‘এ তুমি কেমন তুমি’র শুটিং কি বেশ আগে হয়েছে?
সাফা কবির : ঠিক ধরেছেন। এই কাজ অনেক আগের। চ্যানেল আইয়ে প্রচারিত হয়েছে তিন–চার দিন আগে। এরপর ইউটিউবে আপলোড হয়েছে। মোটামুটি সাড়া পেয়েছি। তবে আজকে (শুক্রবার) আমার একটা নাটক ১০ মিলিয়ন ভিউ হয়েছে।
প্রথম আলো :
কোন নাটক?
সাফা কবির : ‘সুপার ওয়াইফ’-তৌফিকুল ইসলামের পরিচালনা। এই নাটকের জন্য অনেক প্রশংসাও পেয়েছি। মানুষ যেমন নাটক দেখতে পছন্দ করেন, এটা তেমনই।
অনেক প্রশংসার কারণ কী?
সাফা কবির : নাটকে আমি একজন মিতব্যয়ী স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছি। এই যেমন বেশি খাওয়া যাবে না, বেশি তেল খরচ করা যাবে না, বেশি লাইট জ্বালিয়ে রাখা যাবে না, বিস্কুট খেলে ভাত খাওয়া যাবে না—এ ধরনের বিষয় গল্পে উঠে এসেছে। চমৎকার একটা পারিবারিক ড্রামা। আমার যতগুলো নাটক ১০ মিলিয়ন ভিউ হয়েছে, তার মধ্যে এটা সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে।
প্রথম আলো :
নাটকে আপনার যে চরিত্র, তেমনটা কি আশপাশে দেখেন?
সাফা কবির : (হাসি)। আমার আম্মুকে সব সময় দেখি, বেশি খরচ করতে মানা করেন। এই নাটকে কাজ করতে গিয়ে আম্মুর পর্যবেক্ষণ কাজে দিয়েছে। তবে নাটকে একটু বেশি কৃপণ দেখানো হয়েছে আমাকে। বাস্তবে আমার আম্মু খুব হিসেবি, কিন্তু কৃপণ নন। আমার বাবা আবার আম্মুর ঠিক উল্টো। তিনি বলেন, আরে যা ইচ্ছা তা–ই কেনো।
আপনার মধ্যে বাবা নাকি মা—কার প্রভাব বেশি?
সাফা কবির : সব ক্ষেত্রে আমি মা-বাবার ভালো একটা সংমিশ্রণ। আমার মা-বাবা দুজন তো দুই রকম। বাবা যেমন অনেক জোরে গান শুনতে পছন্দ করেন, মা আবার আস্তে গান শুনতে পছন্দ করেন। বাবা অনেক হাসিঠাট্টা করতে পছন্দ করেন, আম্মু চুপচাপ। আমি আম্মুর মতো চুপচাপও, আবার বাবার মতো মজা করতেও পছন্দ করি। আমি তাঁদের একমাত্র মেয়ে। আমাদের পরিবারে আবার মা অলওয়েজ রাইট। মায়ের কথার ওপরে কোনো কথা হবে না। বাবার মতে, ‘আমার ওয়াইফ রাইট।’ আমার মতে, ‘আম্মু রাইট।’
প্রথম আলো :
কাজের ক্ষেত্রে আপনার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা কে?
সাফা কবির : আমার মনে হয় মা-বাবা দুজনই। কাজের ক্ষেত্রে দুজনই সমানভাবে সহযোগিতা করেছেন। আম্মু সব সময় বলতেন, পড়াশোনার পাশাপাশি এটা করো। বাবা বলতেন, তোমার যা ভালো লাগে তা–ই করো। দুই দিক থেকে স্বাধীনতা পেয়েছি বলেই কাজ করতে পারছি। একমাত্র সন্তান, মা-বাবার তো অনেক ধরনের ইচ্ছা থাকে। এই যেমন আমার মেয়ে চিকিৎসক হবে, প্রকৌশলী হবে—এমনটা কখনো চাপিয়ে দেননি। সব সময় বলেছেন, তুমি যেটা করতে চাও, সেটাই মন দিয়ে করো। যখন তাঁরা দেখেছেন, আমি এই অঙ্গনে কাজ করতে চাই, অনেক বেশি প্যাশনেট, তাঁরা সুযোগ করে দিয়েছেন।
প্রথম আলো :
ইচ্ছা কীভাবে তৈরি হয়েছে?
সাফা কবির : বিষয়টি এমন নয় যে ছোটবেলা থেকে আমি অভিনয়শিল্পী হতে চাইতাম। টিভিতে কাজ করতে চাইতাম। তবে একটা কথা মনে পড়ে, আমরা তখন নাখালপাড়ায় থাকতাম। কলেজ পর্যন্ত ওই এলাকায় কেটেছে। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় বিলবোর্ডে দেখে মনে হতো, আমার যদি বিলবোর্ডে একটা সুন্দর ছবি থাকত। আমার চৌদ্দ পুরুষের কেউ শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনে কাজ করেননি। ছোটবেলায় আমার কাজিনরা নাচ-গান শিখত। আমি ওদের সঙ্গে নাচ, ছবি আঁকা শিখতাম। বড় হওয়ার পর ওরা কেউ চালিয়ে যায়নি আমি ছাড়া। এই অঙ্গন সম্পর্কে কোনো ধারণাও আমার ছিল না।
বিনোদন অঙ্গনে কাজ করতে এসে কি কোনো সমস্যা হয়েছে?
সাফা কবির : আমার ক্যামেরাভীতি ছোটবেলায় কেটে গেছে। যত দূর মনে পড়ে, আমাদের বাসার ভিডিও ক্যামেরায় বাবা অনেক ভিডিও করতেন। আমি প্রথম কাজ করি ২০১৩ সালে। এরপর দুই বছরের বিরতি ছিল। আমার জন্য তাই এই অঙ্গনে পথচলা ডিফিকাল্ট ছিল। আমার ধারণাও ছিল না, কীভাবে কাজ হয়। নিজে নিজে শিখেছি। তাই বলিও, আমি সেলফ মেড একজন মানুষ। অবশ্যই আমার আশপাশে কিছু ভালো মানুষ ছিলেন। তাঁদের মধ্যে আদনান আল রাজীব, সাবরিনা আইরিন, মাসুদুল আমিন রিন্তু ও শঙ্খ দাশগুপ্ত—তাঁরা আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, অভিভাবকের মতোও। সব সময় গাইড করেন।
প্রথম আলো :
কখনো কি মনে হয়েছে, সব ছেড়েছুড়ে চলে যাই?
সাফা কবির : কখনো এমনটা মনে হয়নি। আমি অনেক চড়াই-উতরাই দেখেছি। মনে হয়েছে, এটা জীবনেরই অংশ। হেরে গিয়ে চলে গেলে তো পরাজয় মেনে নিলাম। হেরে গিয়ে আবার উঠে দাঁড়িয়ে কাজ না করলে কী হয়! মানুষের জীবনে তো ওঠানামা থাকবেই। তাই উঠে দাঁড়ানোটাই শক্তি, সাহস ও অর্জনও। আমি সব সময় এভাবেই দেখতাম, পড়ে যাব, আবার উঠে দাঁড়াব।
এবার কাজের খবর বলুন
সাফা কবির : ভালোবাসা দিবসের বেশ কয়েকটি কাজ করছি। দুটি দারুণ গল্পের কাজ শেষ করেছি। এর মধ্যে তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছি। আবার ৩ তারিখ থেকে শিডিউল দেওয়া। টানা কয়েকটি কাজ করব।
প্রথম আলো :
ছোট পর্দা থেকে অনেকে চলচ্চিত্রে কাজ করছেন। আপনার ইচ্ছা আছে?
সাফা কবির : অবশ্যই। কেন নয়? আমি ১০ বছর ধরে এই অঙ্গনে কাজ করছি। নিজেকে বড় পর্দায় দেখতে চাই। বড় পর্দায় খুব সুন্দর একটা গল্প নিয়ে আসতে চাই। প্রথম সিনেমায় মনে গেঁথে থাকার মতো গল্পে কাজ করতে চাই। একই সঙ্গে অবশ্যই এন্টারটেইনিংও হতে হবে।
প্রথম আলো :
১০ বছরে সহশিল্পী হিসেবে অনেককে পেয়েছেন। সবচেয়ে ভালো বোঝাপড়া কাদের সঙ্গে?
সাফা কবির : আমার কাছে তো মনে হয়, আমি সবার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারি। আমার সঙ্গে যাঁরাই কাজ করেন, তাঁরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আমার কাছে মনে হয়, বাই নেচার আমি এমন। কাজ করার সময় শুধু ডিরেক্টর আর কো-আর্টিস্ট নন, প্রোডাকশনের সবাইকে বোঝা এবং কমফোর্ট দেওয়ার ব্যাপারটা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, আমি সেটা ভালোভাবে পারি মনে হয়। তাই সবার সঙ্গে আমার বোঝাপড়া চমৎকার।