ওর সঙ্গে আমার বোঝাপড়াটা দারুণ। শুটিংয়ের বাইরে ব্যক্তিগত সম্পর্কটা ভালো থাকলে কাজে তার ভালো প্রভাব পড়ে।
প্রথম আলো :
আপনাকে টিভিতে কম দেখা যায় কেন? নতুন চলচ্চিত্র বা সিরিজের কাজের খবর বলুন...
নাসির উদ্দিন খান : আমি সব মাধ্যমের জন্য কাজ করছি। অনেক ডিরেক্টর বলেন, আপনি কি টিভি নাটক করেন না? বিশ্বাস করেন, এটা শুনে আমার খুব খারাপ লাগে। আমি একজন অভিনেতা, আমার কাজ অভিনয় করা, সে যে মাধ্যমেই হোক না কেন। কিন্তু আমি যেভাবে সময় নিয়ে কাজ করতে চাই, সেই সময় অনেক জায়গায় পাওয়া যায় না বলে করি না। বিশেষ করে বেশ কিছু টিভি বা ইউটিউব নাটকে সময় খুবই কম পাওয়া যায় এবং অনেক সময় প্রপার স্ক্রিপ্টও থাকে না। সামনে আমার তিনটি কাজ মুক্তির অপেক্ষায়। এর মধ্যে আছে ইকবাল হোসাইন চৌধুরীর ‘বলী: দ্য রেসলার’, রিজোয়ান শাহরিয়ার সুমিতের ‘মাস্টার’ ও অনন্য প্রতীক চৌধুরীর ‘নয়া নোট’। তিনটি ভিন্ন রকম গল্পের ছবি।
আপনাকে ওটিটি কনটেন্টে গান গাইতেও দেখা গেছে...
নাসির উদ্দিন খান : আমি গাইতে ভালোবাসি। লোকগানের প্রতি দুর্বলতা আছে। যদি সুযোগ আসে, গাইব। তবে আমাকে দিয়ে করিয়ে নিতে হবে। কারণ, আমি গানের অনেক কিছু বুঝি না। তারপরও আমি কয়েকটা গান করেছি। ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’-এ গাওয়ার সময় সংগীত পরিচালক সন্ধিকে আগেই বলেছিলাম, আমাকে সবকিছু ধরে ধরে বুঝিয়ে দিতে হবে, সে-ও তা-ই করেছিল।
প্রথম আলো :
আপনার পরিবার তো চট্টগ্রামে থাকে...
নাসির উদ্দিন খান : শুটিং কিংবা মিটিং ছাড়া আমি চট্টগ্রামেই থাকি। দু–তিন দিন ফাঁক পেলেই চট্টগ্রামে ছুটে যাই। বেশির ভাগ সময় পরিবারের সঙ্গে কাটাই। ইচ্ছা হয় না ওদের ঢাকায় নিয়ে আসার। কারণ, তারাও আরাম বোধ করবে না। ওখানে আমাদের সবার আত্মীয়স্বজন, যে পরিমাণ মানুষজন আছে, ঢাকায় এলে বোরড হয়ে যাবে। ঢাকার জনজীবন এতটা যান্ত্রিক, আমিও চাই না ওরা এর মধ্যে এসে পড়ুক।