এখনো প্রেম নিয়ে আতঙ্ক আছে
লাক্স তারকা নীলাঞ্জনা নীলার চলচ্চিত্রে অভিষেক ‘গহীন বালুচর’ দিয়ে। ছবিটি পরিচালনা করেন বদরুল আনাম সৌদ। সাত বছর পর একই নির্মাতার ‘শ্যামা কাব্য’ দিয়ে আবার প্রেক্ষাগৃহে ফিরলেন তিনি। এ মাসের শুরুতে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ছবিটি।
প্রথম আলো :
প্রেক্ষাগৃহে ‘শ্যামা কাব্য’ মুক্তির পর আপনি কী পেলেন, মানে আপনার অভিনয়জীবনে কী যোগ হয়েছে?
আমি নতুন অভিজ্ঞতা পেয়েছি। অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। নতুন করে অভিনয়কে ভালোবাসতে পেরেছি। এই দিকগুলো সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে।
প্রথম আলো :
‘শ্যামা কাব্য’ ছবির মুক্তি উপলক্ষে একাধিক প্রেক্ষাগৃহেও গিয়েছেন। অভিনয় অঙ্গন ছাড়াও সাধারণ দর্শকের সঙ্গে দেখা হয়েছে—তাঁরা আপনার অভিনয় দেখে কী বলেছেন?
অনেকে অনেক রকমের মন্তব্য করেছেন। প্রত্যেকে ভালো ভালো সব কথা বলেছেন। উপভোগ করেছেন। অনেক সময় তো প্রদর্শনী চলাকালীন গিয়েছি, যা দর্শকেরা জানতেনও না। তখন তাঁদের যে ভালো লাগা ছিল, যেভাবে প্রকাশ করছিল, চরিত্রের মধ্যে যেভাবে ইনভল্ব হয়েছিল, শ্যামা ও আজাদ চরিত্রের প্রতিটা স্তর অনুভব করতে পারছিল—এসব ব্যাপার ভালো লেগেছে। আমাদের অনেক সহকর্মীর সঙ্গে একাধিকবার সিনেমাটা দেখা হয়েছে। অনেকে অনেক রকমের কথা বলেছেন। সহকর্মীরা যাঁরা আছেন, তাঁরা সবচেয়ে বেশি যে কথাটা বলেছেন—এ রকম একটা চরিত্র কালেভদ্রে আসে। তরুণ একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে এমন চরিত্রে কাজ করার সুযোগ পাওয়াটা ভাগ্যের। সত্যি বলতে, এই ব্যাপারে আমিও নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি—শেষ মুহূর্তে হলেও ‘শ্যামা কাব্য’ ছবির ‘শ্যামা’ আমিই হয়েছি।
প্রথম আলো :
আপনি বলছিলেন সবাই বলছিল, এ রকম একটা চরিত্র কালেভদ্রে আসে...
একটা কথা তো অস্বীকার করার উপায় নেই। বেশির ভাগ ছবিতে পুরুষেরা ফোকাসে থাকেন। সেই জায়গাতে আমি কে বা কি, এ রকম একটা ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘শ্যামা’ পেয়ে গেছি। সেই জায়গা থেকে অবশ্য ভাগ্য লাগে আসলে। আমাদের দেশে এ রকম সিনেমা সত্যই কালেভদ্রে হয়। তা-ও আবার নাম ভূমিকায়।
প্রথম আলো :
এই ছবিতে অভিনয়ের সিদ্ধান্ত যখন নিয়েছিলেন, প্রথম কোন মুগ্ধতা কাজ করেছিল?
এই সিনেমায় শুরুতে আমি ছিলাম। পরে বাদ পড়ে গেলাম, যেহেতু সৌদ ভাই চামড়ার রং একটু শ্যামবর্ণের চাচ্ছিলেন। শেষে গিয়ে তাঁরা সেটেও পৌঁছে যান। দু-এক দিন পর আমাকে জানালেন, আমিই নাকি ‘শ্যামা কাব্য’ ছবির শ্যামা হব। শুটিংয়ের আগের দিন পর্যন্ত কিন্তু এটা আমি জানতাম না। তাই আমার পক্ষ থেকে প্রস্তুতির কোনো সুযোগও পাইনি। এভাবে কাজটা শুরু হয়েছিল। তবে যখনই শুনেছি শ্যামা কাব্যের শ্যামা হয়েছি, আকাশ থেকে পড়েছি। ফাইনালি এটা বলব, আমাদের সহশিল্পী, পরিচালক থেকে শুরু করে ছবির কলাকুশলী সবাই খুব সহযোগিতা করেছেন। সবাই জানে যে আমি শেষ মুহূর্তে এসেছি—যা আমার জন্য বেশ আনন্দের ছিল। তাঁদের সহযোগিতা ছাড়া আমার শ্যামা হওয়া সম্ভব হতো না।
প্রথম আলো :
এমন একটা ছবিতে কাজ করেছেন, যেটার সঙ্গে যুক্ত আছেন সুবর্ণা মুস্তাফার মতন অভিনয়শিল্পী। এটা আপনার জন্য চাপের নাকি দারুণ কিছু শেখার সুযোগও বটে?
আমার তো অভিনয় শেখাই হয়েছে সুবর্ণা মুস্তাফা ম্যামদের কাছ থেকে। আমার প্রথম সিনেমা ‘গহীন বালুচর’ও তাঁদের সঙ্গে করা। এই ছবিতে অভিনয়ের আগে আমি অভিনয়ের কিছুই জানতাম না। তখন তিন মাসের গ্রুমিংয়ের একটা সময় পেয়েছিলাম। তখন সুবর্ণা ম্যাম, শাহাদাৎ ভাইসহ অনেকে আমাদের ক্লাস নিয়েছেন। অভিনয়ের গ্রুমিংটা সেখান থেকে হয়েছিল। তাঁদের সঙ্গে বলতে গেলে আমার পারিবারিক সম্পর্ক। অনেক কিছু শিখেছি। তবে এমনিতেও প্রতিনিয়ত তাঁদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতেই থাকি।
প্রথম আলো :
২০১৪ সালে ‘লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার’ প্রতিযোগিতার পর ১০ বছরে মাত্র দুটি ছবিতে অভিনয় করলেন, দুটিরই পরিচালক বদরুল আনাম সৌদ। এর বাইরে অন্য কোনো পরিচালকের ছবিতে দেখা যায়নি—এটা কি শুধুই স্বাচ্ছন্দ্যের কারণে?
আমার আরও দুটি সিনেমার শুটিং করা হয়েছে। একটার রিলিজ বাকি, আরেকটা পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ চলছে। তবে ‘শ্যামা কাব্য’ শুটিংয় দিয়ে আমার তিন নম্বর সিনেমা। আমাকে যদি অন্য কোনো পরিচালক একদম শেষ মুহূর্তে এভাবে শুটিংয়ে ডাকতেন, তাহলে কাজ করার সাহস পেতাম না। তাঁদের সঙ্গে আমার একটা বোঝাপড়ার জায়গা আছে, আমি শেষ মুহূর্তে যুক্ত হলেও আমার কাছ থেকে অভিনয় আদায় করে নেবেন। যদি আমার গ্রুমিং হয়নি, কিচ্ছু হয়নিও, তারপরও তাঁর সঙ্গে ‘গহীন বালুচর’ করেছি, নাটক করেছি, সিরিয়াল করেছি—এতে বোঝা হয়ে গেছে যে কোন অভিনয়শিল্পী থেকে তিনি তাঁর অভিনয় আদায় করে নিতে পারেন। যতক্ষণ না পর্যন্ত আমি ঠিকঠাক করতে পারছি, ততক্ষণ তিনি তাঁর কাজ করবেন। এই বিশ্বাস ছিল, পাশাপাশি স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যাপার তো আছেই।
প্রথম আলো :
এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘প্রেম ছিল, এখন নেই। খুব শান্তিতে আছি।’ প্রেম কি তবে অশান্তির?
(হাসি)...আমার শেষ প্রেমের সম্পর্কটা মোটেও হেলদি ছিল না। টক্সিক হয়ে গেছিল। তখন একটু অশান্তিতে ছিলাম। তাই কাজেও কম দেখা গেছে। মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত ছিলাম। যখন নাকি টক্সিক সম্পর্ক থেকে বের হতে পেরেছি, তখন থেকে আসলে শান্তিতে আছি।
প্রথম আলো :
প্রেম নিয়ে আতঙ্ক কেটে গেছে?
এখনো প্রেম নিয়ে আতঙ্ক আছে। তাই আপাতত প্রেম নিয়ে চিন্তা করছি না। আতঙ্কটা কাটুক, তারপর প্রেম নিয়ে নতুন করে ভাবব। (হাসি)
প্রথম আলো :
প্রেমের অভিজ্ঞতা থেকে আপনার কাছে প্রেমের সংজ্ঞা কী?
আমার কাছে মনে হয় সুন্দর প্রেমের সম্পর্ক প্রত্যেক মানুষের প্রয়োজন। কারণ, একটা চমৎকার প্রেমের সম্পর্ক একে অপরের পরিপূরক, সে যে-ই পেশায় থাকুক। যে প্রেমের সম্পর্কে পার্টনারের কাছ থেকে সহযোগিতার বাইরে সেখানে উল্টো সমস্যা তৈরি হয়—তখন সম্পর্কটা হিতে বিপরীত হয়। কেউই সফল হতে পারে না। কেউই স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যেতে পারে না। এর বেশি আর কি বলব ছোট মানুষ হিসেবে....(হাসি)
প্রথম আলো :
অভিনয়টা কি পেশা নাকি শখের বশে?
অভিনয় এখন পেশা হয়ে গেছে। ওই প্রেমের সম্পর্ক ভাঙার পর আমার ধ্যানজ্ঞান সব অভিনয়।
প্রথম আলো :
প্রেম ভেঙে তাহলে তো সুবিধা হয়েছে।
সত্যিই তা-ই। আমি অন্তত তা-ই মনে করছি।
প্রথম আলো :
কত বছরের প্রেমের সম্পর্ক?
সাড়ে তিন বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এই সম্পর্ক ভেঙেছেও দুই বছর। দুই বছর ধরে সিঙ্গেল আছি। আমার কাছে মনে হয়, একজন টক্সিক মানুষের সঙ্গে লম্বা সময় কাটানোয় নিজেও টক্সিক হয়ে যেতে হয়। সুন্দর সম্পর্কে যাওয়াটা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই নিজেকে সময় দেওয়া দরকার। একটু হিলিংয়ের মধ্য দিয়ে যাওয়া দরকার পরবর্তী যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে।
প্রথম আলো :
প্রেমের সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসে মানসিক প্রশান্তি পেতেও সময় লাগে। সময়টা আপনি কীভাবে কাটিয়ে উঠেছেন?
আমি প্রেমের সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার পর খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। কাজ করতে ভালো লাগত না। কথা বলতে ভালো লাগত না। কারও ফোন ধরতাম না। তবে আমার পরিবার এই সময়ে অনেক সাপোর্ট দিয়েছে। আমরা ছয় ভাইবোন তো, আমি সবার বড়, বাকি সবাই ছোট। সবার সঙ্গে খেলাধুলা করে হাসি-আনন্দে অনেকটা সময় কেটে যেত। তবে সবকিছুর ওপর আমাকে সবচেয়ে বেশি প্রশান্তি দিয়েছে নামাজ। অনেক নামাজ পড়েছি। এই নামাজ পড়াই আমাকে সবচেয়ে বেশি শান্তি দিয়েছে। আমার যত দুঃখকষ্ট সব আল্লাহর সঙ্গে শেয়ার করেছি—নামাজ আমাকে দুঃসময় কাটিয়ে উঠতে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছে।
প্রথম আলো :
নতুন কাজকর্মের খবর বলুন।
আমি এখন কাজই করছি। কাজই সব। নতুন কাজের মধ্যে ঈদের বেশ কয়েকটি নাটক আছে। ওয়েব সিরিজেও অভিনয় করেছি। দুটি চলচ্চিত্র তো আছে, পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক ও আরেকজন এস এম কাইয়ুম।