মিডিয়ায় কেউ কারও ভালো বন্ধু হতে পারে না: তানজিন তিশা
বৃহস্পতিবার অভিনেত্রী তানজিন তিশার অসুস্থতার খবর চাউর হয়। দুপুরে জানা যায়, অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠেছেন অভিনেত্রী। বাসায়ও ফিরেছেন। এরপর বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটের দিকে নিজের ফেসবুকে তাঁর অসুস্থতা নিয়ে একটি পোস্ট করেন তিশা। দীর্ঘ পোস্টের শেষের দিকে তানজিন তিশা ইঙ্গিত দিয়েছেন, কেউ কেউ তাঁর ক্ষতি করতে চাইছেন। শিগগিরই এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত জানাবেন বলেও উল্লেখ করেন। এর আগে গত আগস্ট মাসে ‘বিনোদন’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিনোদনজগতের বন্ধুদের নিয়ে মন্তব্য করেন। সেই সাক্ষাৎকারটি আবার প্রকাশ করা হলো।
প্রশ্ন :
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘পুতুলের সংসার’ ও ‘কঞ্জুস ২’ নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। আপনার চোখে পড়েছে?
ঈদের জন্য পাঁচটি নাটকে অভিনয় করেছিলাম। সঙ্গে আগের করা আরও তিনটি নাটক প্রচারিত হয়েছে। সব কটি নাটকেরই দর্শক সাড়া ভালো। ‘কঞ্জুস ২’ ও ‘পুতুলের সংসার’ থেকে বেশি সাড়া পেয়েছি। ‘কঞ্জুস ২’ ভালো যাবে, আগেই জানতাম। এটি সিকুয়েল। প্রথম পর্বটি হিট ছিল। কিন্তু ‘পুতুলের সংসার’ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম, দর্শক কীভাবে নেবেন। কারণ, এটি আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং কাজ ছিল।
প্রশ্ন :
কেন এটি চ্যালেঞ্জিং ছিল?
এখানে আমাকে দুটি চরিত্রে তিন রূপে দেখা গেছে। পুতুল নামের মেয়েটিকে ছোটবেলায় যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেওয়া হয়। সেখানেই একসময় বৃদ্ধ হয় পুতুল। আবার ওই বৃদ্ধার মেয়েরও একটি চরিত্র আছে, সেটিও আমি করেছি। এক গল্পে এতগুলো চরিত্র কম চ্যালেঞ্জিং নয়। প্রায় এক বছর সময় নিয়ে কাজটির প্রস্তুতি ছিল। তা ছাড়া ওয়েবে এ ধরনের গল্প বড় বাজেটে সময় নিয়ে করা হয়। নাটকে কম বাজেটে, কম সময়ে এ ধরনের চরিত্র উপযুক্তভাবে তুলে আনা কঠিন। আমি মনে করি, জয়া আপার পর এ ধরনের চরিত্রে আমিই চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। এ ধরনের চরিত্র করার আগে বিশ্বাস লাগে। এমন একটি চরিত্রের চারপাশের পরিবেশে অভ্যস্ত ছিলাম না। তাই কাজটি করতে গিয়ে আমি খুব নার্ভাস, কনফিউজড ছিলাম। আমার অভিনয়জীবনে কোনো চরিত্র করতে এত নার্ভাস লাগেনি।
প্রশ্ন :
কাজটি করতে গিয়ে সমস্যা হয়নি?
পরিচালক রাফাত মজুমদার রিংকু ভাইয়ের সহযোগিতা নিয়ে আমি একা একা চরিত্রটি ধারণ করেছি। যে চরিত্র আমার অভিজ্ঞতায় ছিল না, সেই চরিত্র আমাকে ফুটিয়ে তুলতে হয়েছে। সারা দিন, সারা রাত ধরে শুটিং করেছি। শুটিং করতে করতেই আমার বোনকে ফোন দিয়েছিলাম। তাকে বলেছিলাম, চরিত্রের কোনো কোনো জায়গায় অশ্লীল গালাগালি আছে। সেগুলো দর্শক নেতিবাচকভাবে নেবে কি না। বোন আমাকে সাহস দিয়েছে, ‘এটি যৌনপল্লির গল্প, চরিত্রের প্রয়োজনে এই সংলাপ আসতেই পারে। এটি দেখে যদি ১০ ভাগ দর্শকও নেতিবাচকভাবে নেয়, সেটা কানে নেওয়া উচিত নয়।’ বোন ও পরিচালকের সাহসে শুটিংয়ের সময় দর্শকের কথা মাথায় রাখিনি। চরিত্রটির চ্যালেঞ্জ নেওয়া, কষ্ট করার ফল নাটকটি প্রচারের পর দর্শক আমাকে দিয়েছেন। একজন দর্শকেরও নেতিবাচক মতামত দেখিনি।
প্রশ্ন :
ইদানীং আপনার চরিত্র নির্বাচনে বৈচিত্র্য এসেছে...
এটি একেবারেই নিজের তাগিদ থেকে। আমি ফেমিনিস্ট। চারপাশের মেয়েরা যেভাবে জীবন যাপন করছে, তাদের চরিত্র তুলে ধরতে পছন্দ করি। গ্ল্যামারাস নায়িকা, প্রেমের গল্প, রোমান্টিক গল্প—এ ধরনের চরিত্র তো অনেক দিন ধরেই করে আসছি, সবাই করে। ইদানীং নারীর বেঁচে থাকার পেছনের গল্পগুলো আমাকে আকর্ষণ করে। সবকিছুরই একটা সময় থাকে। একসময় গ্ল্যামারস চরিত্রের জন্য মুখিয়ে থেকেছি। এখন সময় এসেছে ভিন্নভাবে ভাবার। সেটিই করছি। চারপাশের এ ধরনের চরিত্র দেখে আমার মধ্যে অনুভূতি তৈরি হয়। এই অনুভূতি অভিনয়ের মধ্য দিয়ে দর্শকের মধ্যেও তৈরি করাতে চাই।
প্রশ্ন :
বছর দুয়েক আগেও সহশিল্পীদের সঙ্গে নাটকের সংখ্যা নিয়ে প্রতিযোগিতা হতো।
একসময় মানের চেয়ে সংখ্যায় প্রাধান্য দিয়েছি। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে এখন কাজ বুঝি, গল্প বুঝি, চরিত্র বুঝি। নিজের মধ্যে এই ভাবনা তৈরি হয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে টানা পাঁচ বছর অভিনয় করছি। আগে একটি নাটক দুই দিনে শুটিং করতাম। এখন পাঁচ দিনে করি। কেন কষ্ট করি? কারণ, গল্পের প্রয়োজনে প্রতিটি মুহূর্তই যেন সুন্দরভাবে করতে পারি। পাঁচ দিনে একটা কাজ করলে কোয়ান্টিটি কমবে, কোয়ালিটি বাড়বে। এখন ১০টা কাজ করার দরকার নেই। ভালো দুটি কাজ করেই নিজের অবস্থান ধরে রাখতে চাই। কিন্তু পেশাদার শিল্পীর জন্য অর্থেরও প্রয়োজন আছে। তবে ভালো কাজের জন্য আপনাকে কোনো না কোনো ছাড় দিতেই হবে।
প্রশ্ন :
ইদানীং অবসরে, আড্ডায় সহশিল্পী বন্ধুদের সঙ্গে আপনাকে আর আগের মতো দেখা যায় না।
এখন নিজের গণ্ডিতেই থাকতে বেশি পছন্দ করি। কাজ আর পরিবার নিয়েই সময় কাটে। এখন মনে হয়, বিনোদন–দুনিয়ার কেউ কারও বন্ধু না। যে বন্ধু হিসেবে দেখায়, সেটা কেবল লোক দেখানোর জন্যই। যখন আমি সেটি বুঝতে পেরেছি, তখনই তাদের কাছ থেকে সরে এসেছি। আমার মতো করে পরিবার নিয়ে, কাজ নিয়ে থাকতে চেয়েছি। আগেও মিডিয়ায় আমার ভালো বন্ধু ছিল না। এটি নিশ্চিত, মিডিয়ায় কেউ কারও ভালো বন্ধু হতে পারে না। যা হয়, সেটি সামাজিকতা রক্ষার জন্য, নিজেকে মহৎ বানানোর জন্য।