শাকিব ভাইয়ের উচিত ঈদ ছাড়াও ছবি মুক্তি দেওয়া

চিত্রনায়ক জিয়াউল রোশানের চারটি ছবি মুক্তির অপেক্ষায়। শুটিংও করছেন একাধিক চলচ্চিত্রের। কয়েকটি নতুন চলচ্চিত্রেও অভিনয়ের কথাবার্তা চলছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে কোন কোন ছবির শুটিং শুরু করবেন, সে ব্যাপারে পরিকল্পনা চূড়ান্ত হবে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাঁর সঙ্গে কথা হয়।

প্রথম আলো:

কেমন আছেন?

বাসায় আছি পাঁচ দিন ধরে। কোথাও বের হচ্ছি না। দুই সন্তানের সঙ্গে সময় কাটছে। আর টেলিভিশনে খবরের চ্যানেলগুলো ফলো করছি। সারা দেশের খোঁজখবরও রাখছি।

প্রথম আলো:

আপনার অভিনীত কয়েকটি ছবি মুক্তির অপেক্ষায়?

চারটি ছবি মুক্তির জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। এসব ছবির মধ্যে আছে রায়হান খানের ‘এক্সকিউজ মি’, অনিরুদ্ধ রাসেলের ‘জামদানি’, রাখাল সবুজের ‘পুলসিরাত’ ও হাসান শিকদারের ‘প্রেমপুরাণ’। এসব ছবি মুক্তির জন্য একটা লাইনআপ মোটামুটি রেডি ছিল। এখন তো পরিস্থিতি যা দেখছি, মুক্তির হিসাব–নিকাশ পাল্টে যেতে পারে। তবে আমার নিজের ইচ্ছা, এ বছরের মধ্যে যেন ছবিগুলো মুক্তি পায়। এখন দেখা যাক, কী হয়। ‘প্রেমপুরাণ’ ছবিটি বিগ বাজেটের এবং রোমান্টিক ফোক। ‘এক্সকিউজ মি’ খুবই চমৎকার প্রেমের গল্প। এ ছবিতে আমার সহশিল্পী ভাবনা। আমাদের দুজনের প্রথম কাজ। এ ছবিতে আমি নিজেকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছি।

জিয়াউল রোশান
ছবি : ফেসবুক থেকে

প্রথম আলো :

এর আগে অনেক ছবিতে একাধিক নায়িকার সঙ্গে কাজ করা হয়েছে। ভাবনার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?

চরিত্র অনুযায়ী আমার মনে হয়েছে, এ ছবিতে ভাবনাকে দরকার ছিল। তা ছাড়া ভাবনা তো দুর্দান্ত অভিনয়শিল্পী। সে একজন শিক্ষিত অ্যাকট্রেসও। সফলভাবে ছবিতে নিজে ফুটিয়ে তুলেছে।

প্রথম আলো :

শুটিং করছেন কোন কোন ছবির?

একটি ছবি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি। লন্ডন লাভ ছবির শুটিং নিয়ে নতুন পরিকল্পনা হচ্ছে। এর মধ্যে কয়েকটি নতুন ছবিতে অভিনয়ের ব্যাপারেও কথাবার্তা চলছে।

প্রথম আলো:

কার কার?

পরিচালকদের নাম এখনই বলতে চাইছি না। আমার সঙ্গে কথা হয়েছে। খুব শিগগির স্ক্রিপ্ট নিয়ে বসা হবে। আসলে এখন তো এমন অবস্থা হয়েছে, ভুলভাল কোনো প্রজেক্টে নিজেকে জড়াতে চাইছি না। বিশেষ করে, শাকিব ভাই ‘তুফান’ ছবির পর আমাদের সিনেমাকে যে স্ট্যান্ডার্ডে নিয়ে গেছেন, তাতে ভেবেচিন্তে ছবির কাজ হাতে নেওয়ার কথা ভাবছি। এটাও ঠিক, সব ছবি তো আর তুফান–টাইফ হবে না। তারপরও একটা ভালো গল্পের যেন অংশ হতে পারি, সেটা ভাবনায় আছে। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই নতুন ছবিগুলো ব্যাপারে পরিচালক ও প্রযোজকের সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্ত হবে।

রায়হান খান পরিচালিত ‘এক্সকিউজ মি’ ছবির সংবাদ সম্মেলন শেষে জিয়াউল রোশান ও আশনা হাবিব ভাবনা
ছবি : আশরাফুল আলম
প্রথম আলো:

গত দুই ঈদে আপনার দুটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। দুটি ছবি নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা যে ভালো ছিল না, সে কথাও বলেছিলেন।

ছবি মুক্তিতে নায়ক হিসেবে আমার ঈদ ভালোই কাটার কথা ছিল, কিন্তু সেভাবে কাটেনি। গ্রামের বাড়িতেও যাইনি। তবে শো দেখতে যমুনা ব্লকবাস্টারে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের ছবির শো টাইম এমন সময়ে ছিল, মনটাই খারাপ হয়ে যায়। ওই সময়ে সাধারণত দর্শক কম থাকে। তা ছাড়া যমুনা ব্লকবাস্টারে দর্শকের সংখ্যা স্টার সিনেপ্লেক্সের চেয়ে বরাবরই কম থাকে। ঈদুল ফিতরে তো ‘মায়া দ্য লাভ’ ছবি সিনেপ্লেক্সে কোনো শো পায়নি। সিনেপ্লেক্সে শো না পাওয়ায় হতাশ হয়েছি। দু–একটি শো দিলেও তো কমপক্ষে আলোচনায় আসতে পারতাম।

প্রথম আলো :

কিন্তু কথা হচ্ছে, সেই ঈদে ১১টি ছবি মুক্তি পেয়েছে। ঈদের ছবির নায়ক হিসেবে এত ছবি মুক্তির যৌক্তিকতা কতটুকু মনে করছেন?


ঈদে ১১টি ছবি মুক্তি একেবারে অনুচিত। আমার মতে, সর্বোচ্চ চারটি মুক্তি পেলেই ভালো হতো, যেটা আমরা ঈদুল আজহায় দেখতে পেয়েছি। আমার কাছে মনে হয়, এভাবে এত ছবি মুক্তি না দিয়ে, ১২ মাসের পরিকল্পনা করে ছবিগুলো মুক্তি দেওয়া উচিত। এতে হলমালিকেরা সারা বছর সচল থাকতেন, প্রযোজকেরাও লাভের মুখ দেখতে পেতেন। আমি মনে করি, শাকিব ভাইয়ের ছবি যেহেতু এত দর্শক দেখেন, সারা দেশে তাঁর যে বিশাল ভক্ত ও সিনেমাপ্রেমী আছেন, শাকিব ভাইয়ের উচিত ঈদের বাইরে এসে ছবি মুক্তি দেওয়া। এতে বছরব্যাপী সিনেমা হলে দর্শক পাওয়া যাবে। অনন্ত জলিল ভাইও কিন্তু ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর ছবি ঈদের বাইরে আনবেন। বড় বাজেটের ছবিগুলো ঈদের বাইরে এসে মুক্তি দিলে একটা উৎসব তৈরি হবে। আমি এটা অবশ্যই মনে করি, শাকিব খান ভাই যখনই আসবেন, তখনই ঈদের মতো উৎসব শুরু হবে। এই ক্ষমতা তাঁর আছে। তাঁর ছবিগুলো ভালো যেমন হচ্ছে, তেমনি বড় বাজেটের। ‘তুফান’ দিয়ে শাকিব ভাই তো সবার মধ্যে সুনামি বইয়ে দিয়েছেন। দেশ-বিদেশে এই ছবি দেখার জন্য টিকিটের হাহাকার দেখা গেছে। ঈদকেন্দ্রিক যে ছবি মুক্তির প্রথা, এটাও ভাঙা দরকার। এই প্রথা ভাঙতে হলে ইন্ডাস্ট্রির বিগ সুপারস্টার হিসেবে শাকিব ভাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ছোট ভাই হিসেবে এটা তাঁর কাছে অনুরোধও। আমাদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে সেপ্টেম্বরে শাকিব ভাইয়ার ‘দরদ’ ছবিটি মুক্তি খবর শুনে।

জিয়াউল রোশান
ছবি : ফেসবুক
প্রথম আলো:

গত দুই ঈদে ছবি মুক্তি নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হলো, তা কোনো শিক্ষা দিয়েছে কি?

শিক্ষা নেওয়ার কিছু নেই। শিক্ষা নিতে হলে তো আমার ছবি করাই ছেড়ে দিতে হবে। আমি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনুরোধ করব, কাউকে দোষী করছি না, এভাবে যে পরিস্থিতি তৈরি হলো, তা সিনেমাপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ নয়। অনুজদের নিরুৎসাহিত করা, প্রকৃত সিনেমাপ্রেমী হিসেবে আমাদের পেছনে টেনে না রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহ ও সাহস দিতে হবে। জটিল পরিস্থিতিতে আমাদের যেন সহযোগিতার করা হয়।