কোনো এক কারণে শুটিংয়ে খেপে গিয়েছিলাম
তরুণ নির্মাতা ইকবাল হোসাইন চৌধুরী পরিচালিত বলী সিনেমায় নামভূমিকায় অভিনয় করছেন নাসির উদ্দিন খান। সিনেমাটি আজ দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে। চট্টগ্রামে নিজের বাড়ি থেকেই ‘বিনোদন’-এর মুখোমুখি হলেন এই অভিনেতা। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মনজুরুল আলম
প্রথম আলো :
‘বলী’ মুক্তি পাচ্ছে, আপনি চট্টগ্রামে কেন?
নাসির উদ্দিন খান: মুক্তির খবরটা আগে জানলে আরও আগেই প্রচারণায় যুক্ত হতে পারতাম। কাল থেকেই সিনেমাটির প্রচারণায় যুক্ত হব।
প্রথম আলো :
প্রচারণা নিয়ে কী বলবেন?
নাসির উদ্দিন খান: ফিল্ম রিলিজ নিয়ে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, হাতে গোনা দু–একটি সিনেমা ঠিকমতো প্রচারণা করেছে। বেশির ভাগ সিনেমাই অনেকটা হুটহাট করে মুক্তি পেয়েছে। বলী শিগগিরই মুক্তি পাবে, আগেই ঢাকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ঘোষণা করা হয়েছিল। তখন আভাস পেয়েছিলাম, ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে হতে পারে। অবশেষে ৭ তারিখে রিলিজের কথা ৪ তারিখে জানতে পারলাম। এ ধরনের মুভি আরেকটু বেশি প্রচারণার দরকার ছিল। সিনেমাটি নিয়ে দর্শক আগে থেকেই জানে। এটি বুসান চলচ্চিত্র উৎসব থেকে নিউ কারেন্টস পুরস্কার পেয়েছে। সে হিসেবে মানুষ সিনেমাটির কথা জানে। কিন্তু রিলিজ হবে কবে, সেটা অনেকেই জানে না।
প্রথম আলো :
‘বলী’ করতে কেন রাজি হয়েছিলেন?
নাসির উদ্দিন খান: সিনেমার পটভূমি, ভাষা চাটগাঁয়ের, আমি চাটগাঁয়ের মানুষ। আঞ্চলিক একটা টান তো থাকেই। এটা আপনার ক্ষেত্রেও হবে। ইমোশন কাজ করেছিল, আমার অঞ্চলের ভাষা, আমার অঞ্চলের পটভূমি, গল্পের মিথ—এগুলো এখানে জড়িত। পরে আগ্রহ জেগেছে এর পরিচালক, অভিনয়শিল্পীদের প্রায় সবাই চাটগাঁইয়া। এসবই মূল বিষয়। পরে গল্পের ডেপথ, স্টোরি, চিত্রনাট্য ভালো লাগায় কাজ করেছি।
প্রথম আলো :
এসব আপনার কাজটাকে সহজ করে দিয়েছিল?
নাসির উদ্দিন খান: পরিচিত প্রেক্ষাপট, পরিচালক, সহশিল্পী, পরিবেশ—এগুলো কাজটাকে কিছুটা হলেও সহজ করে দিয়েছে। তবে চ্যালেঞ্জিং তো ছিল। চট্টগ্রামে আমি যে অঞ্চলে বড় হয়েছি, সে অঞ্চল থেকে বাঁশখালীর আঞ্চলিক ভাষার কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। টুকটাক চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল বলীখেলা। একটা লোক যে বলী খেলতে চায়, এটাই তার ধ্যানজ্ঞান, তার অন্তর্দ্বন্দ্বটা চরিত্রে ফুটিয়ে তোলা। পরিচালক ও অরিজিনাল বলীর সহায়তায় এটা পেরেছি।
প্রথম আলো :
আপনার বয়সের তুলনায় চরিত্রটি কি চ্যালেঞ্জিং মনে হয়েছিল?
নাসির উদ্দিন খান: এ সিনেমায় চরিত্রের ক্ষেত্রে বয়সটাও চ্যালেঞ্জ ছিল। সেটা দর্শক পর্দায় দেখলেই বুঝতে পারবে। যেকোনো অভিনেতার জন্যই বয়স যত বাড়ে, তত স্ট্রেস নিয়ে কাজ করতে হয়। ইনডোর ও আউটডোরে চরিত্র নিয়ে প্রচুর কায়িক শ্রমও রয়েছে। টিমের কারণেই সব সহজ হয়েছে।
প্রথম আলো :
নির্মাতার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
নাসির উদ্দিন খান: আমি যে কজন ডিরেক্টর পেয়েছি, যারা চরিত্র নিয়ে খেলতে পারে, তাদের মধ্যে অন্যতম বলব ইকবাল ভাই। আমার এই চরিত্রটা রাগী, খ্যাপাটে। যে বিষয়টা শুটিংয়ের বাইরেও আমার মধ্যে কাজ করেছিল। দেখা যেত, কখনো শুটিংয়ের বাইরেও আমি চরিত্রের মতোই খেপে যাচ্ছি, রেগে যাচ্ছি। এসব ক্ষেত্রে ডিরেক্টর সুন্দর করে আমাকে সামলেছেন। একবার কোনো এক কারণে শুটিংয়ে খেপে গিয়েছিলাম। ইকবাল ভাই সিচুয়েশনটা বুঝে একপর্যায়ে আমাকে বলেছিলেন, ‘আপনি খ্যাপাটে রাগী, এই অভিনয়টাই এখন পর্দায় করবেন। আমাকে ঝাড়ি দেন সমস্যা নেই।’ আমি যেভাবে থাকতে চাই, আমাকে সেভাবেই থাকতে দেওয়া—এটা একজন পরিচাকলকের কাছ থেকে বড় প্রাপ্তি। শুধু অ্যাক্টর নন, পুরো টিমের সবার সাইকোলজি খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছিলেন পরিচালক।
প্রথম আলো :
সিনেমাটি কেন দর্শকদের দেখা উচিত?
নাসির উদ্দিন খান: এটা আমি কয়েক দিন ধরে ভাবছিলাম। যত দিন যাচ্ছে, আমাদের দেশের মানুষ তত অস্থির হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন কারণে অস্থিরতা আমাদের গ্রাস করছে। এটা সামাজিক নানা কারণে হতে পারে। সিনেমার মধ্যে আমরা সেসব প্রভাব দেখতে পাই। হুটহাট একটা হাইপার ব্যাপারস্যাপার। বলীর মধ্যে এই সবকিছুর উপস্থিতি নেই। এখানে দর্শকদের তথাকথিত আনন্দ পাওয়ার মতো গানবাজনা কিছু নেই। কিন্তু একটা স্থিরতা আছে। দর্শক সব রকম স্বাদের সিনেমাই দেখে। একটু স্থির, কুল হওয়ার জন্য হলেও দর্শকদের পরিবার নিয়ে এ ধরনের সিনেমা দেখা উচিত। সিনেমা ঠুসঠাস নয়, স্থিরতার কথাও বলে।
প্রথম আলো :
বর্তমান ব্যস্ততা কী নিয়ে?
নাসির উদ্দিন খান: রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিতের মাস্টার সিনেমার কাজ শেষ। আরেকটি ওয়েব ফিল্ম নয়ানোট-এর কাজ শেষ করেছি। ডাবিং শুরু হবে। আরেকটি জনপ্রিয় সিরিজের সিকুয়েল শুরু হবে।