৮৪ দিন পর
৮৪ দিন পর আজ শুক্রবার আবার জাতীয় নাট্যশালার মঞ্চে আলো পড়বে। দর্শকের উপস্থিতিতে প্রাণচঞ্চল হতে পারে মিলনায়তন। সীমিত পরিসরে আজ উন্মুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালা, খুলছে মহড়াকক্ষও। মূল মিলনায়তনে বাংলাদেশ থিয়েটার মঞ্চায়ন করবে ‘সী-মোরগ’। এই মঞ্চে আগামীকাল শনিবার আরণ্যকের ‘ময়ূর সিংহাসন’ এবং ১৩ অক্টোবর এথিকের ‘রাজদ্রোহী’ নাটক মঞ্চস্থ হবে।
জাতীয় নাট্যশালা সর্বশেষ খোলা ছিল গত ১৮ জুলাই। ১৯ জুলাই পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে ‘আনা ফ্রাঙ্ক’-এর প্রদর্শনী ছিল। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে শেষ পর্যন্ত নাটকটি আর মঞ্চস্থ হয়নি। এরপর সারা দেশে ইন্টারনেট–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়, জারি করা হয় কারফিউ। তার পর থেকে শিল্পকলা একাডেমির মিলনাতন ও মহড়াকক্ষ বন্ধ ছিল। দীর্ঘ বিরতির পর নাটক মঞ্চায়নের খবরে তাই নাট্যকর্মী ও দর্শকেরা খুশি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এর প্রকাশ দেখা গেছে। গ্রুপগুলোতেও ইতিবাচক আলোচনা হচ্ছে।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চ ব্যবস্থাপক ফজলে রাব্বি গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাবতে ভালো লাগছে, শুক্রবার থেকে শিল্পকলায় টানা তিন দিন নাটক প্রদর্শনী হবে। এরপর ১৮ অক্টোবর প্রাচ্যনাটের ‘পুলসিরাত’ নাটকের বুকিং রয়েছে। পরদিন শনিবার লালন তিরোধান দিবস উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমির নিজস্ব অনুষ্ঠান থাকবে। পরের সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার স্বপ্নদল ও থিয়েটারের (আরামবাগ) বুকিং রয়েছে। আমাদের ধারণা, শিগগিরই নাট্যদলগুলোর কাছ থেকে আরও বেশি আবেদন পাব, নিয়মিতই নাটকের শো হবে।’
এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিয়েছেন একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ, ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি রাষ্ট্রের এক ইতিবাচক পালাবদলের প্রেক্ষাপটে অনিচ্ছাকৃত বিরতির পর নতুন করে নাট্যশিল্পচর্চার দ্বার উন্মুক্ত করেছে। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ থেকে ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে যে বহুত্ববাদী সাংস্কৃতিক আত্মার স্বর আমরা শুনতে পাই, তার ভিত্তিতে, একক কোনো দলীয় বয়ানের বিপরীতে, ভয়হীন প্রশ্নজাগানিয়া, মুক্তচিন্তা ও কল্পনার সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করুন। বহুবৈচিত্র্যময় শিল্পকলাচর্চার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী সিভিল সোসাইটি গড়ে তুলুন, যারা সব ধরনের কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে সব সময় শিল্পের ভাষায় আপামর জনগণের হৃৎস্পন্দনকে তুলে ধরবে।’
নাটকের দল এথিক–এর দলপ্রধান নাট্যকর ও নির্মাতা রেজানূর রহমান বলেন, ‘অবশেষে শিল্পকলায় নাটকের মঞ্চ খুলছে, এটা নাট্যকর্মীদের জন্য অনেক আনন্দের। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র গণ–আন্দোলনের প্রাণশক্তিকে গুরুত্ব দিয়ে এবার মঞ্চপাড়া জেগে উঠুক, এই প্রত্যাশা আমাদের সবার। আমাদের দলের নাটক ‘রাজদ্রোহী’–তে সমাজ ও রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে বৈষম্য বিলোপের কথাই বলা হয়েছে।’
বাংলাদেশ থিয়েটারের দলনেতা খন্দকার শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দম বন্ধ হয়ে আসছিল। সংস্কৃতি অঙ্গনে একধরনের শূন্যতা বিরাজ করছিল। নতুন ডিজিকে ধন্যবাদ। দায়িত্ব গ্রহণের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে তিনি শিল্পকলা একাডেমি সংস্কৃতিকর্মীদের জন্য খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। সংস্কৃতিচর্চার কেন্দ্র বন্ধ থাকলে সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্যে হতাশা আরও বাড়ত, এতে অশুভ শক্তি সুযোগ নিত। আমার বিশ্বাস, ধীরে ধীরে পুরোদমে শিল্পকলা একাডেমি খুলবে, সারা দেশে সংস্কৃতিচর্চা বাড়বে। এটা খুব জরুরি।’ তিনি জানান, সী-মোরগ নাটকের সর্বশেষ শো হয়েছিল ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে, সেটা ছিল ৩০০তম মঞ্চায়ন।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার বিভিন্ন কক্ষে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও সেনাসদস্যরা অবস্থান করছিলেন। এ কারণে ৫ আগস্ট–পরবর্তী সময় থেকে জাতীয় নাট্যশালার মিলনায়তন, মহড়াকক্ষ সাংস্কৃতিক সংগঠনকে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ জাতীয় নাট্যশালার মূল থিয়েটার হল এবং ১ ও ২ নম্বর কক্ষ নাটক ও মহড়ার জন্য সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। হল ও মহড়াকক্ষ বরাদ্দের ক্ষেত্রে বিদ্যমান নীতিমালার পাশাপাশি বিরাজমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশেষ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে একাডেমি।