সাগরপারের জেলের স্বপ্ন নিয়ে ফুয়াদের ‘শব্দের ভেতর ঘর’
সাগরপারের একটা ছেলের স্বপ্ন সে একদিন নিজে ট্রলার নিয়ে মাছ ধরতে যাবে সমুদ্রে। কিন্তু সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো দুলতে থাকা জীবনসংগ্রামে সে স্বপ্ন পূরণ হয় কি না, তা আর জানা যায় না। এমন গল্প নিয়ে শেষ হলো তরুণ নির্মাতা ফুয়াদুজ্জামান ফুয়াদের চতুর্থ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘শব্দের ভেতর ঘর’ নির্মাণের কাজ। সিরাজগঞ্জ আর বরগুনার পাথরঘাটায় পাঁচ দিন ধরে চলেছে শুটিং। মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাক্ষ্য শহীদ। কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছেন মাসুম শহরিয়ার। ইউএনডিপি প্রযোজিত ছবিটি এখন রয়েছে সম্পাদনার টেবিলে।
এই ছবির শুটিংয়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী ছিল, এমন প্রশ্নের উত্তরে সাক্ষ্য বলেন, ‘আমার জন্ম আর বেড়ে ওঠা ঢাকায়। দাদিবাড়ি রংপুর। আর ছবিতে আমার চরিত্রটা বরিশালের স্থানীয় ভাষায় কথা বলে। তাই আমার প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল ভাষা আর টোন শেখা। দ্বিতীয়ত, এখানে আমি একটা জেলে। সমুদ্রে আছ ধরে যার জীবন কাটে। সেই জীবন শেখা, ধারণ করা আরেকটা চ্যালেঞ্জ। সিরাজগঞ্জের শুটিং শেষ করে আমরা ট্রলারে করে বরগুনা যাই। ট্রলারের ভেতরেও শুটিং চলেছে। এই নির্মাতা আর দলের সঙ্গে কাজ করতে ভালো লেগেছে।’
সিনেমাটি নিয়ে ফুয়াদের পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি জানান, ছবিটি প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে পাঠাবেন। তারপর একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মুক্তি দেবেন।
২০১৭ সালে স্বল্পভাষী ফুয়াদ ঠিক করেন, তিনি সিনেমা বানিয়ে নিজের মনের কথা বলবেন। হাতে ছিল মুঠোফোন। তা দিয়েই বানিয়ে ফেললেন প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘তবে কি পলায়নেই মঙ্গল’। মানুষ নিজেদের জীবন আর সমস্যা থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেঁচে থাকবে, নাকি যা কিছু সামনে আসুক, সেটার মোকাবিলা করে নিজের মতো করে বাঁচবে—এই দ্বন্দ্ব নিয়েই ছবিটি। ছয় মিনিটের ছবিটি বুয়েট চলচ্চিত্র উৎসবে (২০১৮) জিতে নেয় সেরা চলচ্চিত্র, সেরা সম্পাদনা ও সেরা চিত্রগ্রাহকের পুরস্কার।
এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত চলচ্চিত্র উৎসব, চট্টগ্রাম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসব, শিলিগুড়ি শর্ট অ্যান্ড ডকুমেন্টারি ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল থেকেও এনেছে পুরস্কার। এ ছাড়া ছবিটি প্রদর্শিত হয়েছে কলকাতার সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট আয়োজিত চলচ্চিত্র উৎসবে।
মোবাইলেই বানানো ফুয়াদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ত্রিকোণমিতি’ ও ‘বৃক্ষ = অম্লজান’। তৃতীয় ছবির জন্য ফুয়াদ পেয়েছেন টর ডেম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট ভ্যানগার্ড অ্যাওয়ার্ড–২০১৯ স্বরূপ আড়াই লাখ টাকা। এই ছবি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও বেলারুশের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে।
ফুয়াদ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বপ্ন দেখেন। ফিচার সিনেমার জন্য একটি চিত্রনাট্য নিয়ে কাজও চলছে। সামনেই স্বপ্নের প্রকল্পে নেমে পড়বেন তিনি।