আজ বড় চমক নিয়ে আসছি : রুনা লায়লা

আজ উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী রুনা লায়লার জন্মদিন। ৭২তম জন্মদিনটি উপলক্ষে গতকাল শনিবার দুপুরে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মনজুর কাদের

প্রথম আলো:

শুভ জন্মদিন।

রুনা লায়লা : ধন্যবাদ।

প্রথম আলো :

শুনলাম, এবার জন্মদিনে চমক থাকছে?

রুনা লায়লা : তা মনে হয় থাকছে।।

প্রথম আলো :

কী সেই চমক, বলা যাবে কি?

রুনা লায়লা : বললে তো সব বলাই হয়ে যাবে, চমক তো আর থাকবে না। আজ বড় চমক নিয়ে আসছি। তাই চাইছি সারপ্রাইজটা আপাতত জমা থাকুক। একটার মধ্যে কিন্তু একাধিক সারপ্রাইজ থাকবে।

প্রথম আলো :

আচ্ছা, দুই বছর আগে বলেছিলেন বয়স ১৭, এখন তাহলে কত?

রুনা লায়লা : একটু বেড়েছে। ১৭ থেকে ২৭ হয়েছে

রুনা লায়লা
ছবি : প্রথম আলো
প্রথম আলো:

এই যে এত বয়স, পাওয়া না পাওয়ার হিসাব কি মেলান?

রুনা লায়লা : একদমই না। আল্লাহর রহমতে অনেক পেয়েছি। এক জীবনে দেশ–বিদেশের শ্রোতাদের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা এত এত পেয়েছি, শুকরিয়া আদায় করেও শেষ করতে পারব না। এখনো পাচ্ছি। ৬০ বছর ধরে পেয়ে চলেছি। শ্রোতাদের বাইরে আমার অঙ্গনের অগ্রজ, অনুজ এবং সমসাময়িক সবার স্নেহ, সম্মান, ভালোবাসা তো অতুলনীয়।

আরও পড়ুন

প্রথম আলো :

৬০ বছরের যত পাওয়া, এর মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল কোনটি?

রুনা লায়লা : প্রথম গাওয়া গানটিই তো আমার এই পথচলা শুরু করেছিল। ১৯৬৫ সালে ১২ বছর বয়সে জুগনু ছবিতে প্রথম গান করি, সে হিসেবে বলব, ওই গানটা আমার জীবনের সবচেয়ে উজ্জ্বল স্মৃতি।

প্রথম আলো :

সবাই আপনার অর্জন দেখে, কিন্তু অর্জনের পেছনে তো সংগ্রাম, বাঁধার গল্পও তো আছে।

রুনা লায়লা : আমাকে আসলে প্রথম থেকে স্ট্রাগল করতে হয়নি। আল্লাহর রহমতে, গান নিয়ে আমার কাছে সবাই এসেছে। কারও কাছে গিয়ে গান চাইতে হয়নি। সবার কাছ থেকে আদর, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, আশীর্বাদ দোয়া—সব পেয়েছি। বাধা তো দু-একটা এসেছে, আল্লাহ আমাকে তা অতিক্রম করার শক্তিও দিয়ে দিয়েছিল। এবং পেরেছিও। তা ছাড়া আমি কোনো বাধা খুব একটা গুরুত্ব দিইনি।

রুনা লায়লা প্রথম মঞ্চে গান করেন ছয় বছর বয়সে
ছবি: পারিবারিক অ্যালবাম থেকে
প্রথম আলো:

বাধা মোকাবিলায় গুরুত্ব না দেওয়াটাই কি তাহলে আপনার কৌশল ছিল?

রুনা লায়লা : আমার আসলে কোনো কৌশল ছিল না। মনের জোর আর পরিবারের সমর্থনে সব বাধা সামাল দিয়েছি। মনের জোর আর পরিবারের সমর্থন এতটাই ছিল, এসব নিয়ে তাই চিন্তাও করতে খুব একটা হয়নি। আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে এগিয়েছি, ভেবেছি তিনি আমার জন্য যা যা রেখেছেন, তাই-ই আমার হবে। আমি শুধু আমার মতো করে কাজটা করে গিয়েছি।

আরও পড়ুন

প্রথম আলো :

দেশ–বিদেশের মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন। দেশের বাইরে থেকে এসে সংগীতাঙ্গনেও বেশ দাপটের সঙ্গে কাজ করেছেন। সংগীত পরিচালকেরাও আপনাকে নিয়ে অনেক ধরনের কাজ করেছেন। এতে করে কি ওই সময়ের কারও ঈর্ষার কারণ হয়েছেন?

রুনা লায়লা : (হাসি) ঈর্ষা তো আসলে সব ক্ষেত্রেই হয়, আমার ক্ষেত্রেও হয়নি যে তা নয়। তবে কারও সফলতায় আমার কখনো ঈর্ষা হয়নি। বরং সবাইকে তাঁদের সেই মর্যাদা দিয়েছি এবং সব সময় ভালোই বলেছি। টুকটাক তো আমাকে নিয়ে ঈর্ষা হয়েছে, ওই যে এসবে মাথা ঘামাতে নাই—এই নীতিতে চলেছি। তবে এই ঈর্ষাপরায়ণতা শুধু যে আমার দেশে আছে তা কিন্তু নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের যেসব শিল্পীর সঙ্গে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক রয়েছে, তাঁদের কাছ থেকেও ঈর্ষার অনেক গল্প অনেক শুনেছি। সবকিছুকে ছাপিয়ে দেশ ও পৃথিবীর মানুষের স্বার্থহীন যে ভালোবাসা পেয়েছি, তা নিয়েই আমি এগিয়েছি।

প্রথম আলো:

আচ্ছা কেউ যখন ঈর্ষা করত, তখন আপনার কী মনে হতো?

রুনা লায়লা : মনে তখন অনেক জেদ চাপত আরও ভালো করার। (হাসি)। প্রকৃত শিল্পীর কাজ হওয়া উচিত আরেকটি ভালো শিল্পকর্ম দিয়ে ঈর্ষার মোকাবিলা করা। আমি আসলে আমার নিজের কাজ নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখতাম, এখনো রাখি। অন্যরা কী বলল আর করল, তা নিয়ে মাথা ঘামাই না। গুরুত্ব দিই না। এ রকম বিষয়ে মাথা ঘামালে মনোজগতে প্রভাব পড়ে। তবে আমি এসবে নিজেকে ক্ষতি করতে দিইনি। যতটা পেরেছি, নিজের মতো করে আমার কাজ গুছিয়ে নিয়েছি। কারও কাছে গিয়ে কথা বলা বা পত্রিকা কিংবা টেলিভিশনে কারও সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করিনি। ভেবেছি, কেউ যদি বলে বলুক, কত দিনই আর বলবে, সবকিছুর তো একটা সীমা আছে।

ঢাকার পাঁচতারা হোটেলে প্রথম আলোর ক্যামেরায় উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা

প্রথম আলো :

জীবনে অনেক সফলতা আছে। কোনো ভুল আছে কি, যা আপনি জীবন সুযোগ থেকে মুছে ফেলতে চান?

রুনা লায়লা : একসময় যেগুলো মনে করতাম ভুল হয়েছে, সেগুলোতে কিছু বোনাসও পেয়েছি। আমার ব্যক্তিগত জীবনে এমনটা ঘটেছে। সেখানে কিন্তু আমি অনেক কিছু অর্জনও করেছি। তাই অতীতের ওসব নিয়ে চিন্তাও করি না। অতীত অতীতেই থাকুক। আমি সুখে আছি, শান্তিতে আছি—আলহামদুলিল্লাহ।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

গানে আপনার সফলতা অনন্য। কিন্তু আপনার মতো একজন বড় তারকার একমাত্র মেয়ে তানি লায়লা একসময় গান গাইলেও তাঁকে পরবর্তী সময়ে নিয়মিত পাওয়া যায়নি। আপনিও কি তা চাননি?

রুনা লায়লা : আমি আসলে তানির ওপরে কোনো দিন কোনো চাপ প্রয়োগ করিনি। তানি যা করতে চেয়েছে, যা হতে চেয়েছে—সব ওর ওপরেই ছেড়ে দিয়েছি। সে গানও শিখেছে, সবই করেছে—ইচ্ছা থাকলে হয়তো গান পেশা হিসেবে বেছে নিত। যেহেতু পেশাদারভাবে করেনি, তার মানে চায়নি। সে তো এমনিতে ভালো আছে। অনেক ভালো আছে। তিন সন্তান, বড় দুজন পড়ালেখায় বেশ ভালো করছে। মাশাআল্লাহ। ওর হাজব্যান্ডও ভীষণ ভালো। মা হিসেবে সে খুবই খুবই দুর্দান্ত। সন্তান হিসেবে বেশ ভালো। যথেষ্ট যত্ন করে আমাকে ও আলমগীর সাহেবকে। তানি এখন ইউএসএতে থাকে, যতবারই গিয়েছি, নিজে রান্নাবান্না করে আমাদের খাইয়েছে।

আলমগীর আর রুনা লায়লা দেশের অন্যতম জনপ্রিয় তারকা দম্পতি।
ছবি : প্রথম আলো

প্রথম আলো :

আপনি তো রান্নাবান্না করেন না, মেয়ে তাহলে সেই কোটা মোটামুটি পুষিয়ে দেয়?

রুনা লায়লা : আমি দেশে করি না। তবে দেশের বাইরে গেলে রান্না করি। সাধারণ রান্নাগুলো আমি করতে পারি।

আরও পড়ুন

প্রথম আলো :

আপনার সেই সাধারণ রান্না আলমগীর ভাইয়ের কাছে নিশ্চয় অসাধারণ হয়ে ওঠে?

রুনা লায়লা : আমি পালংশাক আর গরুর গোশত রান্না করি। এটা আমার নাতিরা খুব পছন্দ করে। আলমগীর সাহেবেরও পছন্দ। মাশরুমের একটা আইটেমও বানাই, যা পছন্দ সবার। এর বাইরে ডিমের তরকারি, ডাল এসব রান্না করতে পারি। রান্না কিছুটা খারাপ হলেও আলমগীর সাহেবকে কিন্তু দুর্দান্ত বলতেই হয়। (হাসি)। তা না হলেও তো হা হা হা।